কথা শেষ করার আগেই পেছনে তাকিয়ে মিস্টার কিমের গলা শুনতে পায় ডেভিড তার মানে রিশেপশন তার অনুমতি না নিয়েই কিমকে ফোন করে রেখেছে।
মনে মনে যারপরনাইরকমের বিরক্ত হয় ডেভিড কিন্তু মুখে কিছু বলে না।
আজকে বেশ মাঞ্জা মেরে এসেছে কিম।
হোটেল থেকে বাইরে বেরিয়ে হাটতে হাটতে দুজনে একটা ক্লাবের দিকে অগ্রসর হয়।
ক্লাবে ঢোকার মুখে কিম জানায় এই ক্লাবে ব্যাংককে বেড়াতে আসা অনেক অস্ট্রেলিয়ান আসে।
ডেভিড মনে মনে আগ্রহী হয় কি কারনে এই ক্লাবে অজিরা ভিড় করতে পারে?
ক্লাবের রিশেপশন পার হতেই বিষয়টা দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে যায় ডেভিডের কাছে যখন এক থাই মেয়ে তার কাছে ট্যাবলেট বিক্রি করতে চায়।
মুখে নো থ্যাংকস বললেও মনে মনে হিসাব কষতে থাকে ডেভিড।
ধরা পড়ার সম্ভাবনা কতটুকু ব্যাংককে।
এর আগে এয়ারপোর্টে বসে থাকা এজেন্টের কথা ভেবে মনে মনে বেশ শংকা অনুভব করে ডেভিড সেই সাথে চার পাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় কেউ তাকে ফলো করছে কিনা।
এই ভিড়ের মধ্যে তাকে কেউ ফলো করলেও বোঝার উপায় নেই।
পুলিশের কথাটা মাথায় আসতেই মাথাটা তার খালি খালি লাগে যেই জিনিস তার সাথে আছে এটা নিয়ে ধরা পড়লে কমপক্ষে দশ বছরের জেলের ঘানি টানতে হবে অস্ট্রেলিয়াতেই থাইল্যান্ডের আঈন জানে না ডেভিড তবে অবস্থা যে খুব একটা সুবিধার হবে না সেটা অনুমান করে আগামী দুই দিন কিভাবে নিরুপদ্রবে পার করা যায় সেটা ভাবতে ভাবতে কিমের দেখা দেখি একটা খালি টেবিলে চেয়ার টেনে বসে ডেভিড।
চেয়ারে বসেই ওয়েটারকে দুটো ড্রিংকস এ অর্ডার দেয় কিম।
কেমন লাগছে ব্যাংকক জানতে চায় কিম?
কাধ ঝাকিয়ে নট টু ব্যাড বলার সাথে সাথেই কিমের উল্লাসিত চেহারা দেখে পেছনে তাকিয়ে দেখে আরো দুই অজি হা-ই কিম হাই ইউ ডুইন বলে এগিয়ে আসছে তাদেরই টেবিলের দিকে।
ম্যাট বলে একজন হাত বাড়িয়ে দেয় সেই সাথে তার চাইতে বয়সে তরুন আরেকজন স্কট বলে হাত বাড়িয়ে দেয়।
ম্যাট এসেছে সিডনী থেকে স্কট মেলবোর্ন থেকে দুজনেই তিন মাসের ভিসা নিয়ে এসেছে ছুটি কাটাতে।
গত সপ্তাহে তারা গিয়েছিলো ক্যাম্বোডিয়াতে সেই গল্পই করলো অনেকক্ষন ধরে।
সামনে তারা বার্মা যেতে চায় স্কটের দাদা নাকি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেছিলো তাই দাদার কাছ থেকে বার্মার গল্প শুনে সেই যায়গা দেখতে আগ্রহী।
চোখ বড় বড় করে ডেভিড তাদের গল্প শুনে যায় চুপ চাপ।
মনে মনে বেশ শ্রদ্ধা এসে যায় স্কটের দাদার কথা শুনে কিন্তু সেটা বেশিক্ষন টিকে থাকে না যখন দেখে স্কট পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরিয়ে ধোয়া ছাড়ে।
কটকটে গাজার গন্ধে ধোয়ার সাথে সাথে তার শ্রদ্ধাও উঠে যায়।
ডেভিড নিজেই যদিও ড্রাগ কেনা বেচার সাথে জড়িত তারপরও ড্রাগি লোকজন চরম অপছন্দ করে ডেভিড কারন সে নিজে কখনও ড্রাগ নেয়নি মদ বিয়ারেও তার তেমন আসক্তি নেই বলতে গেলে সোশাল ড্রিংকার বলতে যা বোঝায় ডেভিড নিজেকে সেই ক্যাটাগরিতে ফেলতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করে।
ড্রাগিদের অপছন্দ করার আরেকটা বড় কারন হলো তার যেসব বন্ধু ড্রাগ নেয়া শুরু করেছে তারা কোনো না কোনো সময়ে ডেভিডের কাছ থেকে বড় বড় গল্প ফেদে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেয় নি। নিদেন পক্ষে দশ হাজার ডলার পাবে সে তার ড্রাগি বন্ধুদের কাছ থেকে।
তোমার স্টোরি কি? ম্যাটের প্রশ্নে সন্বিত ফিরে পায় ডেভিড
স্টোরি? কিসের স্টোরি?বলে সে
না মানে কতদিনের জন্য এসেছো ব্যাংককে ? যাবে কোথায়? বলে ম্যাট
ওহ আমি এসেছি ইন্ডিয়া থেকে কাল রাতের ফ্লাইট মিস করেছি তাই ভাবলাম ব্যাংকক টা একটু ঘুরে দেখে যাই।
গাজা ভরা সিগারেট এগিয়ে দিতে দিতে বলে ম্যাট স্পেশাল সিগারেট চলবে নাকি?
নো থ্যাংকস বলে ড্রিংকস এর দিকে মনোযোগ দেয় ডেভিড সেই সাথে যুক্ত করে এরা বিয়ারটা বেশ ভালো বানায়।
এইবার স্কট পকেট থেকে ট্যাবলেট বর করে বলে চলবে নাকি বিয়ারের সাথে এই একস্টেসি ট্যাবলেটও বেশ ভালো চলে।
আচ্ছা এইখানে এইসব জিনিস এত খোলামেলা পুলিশ ধরে না?
ডেভিডের কথা শুনে তিনজনই হো হো করে হেসে ওঠে।
পুলিশ ধরলে আমি আছি না!!! হাসতে হাসতেই বলে ওঠে কিম।
তিনজনকেই মনে মনে বেশ অপছন্দ করা শুরু করেছে ডেভিড।
কিন্তু কিম ছাড়া এইখানে সে অচল।
সুতরাং তাল মিলিয়ে যাওয়াটাই বেশ বুদ্ধিমানের কাজ।
মনে মনে কিভাবে এইখান থেকে বের হওয়া যায় ভাবতে ভাবতে ই দেখে স্কট এক থাই মেয়ে দেখে এক্সকিউজ মি বলে তার পেছন পেছন রওনা দেয়।
স্কট উঠে যেতেই ম্যাট বলে উঠে মায়ট তুমি এখান থেকে কয়েক পাতা ট্যাবলেট নিয়ে গেলে তোমার খরচ উঠে যাবে।
বলো কি? অবাক হবার ভাব করে ডেভিড।
তার অবাক হওয়া ভাব দেখে নতুন মুরগি ভেবে দ্বীগুন উৎসাহে বলতে থাকে ম্যাট তুমি যাবে সিডনীতে সেখানের সিকিউরিটি এই ব্যাংককের তেমন শক্ত নয় এ এফ পি শুধু কেউ খবর দিলে আর বড় চালানের দিকেই নজর দেয় ছোট খাট কয়েক পাতা ট্যাবলেট সাথে নিলে আর এখান থেকে ডাক্তার এর কাছ থেকে একটা প্রেসক্রিপশন লেখিয়ে নিলে তোমাকে আর পায় কে।
সিডনীতে তুমি বিক্রির যায়গা না পেলে আমি লোক পাঠিয়ে দেবো তোমার বসা থেকে এসে টাকা দিয়ে জিনিস নিয়ে যাবে।
এমন সুবর্ন সুযোগ তুমি আর পাবে না।
কিন্তু তাতে তোমার লাভ? পালটা প্রশ্ন করে ডেভিড।
আমি টেন পারসেন্ট কমিশন পাবো, না না তোমার কাছ থেকে না তুমি যার কাছ থেকে কিনবে এবং যার কাছেবিক্রি করবে দু'জনের কাছ থেকেই আমি কমিশন নেবো দশ দশ করে বিশ পারসেন্ট কমিশন।
নাহ ম্যাটি ফাক তালে তাকে ব্যাবহার করে কমিশনের ধান্দা করছে মনে মনে হিসেব কষে ফেলে ডেভিড, কিন্তু বাইরে শান্ত ভাব বজায় রেখে বলে আমি আসলে একান্তই ঘুরতে বেড়িয়েছি ভারত ঘুরে ব্যাংকক হয়ে দেশে ফিরছি খামোখা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না।
এতক্ষনের উৎসাহি ম্যাট এবার যারপরনাই বিরক্ত হয়ে কিম এর দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে ওঠে হোয়াট দ্যা ফাক কিম? তুমি না বললা তুমি ড্রাগ কুরিয়ারের সন্ধান পেয়েছো?
কিম কিছুটা ভয় পেয়ে থতমত খেয়ে বলে ওঠে
আমি ভেবেছিলাম সে একজন ড্রাগ কুরিয়ার
তুমি একটা আস্ত শিট হেড কিম এত বছর ধরে লাইনে আছো অথচ কে কুরিয়ার আর কে পুলিশ ঠিকমত চিনতে পারো না।
কোনদিন যে তুমি এ এফ পি এজেন্ট কে আমার কাছে নিয়ে এসে বলবা ড্রাগ কুরিয়ার পেয়েছি তখন তুমি আমি দুই জনই বড় বাঘের খাচায় বসে ভাত খাবো।
ডেভিডের দিকে সরি মায়ট এতক্ষন যা বলেছি সব ভুলে যাও বলে উঠে দাঁড়ায় ম্যাট।
কিম এর অবাক করা চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের পারফরমেন্স এ ডেভিড নিজেই বেশ সন্তুষ্ট হয়।
নাহ এই লাইনে খুব একটা খারাপ করছে না সে।
(ক্রমশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।