নাহ বাজে সব চিন্তা বাদ দিয়ে টয়েলেটের দিকে হাটা দেয় ডেভিড ।
মাঝ পথে যেয়ে তার খেয়াল হয় যাহ ব্রিফকেসটা ফেলে রেখে এসেছে সেই লোকটার সামনেই।
ফেরত যাওয়া কি ঠিক হবে?
যদি লোকটা সত্যিই ফেডারেল এজেন্ট হয় কিংবা এজিও এজেন্ট এবং সে যদি এই সুযোগে ব্রিফকেসটা খুলে দেখে বা পুরাই গায়েব করে দেয়।
অস্ট্রেলিয়া হলে প্রাইভেসির কারনে ফেডারেল এজেন্টও ব্রিফকেস এ হাত দেয়ার আগে অনুমতি চাইতো কিন্তু এখানে এই এশিয়াতে নিয়ম ভিন্ন।
থাই পুলিশকে ডাক দিলেই মনের আনন্দে খুলে দেবে , এখানে প্রাইভেসীর মায়রে বাপ।
এসব ভাবতে ভাবতেই টয়লেটের দরজাটা এসে গেলো।
একবারও পেছন দিকে না তাকিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে সোজা ছোট কাজ করতে দাড়ীয়ে গেলো ডেভিড।
লোকটাকে যে কেনো সন্দেহ হচ্ছে হিসাবটা ঠিক মেলাতে পারছে না।
লোকটা একবারও তার দিকে চোখ তুলে তাকায় নি।
তাকে একটা সৌজন্যতা সূচক হাই হ্যালো ও বলে নি।
লোকটার চেহারায় কেমন একটা ভাবলেশহীন ভাব কোনো উত্তেজনা নেই , কোনো উতকন্ঠা নেই , কোনো কিছুর প্রতি কোনো আগ্রহ নেই যা সাধারন কোনো যাত্রীর চেহারায় থাকে না।
নাহ ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার ঠেকছে না ডেভিডের কাছে।
কাজ শেষ করে হাত ধোয়ার সময় যে ভাবনাটা এলো তাতে করে শরীরের রক্ত হীম যেতে থাকলো ডেভিডের।
লোকটা এখন ব্রিফকেস খুলে পুলিশ নিয়ে বসে আছে নাতো আবার।
দরজা খুলে ডেভিড যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকে তাকিয়ে দেখে আটকে থাকা দমটা ছাড়লো।
নাহ কোনো পুলিশ নেই অন্তত দেখা যাচ্ছে না।
হুর খামোখাই টেনশনে রিতিমত আত্মারাম খাচা ছাড়া করার যোগাড়।
লোকটি এখনও সেই আগের যায়গাতেই বসে আছে পত্রিকা নিয়ে।
নাহ খামোখাই বেচারাকে সন্দেহ করেছে এতক্ষন ভেবে মনে মনে কিছুটা অপরাধবোধ করলো।
কিছুটা স্বস্তি নিয়ে প্রফুল্ল মেজাজে বসতে গিয়ে ঘার ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে আবার রক্ত ঠান্ডা হবার যোগাড়।
থাই পুলিশ সাথে কুকুর নিয়ে এগিয়ে আসছে।
ব্রিফকেসটা স্ক্যান করিয়ে দিয়েছে মার্ক ধরতে পারবে না কিছুই দেখা যায় না বাইরে থেকে কিন্তু কুকুর গন্ধ শুকে ধরতে পারবে কিনা সেটা চেক করা হয় নি।
নাহ এই ব্যাপারটা মার্ককে জানাতে হবে পরের বার।
পরের বারের কথা ভেবে নিজের মনেই তার হাসি পেলো
আবার! পরের বার।
থাই পুলিশটি তার কুকুর নিয়ে একশ গজের মধ্যে এসে গেছে।
তার চেহারা দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে সে কি নরমাল টহল দিচ্ছে নাকি তার উদ্দেশ্যেই এসেছে।
আরেকটু কাছাকাছি আসতেই ডেভিড অবাক হয়ে দেখলো থাই ডগ হ্যান্ডলার পত্রিকা ওয়ালার দিকে কেমন একটা পরিচিত ভংগিতে তাকাচ্ছে।
নাহ ব্যাটা আসলেই এজেন্ট হবে।
থাই ডগ হ্যান্ডলার ডেভিডের সামনের সারি দিয়ে ঘুরে যায় কিন্তু তার ব্রিফকেস ধরতে আসে না কেউ।
ডগ হ্যান্ডলার চলে যেতেই ব্রিফকেস নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ডেভিড।
উঠে সে দোকানে দোকানে হাটতে থাকে আর ভাবে
কি করা যায়?
কি করা যায়?
তার খুব একা একা লাগে এমন সময়
একটা দোকান থেকে ফোন কার্ড কিনে ফোন বুথ থেকে সিডনীতে পিটার প্যানের নাম্বার ফোন করে বসে ডেভিড।
পিটারকে সংক্ষেপে খুলে বলতেই পিট জানায় এক্ষনই ফ্লাইট ক্যান্সেল করে সে যেনো তিন দিন পরের ফ্লাইট ধরে এবং ঠিক চল্লিশ মিনিট পরে সে যেনো ব্রিফকেস নিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে যেয়ে দাঁড়ায় সেখানে মিঃকিম নামের তার আরেক বন্ধু তাকে সেখান থেকে রিসিভ করবে সেই তাকে ব্যাংককে হোটেলের ব্যাবস্থা করে দেবে সেই সাথে তিনদিন পর তাকে প্লেনে তুলে দেবে।
ফোনে কথা শেষ করার আগে পিট তাকে একটা সাবধান বানী শোনায়
রিমেমবার ডোন্ট ফাক এরাউন্ড এন্ড ড্রিংক টু মাচ , ইটস এ জাংগল ফুল অব ক্রক ফর ইয়ু দেয়ার।
কথাটা কানে বাজতে থাকে ডেভিডের।
দ্রুত সব কাজ শেষ করে আধা ঘন্টার মধ্যে বাইরে এসে দাঁড়ায় ডেভিড।
নাহ লোকটা অনেকক্ষন তার পাশে নেই।
বাইরে বেরিয়ে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটার মধ্যে থেকেও ভেতরে ভেতরে ঘামতে থাকে ডেভিড।
ক্যাচ করে গাড়ীর বেক কষার শব্দে তাকিয়ে দেখে কালো টুপি আর সানগ্লাস পড়া মিস্টার কিম তার দিকে তাকিয়ে ডাকছে মিস্তার দেবিদ মিস্তার দেবিদ।
এগিয়ে যেতেই হাসি মুখে নিজের নাম বলে প্যাসেঞ্জার সিটের দরজা খুলে দেয় কিম।
গাড়ীতে যেতে যেতে খেয়াল করলো মিস্তার কিম অন্য এশিয়ানদের চাইতে তুলামুলক ভালো ইংলিশ বলে এবং আরো অবাক হলো কিছুক্ষন পর পর তার নো ওয়ারিছ বলা দেখে।
হাসি মুখেই জানতে চায় ডেভিড তুমি মনে হয় অনেক অস্ট্রেলিয়ান প্যাসেঞ্জার ক্যারি করো কিম সে জন্য তোমার একসেন্ট ও অজি হয়ে গেছে।
তার উত্তরে হাসতে হাসতে কিম জানায় সে সিডনীতে ট্যাক্সী চালিয়েছিলো পাচ বছর আর তুমি মনে হয় এখানে কিছু কিনতে এসেছো।
নাহ কিছু কিনতে আসিনি নিছক ঘুরতে এসেছি ব্যাংককে , অবাক ভাব চেপে রেখে জানায় ডেভিড।
কিম মুখে মুখে হিসেব কষে দেখায় এখানে খাটি ঘাস পাওয়া যায় মাত্র দুই ডলারে সিডনীতে নিতে পারলে চোখ বন্ধ করে এক এক আটি একশ ডলার।
পাউডার ও অনেক সস্তা যা নিতে পারবে লাভ।
মুখে নো থ্যাংকস বললেও মনে মনে হিসাব কষে দেখলো ডেভিড ব্যাংককে আসলেও জিনিসের দাম কম।
সেই সাথে ঝুকিও বেশ কম।
কোনো মতে শুধু ব্যাংকক এয়ারপোর্ট পেরুতে পারলেই কাজ শেষ।
মনে মনে পরের বার নিজে নিজে ট্রীপ দেবার জন্য কিম এর ফোন নাম্বার আর ব্যাংককের ঠিকানা নেয়ার কথা ভেবে রাখে ডেভিড।
হোটেলে নামিয়ে দেয়ার আগে তার জানা মতে ভালো মেয়ে মানুষ আছে লাগবে নাকি জানতে চায় কিম।
পিটারের উপদেশ বানী মনে করে আর সারাদিনের সেই লোকটার চেহারা মনে করে আবার নতুন কোন ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাইলো না ডেভিড।
হোটেলের বিছানায় যেয়ে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেলো ডেভিড।
রুম সার্ভীসের ডাকে উঠে রাতের খাবার খেয়ে সামান্য ওয়াইন খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো ডেভিড।
উঠলো পরদিন দুপুরে আবার সেই রুম সার্ভীস এর ডাকে।
খাবার খেয়ে কিছুক্ষন টিভির চ্যানেল ঘুড়িয়ে দেখার মত কিছু না পেয়ে বিকেলের দিকে নিচে রিসেপশনে নেমে আসে ডেভিড।
সেখান থেকে তাকে জানায় কিম ফোন করেছিলো কয়েকবার সে ঘুম থেকে উঠছে কিনা জানতে।
কথা শেষ করার আগেই পেছনে তাকিয়ে মিস্টার কিমের গলা শুনতে পায় ডেভিড তার মানে রিশেপশন তার অনুমতি না নিয়েই কিমকে ফোন করে রেখেছে।
মনে মনে যারপরনাইরকমের বিরক্ত হয় ডেভিড কিন্তু মুখে কিছু বলে না।
আজকে বেশ মাঞ্জা মেরে এসেছে কিম।
হোটেল থেকে বাইরে বেরিয়ে হাটতে হাটতে দুজনে একটা ক্লাবের দিকে অগ্রসর হয়।
(চলবে)
আগের পর্ব দেখতে
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।