LIVING IN CUONTRY SA
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়তাম (১৯৯৪) তখনকার কথা। ওসমানী মেডিকেলের ক্যান্সার বিভাগ থেকে আমাদের সবার প্রিয় জিয়া উদ্দিন স্যার পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, অথচ কেন জানি মনে হচেছ এ দীর্ঘ সময়ে পৃথিবী একটুও এগিয়ে যায়নি। প্রতিদিন কত বিচিত্র আবিষ্কারের খবর আসছে সংবাদপত্রের বুক জুড়ে, ইন্টারনেটে কত নতুন ওয়েভ পেজ যুক্ত হচেছ, অথচ এখনও একটু অবসর পেলে স্যারের সেই অবাক করা কথাগুলো বার বার কানে বেজে উঠে- মানুষ কত উন্নতি করেছে আজকে এই বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগে। মহাকাশের কত বিচিত্র নাম না জানা জ্ঞান লাভ করেছে। বিজ্ঞানের সব কয়টি শাখা আজ কত দ্রুত এগিয়ে যাচেছ।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনে কত সুখ-স্বাচছন্দ্য এনেছে। কত সময় বেছে যাচেছ সব কাজে। অথচ মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রীতি ও প্রেমের যে বাধন ছিল তা শিথীল হযে আসছে। ক্রমশঃ হিংসা- বিদ্বেষ, হানাহানি আর বৈরী ভঅব বেড়েই চলছে। মানুষ কত ছোট্ট একটা জায়গায় আটকে আছে।
জটিল সব প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় আজকাল মানুষ সহজ সরলভাবে চিšতা করতে ভুলে গেছে। যদিও হাজার হাজার বছর থেকে মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন বস্তু ও শক্তি নিয়ে গবেষণা করে আসছে, তবুও মানুষ প্রকৃতি স¤পর্কে খুব কমই জেনেছে। প্রকৃতি অজস্র নিয়ম কানুনের মধ্যে কুব কমই মানুষের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। কিন্তু যেটুকু জেনেছে তাকে খুব ভালো করে কাজে লাগিয়েছে। বিখ্যাত সেই গল্প- আপেল গাছের নিচে বসে নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র আবিষ্কার, অথবা গতিসুত্র প্রদান এগুলোর উপর গবেষণা করে প্রষুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রকেট, স্যাটেলাইটসহ আরও কত কিছু তৈরী করেছে।
এখনকার সব বিজ্ঞানী আর চিšতাবিদদের একটাই কাজ- যেসব তথ্য বা সুত্র আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে কোনমতে একটা কিছু তৈরী করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়া। ঠিক যেন কয়েকটি নতুন ফাইল সংযোজন করে ক¤িপউটারের প্যাকেজ প্রোগ্রামগুলোর নতুন ভার্সন বের করার মতো। কিন্তু আগেশার বিজ্ঞানীদের মত একন আর মৌলিক বিষয়সমুহ নিয়ে চিšতা করার মতো আর কেউ নেই। ভাবখানা এমন যেন সবাই প্রকৃতির সব রহস্য জেনে গেছে। সবাই ভন্ড সবজাšতা সেজে গর্ব করে ঘুরে বেড়াচেছ।
অথচ বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক গবেষণা চিšতা ভাবনা আজ বড় বেশি প্রয়োজন।
এশবার স্যার আমাদের সবার কাছ থেকে ক‘দিনের জন্য হারিয়ে গেলেন। আমরা সবাই স্যারকে তন্ন তন্ন করে খুজঁলাম। কোথাও পেলাম না। উনার নিজের বাড়ি, আÍীয়-স্বজনদের বাসা, বন্ধু-বান্ধবের বাসা, স্কুলের পরিচিতজনদের কাছে, হাসপাতালে, থানায় কোন জায়গায় নেই।
তারপর হঠাৎ একদিন দুপুরে এসে আমাদের বাড়িতে হাজির। আমি তখন আব্বুর সাথে বাগানের বেঞ্চে বসে সেদিনের অবজারভারটা পড়ছিলাম। ও.জে. সি. পেইজে হালকা লেখালেখি করতাম, তাই ম্যাগাজিন নিয়ে খুব ব্যা¯ত ছিলাম। হঠাৎ স্যার এস পড়ায় বেশ বিরক্তি অথচ খুশি লাগছিলো। স্যারের চেহারায় এই ক‘দিনে কেমন জানি রহস্যময় পরিবর্তন এসে গেছে।
সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারছিলাম না। অথচ ¯পষ্ট বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা হয়েছে। সব ভয় আর দ্বিধা কাটিয়ে স্যার নিজেই শুরু করলেন-
আজকে তোমাকে পড়াবো না। তবে খুব জরুরী কিছু বিষয়ে আলোচনা করবো। তোমার নিশ্চয় জানতে ইচেছ করছে- এই ক’দিন আমি কোথায় ছিলাম।
চিড়া মুড়ি নিয়ে একটা ঘরে বন্দি ছিলাম। শুধু নামাজের সময় সংযুক্ত বাথরুমে ওযু করে ফরজ নামাজটা পড়েছি। বাকি সময় গবেষণায়। মানুষ কত কিছু আবিষ্কার করেছে, অথচ ছোট্ট একটা জায়গায় এসে আটকে আছে। মহান আল্লাহর কৃপায় সম্ভবত আমিই প্রথম এমন একটা কিছু আবিষ্কার করতে যাচিছ, যা দেশের সীমানা ভেঙ্গে পুরো পৃথিবীকে একটি মাত্র দেশে পরিণত করবে।
সত্যিকারের গ্লোবাল ভিলেজ এর স্বাদ লাভ করবে পৃথিবীবাসি। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একটি মাত্র মানুষ জাতি হিসেবে বিশ্বে এক অমিয় ফল্গুধারা বয়ে নিয়ে আসবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুর্বের সব বাধাকে দুরীভুত করবে।
স্যারের এসব কথা শুনে আমি নিজেই দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গিয়েছিলাম- স্যারেরে মানষিক সুস্থতা স¤পর্কে। আমার জীবনে যত স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়েছি- সবাই একটু পাগলাটে টাইপের ছিলেন।
কিšতু এরকম কষনও হয়নি। আমি টান্ টান্ উত্তেজনা নিয়ে স্যারের কথা নির্বিকারে শুনে যাচিছ। স্যার চালিয়ে গেলেন-
আমি তাত্ত্বিকভাবে এমন এক এয়ারসাইকেল আবিষ্কার কেরছি যার নির্মাণ খরচ সাধারণ বাইসাইকেলের অর্ধেকের চেয়েও কম হবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচেছ এ যানকে বাহিরে থেকে কোন শক্তি প্রদান করতে হবে না। শুধুমাত্র বায়ু ব্যাবহার করে (বায়ুপ্রবাহ লাগবে না) এ আশ্চর্ষ যানটি ১০০/১৫০ ফুট উপর দিয়ে ২/৩ জন যাত্রীও হালকা মালামাল নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বেশ ভালো বেগে উড়ে যেতে সক্ষম।
যেহেতু বাহিরে তেকে কোন শক্তি সরবরাহ করার দরকার নেই, তাই খরচ যেমন কম, পরিবেশ দুষণও তেমন একেবারে নেই। যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে। এর জন্য কোন পাইলটের দরকার নেই। ফলে মানুষ যেখানে সেখানে যখন তখন যেতে পারবে। শুধুমাত্র ইচেছ করলেই মানুষ এই খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হয়ে যাওয়া পৃথিবীকে জাতি, ধর্ম, ঐশ্বর্ষ প্রভৃতির ভেদাভেদ ভুলে একটি একক দেশে পরিণত করতে পারবে।
আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার তখনই ঘটবে, যখন বিশ্বের সবার কাছে এরকম একটি যান থাকবে। পাশাপাশি এ যানে বসে যাদের ল্যাপটপ ক¤িপউটার আছে ও মোবাইল সংযোগ আছে, তারা বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের যাবতীয় সুবিধা পাবেন। যার কারণে পুরো বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যাবস্থায় এক আমুল পরিবর্তন আসবে। ল্যাপটপগুলোতে প্রয়োজনীয় ভাষা অনুবাদক সফটওয়্যার থাকার কারণে বিশ্বের যে কোন ভাষাভাষির মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজতর হয়ে উঠবে। ফলে, বিশ্বে আজকে যে খন্ড খন্ড দেশ হিষেবে সীমারেখায় বিভক্ত, তা উঠে গিয়ে পুরো বিশ্ব হয়ে উঠবে একই পরিবারের মানুষের মতো।
সারা বিশ্বে গুটি কয়েক বিকশাল বিশাল অত্যাধুনিক শহর থাকবে, যেখানে বিশ্বের সকল মানুষ একত্রে বাস করবে। দিনের বেলায় তারা সারা বিশ্বে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে, যেমন- কৃষিক্ষেত্রে, খনি, কারখানা ইত্যাদিতে এয়ারসাইকেলে করে চলে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যšত্রগুলো এসব কাজে মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সাহায্য করবে। ফলে কাজগুলো আরও সহজ হবে।
চুরান্নব্বইয়ের জুন মাসে স্যার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ওসমানী মেডিকেলের ক্যান্সার বিভাগে ভর্তি হলেন, আর ১লা জুলাই এক মাস শয্যাশায়ী জীবনের অবসান ঘটিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।
মাধ্যামক পরীক্ষা দিয়ে গিয়ে স্যারের বাড়িতে অনেক কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করেছি। কিšতু স্যারের সেই এয়ারসাইকেলের গবেষণার মাষ্টার প্লানগুলো আর পাইনি। স্যারের অকালমৃত্যু পৃথিবীকে এক অনন্য সুন্দর আবিষ্কার থেকে বঞ্চিত করলো। প্রকৃতির কি অদ্ভুত খেয়াল!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।