আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত

বিকট
দেখতে দেখতে ছুটির সময়টা শেষ হয়ে এলো। আর মাত্র কিছু মুহুর্ত। তারপরেই সব মৌজমাস্তি শেষ। এতক্ষণ বেক্কলের দল অযথাই আড্ডা পিটিয়েছে, কাজের কাজ কিছুই করেনি। কার কর্মজীবন কেমন, কার যৌনজীবন নিঃসঙ্গতায় আক্রান্ত।

কে কার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে চায় এসব নিয়ে বাকবিতন্ডাও হয়েছে খুব একচোট। ছুটির মুহুর্তগুলো খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। অল্প কিছু সময়ের জন্যে একসাথে হয়েছিলাম আমরা। কিন্তু কাজের কাজ কি হল? ছুটির মধ্যে আবার কিসের কাজ সেও এক প্রশ্ন বটে। হু! অযথা প্রশ্নের জবাব দেবার সময় আমাদের নেই।

হাতের মধ্যে দুমড়ানো কাগজটায় আবার চোখ বুলিয়ে নেই। "নাম ও পেশা বিবরণী" :- (এখানে; জমায়েৎ বস্তু, টুকরো টুকরো প্রাণ, যাবতীয় জড়পদার্থ এবং অনুভূতিসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আছে) অনেকগুলো নাম। অনেক অনেক। একধরনের তরল পদার্থ যার নিমজ্জনে লৌহদন্ড গলে যায়। শেষ হয়ে আসা ধূম্রশলাকার মোড়ক।

ইত্যাদি ইত্যাদি জড়বস্তু। অনুভূতির রকমারির মধ্যে খুব বেশি কেউ আসেনি। রাগ আর কান্নার অনুভূতি। তাদের সাকার প্রকার একটা গুমোট আবহাওয়া তৈরী করেছে। তাদেরকে আমরা চাইনি।

কিন্তু কিভাবে যে ঢুকে গেল! তাদের নৈরাশ্যবাদী জিঘাংসায় ভয় পেয়ে চলে যাচ্ছিলো আমন্ত্রিত আরো অনেকেই। ভয়! কখন যেন এসেছে! প্রকান্ড তার দেহ। আমাদের সবার জন্যে তাবুর ব্যবস্থা করেছে সে। এই রোদজ্বলা খোলা প্রান্তরে সেই ছিলো এক কোমল আশ্রয়। হিম হিম।

ধূসর। কিছু বস্তু এসেছিলো বেঢপ। তারা কি কাজে ব্যবহৃত হতো নিজেরাই ভুলে গিয়েছে। কিন্তু ছুটির ব্যস্ততার ভীড়ে কোন এক ফাঁকে ঢুকে পড়েছে। একটা ক্ষয়ে যাওয়া কাঁটা চামচ আর কিছু পড়ে যাওয়া চোখের পাঁপড়ি।

তাদের কথোপকথনের অংশবিশেষ, কাঁটাচামচ: তুমি কবে ঝরে গিয়েছিলে মনে আছে? পাঁপড়ি: এমনিতেই। তেমন কিছুনা। শীতকালে ঝরে যাওয়া পাতার মত। কাঁটাচামচ: আমি একসময় বেশ প্রিয় ছিলাম তার। আমার ইস্পাতদৃঢ় শরীর সুখাদ্য গলাধঃকরণের কাজে ব্যবহার করত সে।

পাঁপড়ি: কে? কাঁটাচামচ: তাই তো! কে? ততক্ষণে একটুকরো চর্বি পিছলাতে পিছলাতে সন্নিকৃষ্ট হয়েছে তাদের। চর্বি: কে জানোনা! যার জন্যে আমরা ছুটি নিয়ে কাজ করতে এসেছি সে! আমরা যার অধীনস্থ সে! তার এই কথায় ছুটি এবং কাজ বিষয়ক বৈপরীত্য এবং বৈসাদৃশ্য খেয়াল করে আমি সিদ্ধান্ত দিই যে, এটি একটি হাস্য উদ্রেককারী ব্যাপার। কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে কোন কাজ হয়না। কেউ আমার মোড়লগিড়ি মানেনা। "হাসি" নামক অনুভূতিটি হাজিরা দেয়না।

পরিস্থিতি আরো গুমোট হয়ে যাওয়াতে ভয়ে সিঁটিয়ে গেল একজোড়া সৌখিন দস্তানা। তার দিকে সরোষে তেড়ে এল কাঁটাচামচটি। তার পীঠে খোঁচাতে শুরু করল। হলদেটে দাঁত তেড়েফুড়ে আসে আয়েশ করেতে থাকা এক টুকরো চর্বির ওপর। আমোদ পয়ে হিসহিস করে হিলহিলিয়ে চলে অম্লীয় তরল।

তার পেছনে তাড়া করে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ। _________________________________________ ভোজনালয় "উফ, ওফ স্যরি" আচমকা ঢেকুর তোলার শব্দে লজ্জিত হয় সে। ছুটির দিনগুলো শেষ হয়ে আসছে, মনে পড়ে তার। এক সপ্তাহের ছুটি দেখতে দেখতে উড়ে গেল যেন। নেচে গেয়ে, খেয়ে দেয়ে।

"এই কি ভাবছো অত? এত উদাস কেন?" তার পাতে আরো কিছু কোলেস্ট্রল ঢেলে দিতে দিতে কেউ জিজ্ঞাসা করে। ___________________________________________ দেখতে দেখতে ছুটির মুহূর্তগুলো শেষ হয়ে আসছে। সময় খুব কম। অথচ কাজ অনেক বাকি। কি হাস্যকর কথা, না? ছুটির মধ্যে আবার কাজ কিসের? "মূলত, তার ছুটিকে কার্যকর করে তোলার জন্যে আমাদের এই অক্লান্ত প্রয়াস" আমাদের অতিথিবৃন্দের মধ্যে সবচেয়ে বিশালাকার- একটি কাঠের আলমারি জাহির করে নিজেকে।

"সে জানি, কিন্তু এতক্ষণে হৈ চৈ, চেচামেচি, আর মারামারি ছাড়া কি হয়েছে এখানে?" আমি চোখ গরম করে তাকাই সমবেত সকলকিছুর দিকে। এ দেখে ধেয়ে আসে হতাশাগ্রস্থ এবং বিপর্যস্ত একটি কলম। গাল দিয়ে ওঠে, "এই বিশ্রী থকথকে পদার্থটাকে দেখলেই ঘেন্না হয়। কতক্ষণ ধরে বকবক করে চলেছে। তুই জানিস আমার কত শক্তি?" সে শক্তিমত্তা বাড়ানোর জন্যে প্রাণশক্তিবর্ধক দোয়াত খুঁজতে থাকে।

কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়না তাকে। আমি তাকে দেখে হতাশায় মাথা নাড়াই। __________________________________________ ডায়েরি "ছুটির দিনগুলো শেষ হয়ে আসে। আমি আমার একাকী ঘরের অন্ধকার কোণে চুপচাপ বসে থাকি। টুপটাপ নীরবতা ঝরে পড়ে।

আমার ডায়েরিটায় একটা নতুন কবিতা লেখা হয়না কতকাল! কোন বিষাদী পঙক্তিমালা বা আনন্দের আবাহনী সঙ্গীত রচনা করিনি কতদিন! না পারার বেদনা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। চায়ের পেয়ালায় হতাশা নিক্ষেপ করি। আবার সে এঁটো পেয়ালাই পান করে চলি। আমি হাসতে পারিনা। রাতের আকাশে তারাখসা দেখতে দেখতে ছোটবেলার ইচ্ছের কথা মনে কর বুক ভেঙে দীর্ঘশ্বাস আসে..." ___________________________________________ ___________________________________________ আমাদের এখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

যে উদ্দেশ্যে এখানে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম তার যৎকিঞ্চিতও পূরণ হয়নি। ওদিকে "ভয়" আর "কান্না" নামক অনুভূতিদ্বয় আঁশটে এবং অম্লীয় ক্ষ্যাপাটে তরলের সংমিশ্রণে স্নান করে চকচকে আর ভয়াল হয়ে উঠেছে। আমাদের সময় বেশি নেই হাতে খুব বুঝতে পারছি। হয়তোবা অন্তিমলগ্ন এটাই। এর মধ্যে পরিস্থিতি আওতার মধ্যে নিতে না পারলে আমরা সবাই কাজতো হারাবোই, প্রাণটাও যাবে সবার।

হঠাৎ করে এক ভীষণ ঝাঁকিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে দেয়াল, ছাদ, মেঝে। এতে ভয় এবং কান্নার উল্লাস আর মাতলামো আরো প্রকট রূপ ধারণ করে। তারা ঢোকঢোক করে গিলে খায় আঁশটে এবং অম্লীয় তরল। পকেট থেকে ছুরি বের করে আমাদের আঘাত করতে উদ্যত হয় "ভয়"। "কান্না" তার বুক চিড়ে হৃদয়টা বের করে কেটে ছড়িয়ে দেয়।

রক্তের প্লাবন বয়ে যায় আমাদের আড্ডাখানায়। __________________________________________ __________________________________________ ডায়েরি "ছুটির দিনগুলোতে আমার বিপন্নতাটা আরো বেশি অনুভব করি। দূরে, খুব দূরে ভোর হয় কোথাও। আমার ঘর থেকে, জানলা থেকে অনেক দূরে। ভোরের আলোর ফোঁটা আমার জানলা বেয়ে পড়েনা।

ভালো লাগেনা কিছুই। হস্তমৈথুন থেকে শুরু করে কবিতা কোনটাই না। একটু আগে চাঁদ দেখতে গিয়েছিলাম। আর চোখ চলে গেল অন্য এক ঘরে যেখানে নীলচে আলোয় রমণোন্মত দুই নর-নারী। নারীটার চেহারার সাথে একসময়কার খুব চেনা কারুর কি মিল পেয়েছিলাম? ভাল্লাগছেনা কিছুই।

"সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা"। কাল থেকে আবার বাসের ভীড়ে ঘাম আর পার্ফিউম, কে কাকে টেক্কা দেয়...ওহ ওহ! অসুস্থ প্রতিযোগীতা। বমি পায় গা গুলিয়ে ওঠে। "শাশ্বত অসুস্থতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ" আমি বমি কর্বো এখন। বমি করে ভাসিয়ে দেব দেহপসারিণী শহর, অজস্র ধর্ষণের সাক্ষী খোলা প্রান্তর,বীর্যের দাগ লেগে থাকা চাদর, অপাপ কিশোরীর সুঘ্রাণ যোনী, লোভী সহকর্মিনীর কামনাময়ী চোখ... আমি লেখা বন্ধ করে ড্রয়ার হাতাই।

পঞ্চাশটা ফেনোবারবিটান। প্রতিটি সিক্সটি মিলিগ্রাম। আমি হাত বাড়িয়ে নেই কৌটোটা। এবার আমার মন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। যেন ছেলেবেলায় পড়া সেই রূপকথার গল্পের মত, যেন ডালিমকুমার! সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠি খুঁজে পাওয়ার খুশীতে মশগুল... __________________________________________ আমাদের এখানে এখন এক ভীষণ দমবন্ধ করা অবস্থা।

ভয় আর কান্নার তান্ডবনৃত্যে যোগ দিয়েছে নির্বোধ জড় পদার্থগুলো। একটা খালি কৌটো। অধোয়া অন্তর্বাস। ছাই উপচে পড়া এ্যাশট্রে। সুবিধাবাদী কলম।

আমাদের শেষ সময় বোধ হয় উপস্থিত। শেষ সময়ে সে এলো! এলো কি? হুড়মুড়িয়ে বাহারি পোষাক পরিহিত, দিলখোলা হাসি নিয়ে, যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে ঢুকে পড়ল কদর্য ঘরটিতে। তেলতেলে হাসি তার মুখে। ছটফটে হাসি তার মুখে। কখনও বিষণ্ণ হাসি।

কখনও প্রশ্রয়ের। সে এসেছে অবশেষে! কিন্তু সে কি আসলজন? তাকে পাকড়াও করি আমি। আমার থকথকে কদাকার আকৃতি দেখেও সে হাসে। চোখেমুখে কত কথা আর অনুনয় ঝরে পড়ে তার। কিন্তু আমার চোখ এড়িয়ে যাওয়া কি এতই সহজ? আমি বুঝতে পারি, সে আসলজন নয়।

কিন্তু শেষমুহূর্তে আর লোক পাবো কোথায়? একে দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। সে আমার চোখে সম্মতির পড়াশোনা করে নিয়ে মুচকি হাসে। তার বাক্স পেঁটড়ার মধ্যে থেকে একটা চোখা চোঙা বের করে চেচাতে থাকে, "হেই, হুই হি হি হি! শোনো সবাই! এখানে দারুন এক সিনেমা মঞ্চস্থ হবে। হা হা। সবাইকে অনেক টাকা দোবো।

সবাই হাসির অভিনয় কোরবে হি হি হি। তবে কেউ যেন জান্তে না পারে! অবশ্য জান্তে পার্লেই বাকি হো হো হো!" "কি বলতে চাস?" খসখসে গলায় হুমকি দিয়ে ওঠে অন্যান্য অনুভূতি এবং জড়পদার্থগুলো। "কিছুনা! এই দেখ তোমাদের জন্যে ছোট্ট এক্টা পান্ডুলিপি তৈরী কোরে এনেছি। এট্টা দেখে শুধু মুখস্থ বলে যাবে আর হাসবে। সিম্পল! হি হি হি!" যাক, লোকটা নকল হলেও কাজে দেবে।

চলে যাবে বেশ। এবারের মত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি আমি। ___________________*_____________________ আরো একটি রাত বেঁচে থাকা! কিসের মোহে? একটা সিডেটিভের ঘোরে আরামদায়ক ঘুমের ভেতর পাশ ফিরতে ফিরতে আমি হয়তোবা কোন সুখস্বপ্ন দেখে হাসি, বাঁচি! আহ স্বপ্ন! আহা জীবন!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.