আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটিতে প্রবেশাধিকার সম্বন্ধে প্রবন্ধ



দৃষ্টিপাত: আইসিটিতে প্রবেশাধিকার ও বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী আজমাল হোসেন মামুন বর্তমান যুগ হচ্ছে তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তির যুগ। এ যুগে তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে বাংলাদেশী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্দোলন খুব একটা জোড়ালো ভূমিকা না রাখলেও খুব দুর্বলও নয়। সর্ব শেষ ৯১তম রাষ্ট্র হিসেবে ৯ মে ২০০৭ ইং তারিখে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক সনদ অনুস্বাক্ষর করার পর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এগিয়ে চলেছে।

তবে একটা কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সর্ব ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও আইসিটি সেক্টরে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী জোড়ালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে নি। যে সব প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত হয়েছে তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীরা তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে বলে তাদের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর আশাতীত উন্নয়ন হয়েছে। এমনকি তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সম্বন্ধে দক্ষ হওয়ার ফলে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি তাদের কাছে তেমন সমস্যা বলে মনে হয় না। বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশ তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী তথা আত্মনির্ভরশীল জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলছে।

বাংলাদেশ সে দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য কয়েক যুগ আগে থেকে কাজ শুরম্ন হলেও আইসিটি সম্বন্ধে ধারণা পেয়েছে কম সংখ্যক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। কারণ, শত শত সংগঠন ওদের নিয়ে কাজ করলেও তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তির জন্য কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণের যেমন অভাব রয়েছে তেমনি অভাব রয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কম্পিউটারে কাজ করার। অর্থাৎ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত স্বল্প সংখ্যক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাজ করার সুযোগ আজও সৃষ্টি করে নি সংশিস্নষ্ট সংগঠক সমূহ বিভিন্ন কাজের অজুহাতে। আমাদের দেশে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য-প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে শিক্ষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কম্পিউটার বিষয়ে ধারণা দিতে হবে।

এ ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে। মাত্র দু’ এক বছর আগে সমাজসেবা অধিদপ্তরে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ রয়েছে। কিমত্মু দুঃখের বিষয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে। অথচ স্ক্রিন রিডার সফট্ওয়ারের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কম্পিউটার চালাতে পারে।

ইন্টারনেটে বসে অনায়াসে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারে। বিষয়টি অনেক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার জানা নেই। বিশেষ যে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শিক্ষিত তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপামত্মরিত করতে হলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এছাড়াও একটি কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নিজ প্রযুক্তি ও ভাষা ব্যবহার করে ‘আইসিটি’তে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য পৃথকভাবে নতুন-নতুন সফট্ওয়ার তৈরী করেছে। যেমন: সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্ক্রীন রিডার,জওস, উইনডো আইস লো-ভিশন প্রতিবন্ধীদের জন্য Jaws mazic, Super Nova, ডেফ-ব্লাইন্ডের জন্য Focus Refreshable, Braille displays, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য pointer hands free. এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র,ছাত্রীদের শিক্ষাবিষয়ক রিলেটেড কাজের জন্য Speak and Spelling, Quality Quadg, Marvel Math সফট্ওয়ার রয়েছে।

যার মাধ্যমে সরাসরি কাজ করা সক্ষম। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দ্রুত যোগাযোগের জন্য টাকং মোবাইল, টকিং মোবাইল ল্যাপ-টপ, টকিং ওয়াচ, টকিং ক্যলকুলেটর। কম্পিউটার স্ক্যানারে ব্যবহার করার জন্য অপেন বুক,প্রিজমা, কুয়িক লুক সফটওয়ার এর মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সরাসরি কাজ করতে পারে। ক্ষীণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ক্রিন ম্যাগনিফিকেশন সফট্ওয়ার। যা সাধারণ অক্ষর থেকে ৭০ গুণ বড় দেখায়।

আইসিটিতে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তেমন না এগিয়ে আসার কারণ হচ্ছে, এ দেশে তাদের উপযোগী প্রশিক্ষণের পরিবেশ নেই। অন্যদিকে এ ইস্যুর জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত সংগঠন সমূহ তেমন ভহমিকা পালন করছে না। গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দশক ২০০৩-২০১২ বিওয়াকো মিলেনিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক ফর এ্যাকশন (বিএমএফ) এর ৭টি অগ্রাধিকারযোগ্য ক্ষেত্রসমূহ কে গুরুত্ব ও বাস্তবায়নে অঙ্গিকারবদ্ধ । সেখানে ৬ নং-এ. তথ্য, যোগাযোগ এবং সহায়ক প্রযুক্তিসহ তথ্য ও যোগাযোগের প্রবেশগম্যতার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ সনদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দেশে আইসিটি নীতিমালাতেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটিতে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে তেমন স্পষ্ট কিছু উলেস্নখ নেই। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) তেমন জোড়ালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় নি। দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নানা ইস্যু নিয়ে কথা ওঠলেও আইসিটির ব্যাপারে কোন সংগঠকের তেমন মাথা ব্যথা নেই বললেই চলে। বর্তমান সরকার দিন বদলের সরকার রূপে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রতিকরবদ্ধ। কিমত্মু প্রতিবন্ধীদের আইসিটিতে প্রবেশাধিতার সহজ করার ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নি বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।

আইসিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশাধিকারের সুযোগ না ঘটলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব। লেখক- আজমাল হোসেন মামুন () প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক তথ্য ও যোগাযোগ উন্নয়নকর্মী বিপিকেএস কমপেস্নক্স, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫ (প্রয়োজনে মিস কল)।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.