সেবার ঈদের নামাজ শেষে ব্যাপক কোলাকুলি পর্ব চলছে। আমি কয়েক পর্ব শেষ করে দেখি মাহবুব মসজিদে জুতো রাখার কাঠের বক্সের সামনে একজন সহকারী গবেষকের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। যিনি মূল গবেষকের অনুপস্থিতিতে ঘটনার ঘনঘটা কিছুই বুঝতে পারছেন না।
বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য আমি বেশ একটা রবিন হুড ভাব নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম, ‘কি হে!! তোমার গাল অমন তুবড়ে গেছে কেন?
’‘আরে আমার স্যান্ডেল খুঁজে পাচ্ছি না। এখানেই রেখেছিলাম।
এক্কেবারে নতুন স্যান্ডেল...’
কোলাকুলি পর্ব সমাপ্তির পথে। মসজিদ প্রায় ফাঁকা। স্যান্ডেল এখন আর কারও হাতে নেই। পায়ে নেমে গেছে। এই অবস্থায় সেটা খুঁজে বের করা কঠিনতর।
আমি ভীষণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে আরেকটা জুতো রাখার কাঠের বাক্সে উঁকি দিতেই দেখি একজোড়া স্যান্ডেল পরে আছে। আমি তাড়াহুরো করে মাহবুবকে এদিকে আসতে বললাম। বাক্সে উঁকি দিয়েই মাহবুবের মুখ উজ্বল হয়ে গেল।
কিন্তু মসজিদ থেকে বের হতে না হতেই মাহবুবের মুখের উজ্জ্বলতা নিভে গেল। মহা বিচিত্র ঘটনা।
ঈদ উপলে কেনা নতুন জুতো নামাজ শেষে আর মাহবুবের পায়ে আটছে না। ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু জুতোর প্রাণ নেই। সে চাইলেই ফট করে ছোট হয়ে যেতে পারে না। তাহলে যুক্তিসঙ্গত উপায়ে মাহবুবের পা বড় হয়ে যেতে পারে।
মাহবুব আমার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো, ‘দোস্ত, তাহলে কি সত্যিই আমার পায়ের পাতা বড় হয়ে যাচ্ছে? তুই একটু খেয়াল করে দেখতো!!”
আমি উদাস গলায় একটা ফতোয়া দিয়ে বললাম, ‘অনেকদিন পর নামাজ পড়তে এলে এই জাতীয় সমস্যা হতেই পারে। এটা নিয়ে এত চিন্তিত হবার কিছু নেই। ’
কিন্তু চিন্তিত না হয়েও উপায় নেই। ঈদ উপলে কেনা জুতো। অথচ ঈদের দিন পায়ে দেয়া যাচ্ছে না।
ঘটনা আমাদের দু’জনের মাথায় ধরছিল না। তাই আরেক বন্ধু সহ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের পর আমাদের সম্ভাব্য ধারণা হল, সম্ভবত একই ডিজাইনের জুতো আরও কেউ কিনেছিল। কিন্তু সাইজ এক নয়। নামাজ শেষে অতশত খেয়াল না করে নিজের জুতো ফেলে মাহবুবের জোড়া পায়ে দিয়ে চলে গেছে। সাইজ ছোট হওয়াতে সেটা এখন আর মাহবুবের পায়ে আটছে না।
কিন্তু ঈদের দিন তো আর খালি পায়ে থাকা যায় না। তাই জোরজবরদস্তি করে শেষ পর্যস্ত ছোট সাইজ জুতোই মাহাবুবের পায়ে পারমানেন্টলি ফিট করে দেয়া হল।
ঈদের দিনটা কোনভাবে পার করা গেলেও পরের দু’দিন আর হাটতে পারেনি বেচারা। পায়ে ফোসকা পরে একাকার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।