আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানাঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম ইয়াতীমখানা উপ-মহাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম বে-সরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। নগরীর ৪৮, আজিমপুরে এই ইয়াতীমখানাটি প্রতিষ্ঠিত। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম ইয়াতীমখানাটি ১৬ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। ইয়াতীমখানায় বর্তমানে প্রায় চারশত জন আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রী আছে। এই এতিম খানায় ৬৫ জন শিক্ষক আছেন।

ইয়াতীমখানা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫ শত ৮০ জন এতিম(ইয়াতীম) ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে পূনর্বাসিত হয়েছে। পূর্বের ইতিহাসঃ ঢাকার উন্নয়নমুলক কাজে পুরনো ঢাকার নবাব পরিবারের বদান্যতার কথা সুবিদিত। এ পরিবারের কারো কাহিনী ছিল কিংবদন্তির মতো। আজকের ঢাকার অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা যুগের পর যুগ সেই স্বাক্ষ্য বহন করে চলছে। আজিমপুরে অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিম খানা ঢাকার নবাবদের প্রতিষ্ঠিত এমনই এক দাতব্য প্রতিষ্ঠান।

এই ইয়াতীমখানাটিই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ অনাথ আশ্রম। কালের যাত্রাপথে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘপথ অতিক্রম করে চলেছে। যেভাবে এতিমখানা হলোঃ নবাব স্যার সলিমুল্লাহর এক মাত্র কন্যা প্রথম সন্তান জন্মদানের সময় ১৯০৯ সালে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু সন্তানটি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। এ অনাকাংখিত ঘটনায় নবাব ও তার স্ত্রী আসমত-উন-নেসা অত্যন্ত ব্যথিত হন।

প্রাণপ্রিয় সন্তানের অকাল মৃত্যুতে তারা একেবারেই ভেঙে পড়েন। বাবা-মা হারা স্নেহ বঞ্চিত শিশুদের জন্য তাদের মন কেঁদে ওঠে। এতিম সন্তানদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার মাধ্যমে সন্তান হারানো বেদনা কিছুটা দূর করার জন্য চেষ্টা করেন। ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়-১৯০৯ সালে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ‘ইসলামিয়া এতিমখানা’ নামে এ অনাথ আশ্রমের সূচনা করেন। প্রথমে যেখানে থেকে শুরুঃ সর্বপ্রথমে আহসান মঞ্জিলের পাশে কুমারটুলীর একটি বাড়িতে ইয়াতীমখানাটির কার্যক্রম শুরু হয়।

সে সময় নবাব এর জন্য প্রতিমাস দুইশত টাকা অনুদান দিতেন। ইয়াতীমখানার ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ১৯১২ সালে সাধারণের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯১৩ সাল লালবাগে বর্তমান আইজি প্রিজন এর বাড়ীর জমিতে ইয়াতীমখানাটি স্থানান্তর করা হয়। একই বছর বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ঢাকা সফরে আসেন। তিনি ইয়াতীম খানাটি পরিদর্শন করেন এবং সন্তুষ্ট হয়ে এক হাজার টাকা অনুদানের পাশাপামি সরকারি খাজ জমি বন্দোবস্তের ব্যস্থা করেন।

এরপর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম ইয়াতীমখানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য আজিমপুর (আমলাপাড়া) গোর-এ শহীদ মসজিদের পাশে এক খণ্ড খাস জমি নিয়ে এতিমখানার স্থায়ী আবাস নির্মাণ করা হয়। নবাব সলিমুল্লাই এতিমখানা নির্মাণের ব্যয় বহন করেন। এটি সে সময় নির্মাণের সময় লাগে দু’বছর। স্যার সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পরঃ ১৯১৫ সালে নবাবের মৃত্যুর পর ইয়াতীমখানার ব্যয়ভার এবং পরিচালনায় সংকট দেখা দেয়। তখন ঢাকার বেশ কয়েকজন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় পরিচালনা সংকট থেকে রক্ষা পায়।

অনেকেই আর্থিক সহযোগিতায় সে সময়ে এগিয়ে আসেন। ১৯১৬ সালে ইয়াতীমখানাটি আজিমপুরের বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হলে নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠার নামে স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা নামকরণ করা হয়। এতিম খানায় আর্থিক অনটনঃ নবাব সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর ইয়াতীমখানায় ব্যবস্থাপনায় এবং আর্থিক অনটন দেখা দেয়। অন্যদিকে দিনে দিনে বাড়তে থাকে এতিমদের সংখ্যা। সেই সময় নবাব পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এগিয়ে আসেন।

তাদের অকৃপণ সাহায্যে ইয়াতীমখানাটির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে নবাব স্টেটের অনুদান এবং বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের আর্থীক সহায়তায় এই প্রতিষ্ঠানের খরচ নির্বাহ করা হয়ে থাকে। পিতার স্মৃতি ও স্বপ্নঃ পিতার স্মৃতি ও স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নবাব হাবিবুল্লাহ ইয়াতীমখানা পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালে লর্ড কারমাইকেল আবার ঢাকা সফরে এসে এতিম খানাটিকে পরিদর্শনে আসেন এবং নবাব হাবিবুল্লাহ ওয়ার্ড এর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। ১৯২৩ সালে ‘স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা’ বড় রকম আর্থিক সংকটে পড়েন।

চরম এ দুঃসময়ে এটির হাল ধরেন স্যার সলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু খান বাহাদুর ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী। ১৯৩১ সালে বাংলার গর্ভণর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসনের স্ত্রী লেডি জ্যাকসন ইয়াতীমখানা পরিদর্শনে এসে স্যার আহসান উল্লাহ ওয়ার্ড নামে একটি ভবন উদ্বোধন করেন। ১৯৩৬ সালে এতিমদের জন্য তিনি হাইস্কুল এবং একই বছর পলিটেকনিক জুনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালের মে মাসে নবাব হাবিবুল্লাহর সভাপতিত্বে খান বাহাদুর ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী এর অবৈতনিক সম্পাদকের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। খান বাহাদুর ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকীর পর দেশের বিশিষ্ট সমাজ সেবক এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ গত ২০০৮ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির অবৈতনিক সম্পাদক এবং অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে ইয়াতীমখানার প্রধান মোতোয়াল্লীর দ্বায়িত্ব পালন করছেন নবাব স্যার সলিমুল্ল্যার প্রপৌত্র নবাব পরিবারের বর্তমান প্রধান খাজা জাকী আহসানউল্লাহ। বর্তমানে ইয়াতীমখানার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে অনেকগুলো জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে উল্যেখযোগ্য হচ্ছে- স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম ইয়াতীমখানা, ইয়াতীমখানার ছেলেমেয়েদের জন্য বয়েজ হোম, গার্লস হোমস, ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয়, জুনিয়র গার্লস স্কুল, গোর-এ-শহীদ মসজিদ, গোর-এ-শহীদ মাদ্রাসা, সলিমুল্লাহ মেমারিয়াল ক্লাব, সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল পাঠাগার, সলিমুল্লাহ ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং সলিমুল্লাহ দাতব্য চিকিৎসা সেবা। (ইয়াতীমখানার ইতিহাসের তথ্য নেয়া হয়েছে জনাব নাজির হোসেনের লেখা "প্রাচীন ঢাকার ইতিকথা" বই থেকে)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.