জীবনের এই গতিপথ...পূর্ব-পশ্চিমে যেন এক নিছক অন্বেষণ
১।
বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে আলোচিত কমিক চরিত্রের নাম মনেহয় “টিনটিন”। ছোটখটো গড়নের আর অদ্ভুত চুলের ছাঁটের এ তরুণ সাংবাদিকটি তার ছোট্ট কুকুর স্নোয়িকে নিয়ে দুনিয়ার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়ায়, এমনকি চাঁদেও অভিযান চালায়। আর সাথে থাকে প্রায় সারাক্ষণ মাতাল হয়ে থাকা জাহাজী বন্ধু ক্যাপ্টেন হ্যাডক আর অসম্ভব প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ক্যালকুলাস।
টিনটিনের চরিত্রসমূহ
এডভেঞ্চার প্রিয় টিনটিন
২।
মানুষের যেকোন সুন্দর সৃষ্টি সবসময়ই আমাকে সবসময় আপ্লুত করে। আমি মনেকরি পৃথিবীতে সবার মধ্যই কিছু না কিছু সৃষ্টিশীলতা আছে। আর একারণেই আমি যাদের সৃষ্টিতে আপ্লুত হই তাদের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। এর মধ্য আছেন সুকুমার রায়, সত্তজিত রায়, এরিক মারিয়া রেমার্ক, হেনরী রাইডার হ্যাগার্ড, জো স্যাট্রিয়ানী, এরিক ক্ল্যাপটন সহ আরো অনেকে। টিনিটিনের স্রষ্টা জর্জ রেমি ঠিক তেমনই এক স্রষ্টা, যিনি আমার কিশোরবেলার অনেকটাই আপ্লুত করে রেখেছিলেন টিনটিনের দুঃসাহসিক এডভেঞ্চার দিয়ে।
আমার কিশোরবেলার কল্পনার অনেক জায়গাই আমি ঘুরেছি টিনটিনকে সাথে নিয়ে।
৩।
টিনটিনের স্রষ্টা জর্জ রেমি (১৯০৭-১৯৮৩) কাগজে কলমে তার ছদ্মনাম “হার্জে” (Herge) নামেই বেশি পরিচিত। তিনি ১৯০৭ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলাতেই তাঁর আঁকাআকির উপর প্রবল ঝোঁক পরিলক্ষিত হয়।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল Institut Saint-Luc এ অল্পকিছুদিনের অভিজ্ঞতা ছাড়া তাঁর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলোনা।
টিনটিনের স্রষ্টা জর্জ রেমি
টিনটিন সিরিজের বইগুলো বাংলাসহ ৫০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ধারণা করা হয়, টিনটিন সিরিজের বই এ যাবত বিক্রি হয়েছে ২০ কোটি কপিরও বেশি।
৪।
টিনটিন কমিকস সিরিজ যে অনবদ্য বৈশিষ্ট্যের কারণে পাঠকমহলে জনপ্রিয় তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হল, গল্পের ঘটনার চমকপ্রদতা, অদ্ভুত রসবোধ, অসম্ভব ডিটেইলস ড্রয়িং, সমসাময়িক ঘটনার নিঁখুত বর্ণনা, সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের গল্প ইত্যাদি।
বিংশ শতকের অনেক সমসাময়িক ঘটনাই উঠে এসেছে টিনিটিনের বিভিন্ন সিরিজে। যেমন “নীল কমল” (The Blue Lotus) বইটির ঘটনাপ্রবাহ তৈরী হয়েছিল ১৯৩৪ সালে সংঘঠিত চীন-জাপান যুদ্ধকে উপজীব্য করে। আবার “ওটোকারের রাজদন্ড” (King Ottokar's Sceptre) গল্পটির প্রেক্ষাপট তৈরী হয়েছে রুমানিয়ার রাজা Carol II এর সাথে তদকালীন সমাজতন্ত্র-বিরোধী রাজনৈতিক দল “Iron Guard” এর সংঘাতের প্রতিচ্ছবি দিয়ে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় “ক্যালকুলাসের কান্ড” (The Calculus Affair) কমিকসটির পটভূমি এসেছে তদকালীন “স্নায়ুযুদ্ধ”-কে কেন্দ্র করে।
দুই দুঁদে গোয়েন্দা জনসন আর রনসন
৫।
কাহিনীতে বর্ণবাদ ও জাতিবিদ্বেষের অভিযোগে বর্তমানে জন্মভূমি বেলজিয়ামেই বিপাকে পড়েছে কমিক চরিত্র টিনটিন। অভিযোগটি বেলজিয়ামের এক আদালতে করেন কঙ্গোর নাগরিক বিয়েঁভেনু মবুতু মোনডোনডো। তাঁর অভিযোগ “কঙ্গোয় টিনটিন” (Tintin in the Congo) বইটিতে আফ্রিকান কালোদের নীচু শ্রেণীর মানুষ এবং শ্বেতাংগদের শ্রেষ্ঠ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অবশ্য টিনটিনের স্রষ্টা রেমি এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন অনেক আগেই এবং ঘটনাটিকে তাঁর তরুণ বয়সের অসাবধানতা হিসাবে অভিহিত করেন। তিনি একথাও স্বীকার করে নেন যে, উক্ত বইটিতে তিনি কেবল তৎকালীন প্রচলিত ধারণারই প্রতিফলন করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, তৎকালীন (১৯০৮-১৯৬০) সময়ে বেলজিয়ামের উপনিবেশ ছিল কঙ্গো এবং উক্ত সময়ে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের হত্যার জন্য ওই ঔপনিবেশিক শক্তিকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
জর্জ রেমি নাৎসিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, এমন অভিযোগও শোনা যায়। টিনটিন সিরিজের অনেকগুলো লেখা তৎকালীন নাৎসিদের নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা লো সোয়াখ-এ প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লরেন্স গ্রোভ বলেন, “রেমি একজন সুবিধাবাদী মানুষ। তাঁর জনপ্রিয়তার একটি কারণ হলো তিনি সময়ের ধারাকে সঠিকভাবে অনুসরণ করেছেন।
যখন নাৎসি হওয়া সুবিধাজনক ছিল, তখন তিনি নাৎসি ছিলেন, যখন ঔপনিবেশিক হওয়া দরকার ছিল তখন তিনি তাই ছিলেন”।
৬।
টিনটিনের বইগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকগুলো চলচিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্য এডভেঞ্চার-একশ্যান মুভি যেমন আছে, তেমনি আছে এনিমেটেড মুভি। তালিকাটা নিম্নরূপঃ
The Crab with the Golden Claws (1947) - এনিমেশন মুভি।
Tintin and the Golden Fleece (1961) - একশ্যান মুভি, মূল গল্পের ছায়া অবলম্বনে।
Tintin and the Blue Oranges (1964) - একশ্যান মুভি, মূল গল্পের ছায়া অবলম্বনে।
Tintin and the Temple of the Sun (1969) - এনিমেটেড মুভি।
Tintin et la SGM (1970) - এনিমেটেড শর্টফিল্ম।
Tintin and the Lake of Sharks (1972) - কমিকস এবং Greg নামক এক স্ক্রিপ্ট রাইটারের গল্প অবলম্বনে।
অদূর ভবিষ্যতে টিনটিনকে নিয়ে আরো মুভি তৈরী হতে যাচ্ছে। ২০১১ সালে মুক্তি পাচ্ছে স্টিফেন স্পিলবার্গ পরিচালিত The Adventures of Tintin: Secret of the Unicorn। ছবিটির গল্প তৈরী করা হয়েছে “বোম্বেটে জাহাজ” (The Secret of the Unicorn) আর “লাল বোম্বেটের গুপ্তধন” (Red Rackham's Treasure) নামক দুটি বইয়ের সমন্বয়ে।
৭।
জর্জ রেমি সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একজন প্রতিভাবান শিল্পী।
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, একবিংশ শতাব্দীতেও আমার মত আরো অনেক ভক্তের হৃদয়ে জর্জ রেমি থেকে যাবে।
৮।
টিনটিনের ডাউনলোড লিংকঃ
১ - আমেরিকায় টিনটিন
২ - আশ্চার্য উল্কা
৩ - বিপ্লবীবের দঙ্গলে
৪ - বোম্বেটে জাহাজ
৫ - ক্যালকুলাসের কান্ড
৬ - চন্দ্রলোকে অভিযান
৭ - চাঁদে টিনটিন
৮ - কংগোয় টিনটিন
৯ - ফ্লাইট ৭১৪
১০ - কালো সোনার দেশে
১১ - কানভাঙ্গা মূর্তি
১২ - কাঁকড়া রহস্য
১৩ - লাল বোম্বেটের গুপ্তধন
১৪ - মমির অভিশাপ
১৫ - নীল কমল
১৬ - ওটোকারের রাজদন্ড
১৭ - ফারাওয়ের চুরুট
১৮ - সূর্যদেবের বন্দি
১৯ - তিব্বতে টিনটিন
৯।
তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া, বিবিসি ও আইরিশ টাইমস
বর্ণবাদের অভিযোগে কাঠগড়ায় টিনটিন
----------------------------------------------------------------------------
আমার পুরানো খিস্তিখেউড়ঃ
সিংহের খাঁচা (এডভেনচার কাহিনী)
প্রাপ্তবয়স্কদের নিষিদ্ধ ভার্জিন কোলা - ইটস ইওর লাইফ, কালার ইট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।