ইচ্ছে হল এক ধরনের পাগলা জগাই হঠাৎ করে ফেলতে পারে যা খুশি তাই ছেলেটার মা-বাবা নেই। একা থাকে একটা বাড়িতে। সঙ্গী বলতে স্নোয়ি নামের একটা কুকুর আর দুই বন্ধু ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও প্রফেসর ক্যালকুলাস। আর বয়স? কেউ বলে ১৪-১৫, কেউ ১৭। বাড়ি? প্রথম দিকে জানতাম, ও বেলজিয়াম থেকে এসেছে।
কিন্তু ও নিজে তো বলতেই চায় না বাড়ির কথা। অত সময়ই নেই। অতটুকুন ছেলে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতেই বেশি ব্যস্ত। অ্যাডভেঞ্চার ছাড়া থাকতেই পারে না। একমাত্র কাজ হলো সাংবাদিকদের মতো খবর খুঁজে বের করা।
রহস্যের কিনারা করতেই সময় পার করে বেশি। এর ওপর আবার পারে না এমন কোনো কাজই নেই। মোটরসাইকেল, গাড়ি, এমনকি বিমান-হেলিকপ্টারও চালায়! কাউকে ডরায় না। মন্দ লোকের খপ্পরে পড়লে মারামারি করতেও ছাড়ে না। ওহহো, ছেলেটার নামই তো বলা হয়নি।
বাড়ির ঠিকানা না থাকুক, তার একটা নাম কিন্তু আছে। ধাঁধা দিচ্ছি, প্রতি সপ্তাহেই তার নাম ছাপা হয় এই সাময়িকীতে। উত্তর সঠিক হয়েছে! টিনটিন। পাক্কা ৮২ বছর ছেলেটা দৌড়ে বেড়িয়েছে কমিকের পাতায়। সেই ১৯২৯ সাল থেকে! একফোঁটা বড় হয়নি কিন্তু! এখনো একেবারে ছটফটে কিশোর।
আসল খবরটা হলো, সেই দুরন্ত-দুর্বার কিশোর অভিযাত্রীকে নিয়ে ফাটাফাটি একটা থ্রিডি কার্টুন ছবি বানালেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। ছবির নাম 'দি অ্যাডভেঞ্চারস অব টিনটিন : দ্য সিক্রেট অব দ্য ইউনিকর্ন'।
ছবির মূল কাহিনী বলার আগে একটা গল্প না বললেই নয়। ১৯৮৩ সাল। লন্ডনে তখন তুমুল জনপ্রিয় ছবি ইন্ডিয়ানা জোনস সিরিজের দ্বিতীয় পর্বের শুটিং করছিলেন স্পিলবার্গ।
এর কিছুদিন আগেও তিনি টিনটিনকে চিনতেন না, শুধু নামটাই শুনে আসছিলেন। তবে এটুকু জানতেন যে ওয়ান্ডারল্যান্ডের সেই অ্যালিসের মতো টিনটিনও একটা জনপ্রিয় চরিত্র। হার্জে নামের এক বুড়ো হচ্ছেন ওই কমিকের লেখক ও আঁকিয়ে। তো, সেই হার্জে মশাইয়ের সঙ্গে কী করে যেন দেখা হয়ে গেল স্পিলবার্গের। হার্জে চাইলেন তাঁর কমিক যেহেতু গোটা দুনিয়ায় জনপ্রিয়, তাই সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিচালকই তাঁর চরিত্র নিয়ে ছবি বানাক।
তাঁর ইচ্ছার কথা জানতেই স্পিলবার্গ দিয়ে বসলেন কথা। যে করেই হোক টিনটিনকে নিয়ে তিনিই সবার আগে ছবি বানাবেন। সবাই আশায় আশায় দিন গুনতে শুরু করে দিল। একে একে কেটে গেল ২৮টি বছর! তখন যারা কিশোর ছিল, তারা হয়ে গেল প্রবীণ। যাদের জন্ম হয়েছিল, তারাও অপেক্ষা করতে করতে পেরিয়ে গেল কৈশোর।
সেই হিসাবে ভেবে দেখো, তোমরা কত ভাগ্যবান! নিজের প্রিয় হিরোর ছবিটা একেবারে থ্রিডি পর্দায় থ্রিডি অ্যানিমেশন আকারে পেয়ে গেলে। এ ছবির গল্পটা হলো গুপ্তধন খোঁজা নিয়ে ।
তিন গোয়েন্দার চরিত্রগুলো সত্যি কি না জানতে চেয়ে মাঝেমধ্যেই ফোন আসে সেবা প্রকাশনীতে। যখন জানানো হয় চরিত্রগুলো পুরোপুরি কাল্পনিক, তখন হতাশ হয় অনেকেই। তারা যে ভেবে বসে আছে আমেরিকার রকি বিচে কিশোর, রবিন, মুসা নামের তাদের বয়সী তিন কিশোর সত্যি সত্যি একের পর এক রহস্যের জট খুলে চলেছে।
অনেকে আবার তিন গোয়েন্দা পড়ে খুলে বসে তাদেরই মতো গোয়েন্দা দল। কারো দলের নাম পাঁচ গোয়েন্দা, কারো বা সাত গোয়েন্দা। মনে পড়ে, স্কুলে পড়ার সময় এমনই দল গড়েছিলাম কয়েক বন্ধু। তখন যেকোনো অপরিচিত মানুষ দেখলেই মনে হতো সন্দেহজনক চরিত্র, গাড়ি দেখলেই সোনাবোঝাই কিংবা চোরাচালানির গাড়ি। কোথাও অস্পষ্ট লেখার কোনো কাগজ পড়ে থাকতে দেখলেই মনে হতো গুপ্তধনের নকশা।
আসলেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের মনে তিন গোয়েন্দার মতো এতটা নাড়া দিতে পারেনি আর কোনো সিরিজ। তিন গোয়েন্দার প্রথম বই প্রকাশ পাওয়ার পর একে একে ২৫ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রায় আগের মতোই জনপ্রিয় এই সিরিজ। চলো, এ উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক তিন গোয়েন্দার কিছু হাঁড়ির খবর। তার আগে তোমাদের একটা প্রশ্ন। তোমরা কি রকিব হাসান কিংবা শামসুদ্দীন নওয়াবের নাম শুনেছ? প্রশ্ন শুনে নিশ্চয় হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছ? আচ্ছা, যদি বলি রবার্ট আর্থার জুনিয়রের নাম শুনেছ? এবার নিশ্চয় ধন্দে পড়ে গেছ? ভাবছ, এ আবার কে রে বাবা? অথচ 'তিন গোয়েন্দা'র জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম।
কিভাবে? তাহলে বরং সেই গল্প শোনা যাক। 'থ্রি ইনভেস্টিগেটরস' নামে কিশোর-কিশোরীদের জন্য চমৎকার একটি গোয়েন্দা সিরিজ লিখতেন এই রবার্ট আর্থার। এই সিরিজ থেকেই তিন গোয়েন্দার কাঠামো ও প্রথম দিককার বেশ কিছু বইয়ের আইডিয়া নেন রকিব হাসান। অবশ্য তিন গোয়েন্দা যে বিদেশি কাহিনী অবলম্বনে লেখা, তা পাঠকদের কাছে কখনোই লুকাননি লেখক। তা ছাড়া সম্পূর্ণ মৌলিক কাহিনী লিখে প্রতি মাসে পাঠকের একটা করে বইয়ের চাহিদা মেটায় কার সাধ্য! অর্থারের 'থ্রি ইনভেস্টিগেটরস' সিরিজের প্রথম বই 'দ্য সিক্রেট অব দ্য টেরর ক্যাসল' বের হয় ১৯৬৪ সালে।
কি, নামটা চেনা চেনা লাগছে? ঠিকই অনুমান করেছ, এর কাহিনী নিয়েই লেখা হয়েছে তিন গোয়েন্দার প্রথম বই 'তিন গোয়েন্দা'। শুরুতে অবশ্য মার্কিন এই সিরিজটির নাম ছিল 'আলফ্রেড হিচকক অ্যান্ড থ্রি ইনভেস্টিগেটরস'। খুব বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ছিলেন এই আলফ্রেড হিচকক। হলিউডের সর্বকালের সেরা ১০টি ছবির তালিকা তৈরি করলে অবধারিতভাবে তাতে তাঁর দু-তিনটি ছবি থাকবে। সাসপেন্স আর রহস্য ছবি বানানোয় তাঁর জুড়ি মেলা ভার।
'সাইকো', 'রেয়ার উইন্ডো', 'ভার্টিগো', 'নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট', 'দ্য বার্ডস' তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি ছবি। মার্কিন লেখক রবার্ট আর্থার ভাবলেন, তাঁর বইয়ের সঙ্গে যদি হিচককের নামটা জুড়ে দেওয়া যায়, তাহলে বইয়ের কাটতি হবে ভালো। প্রস্তাবে হিচককও সানন্দে রাজি। গোড়ার দিকের কাহিনীগুলোয় তিন গোয়েন্দাকে কেস জোগাড় করে দিতেন এই হিচকক। তিন গোয়েন্দার পাঠকরা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গেছ, এই হিচককই তিন গোয়েন্দা সিরিজের ডেভিস ক্রিস্টোফার।
প্রথম বই প্রকাশের পর এর জনপ্রিয়তা দেখে আর্থার ও প্রকাশক র্যান্ডম হাউসের চোখ ছানাবড়া। সে বছরই বের হলো 'থ্রি ইনভেস্টিগেটরস' সিরিজের দ্বিতীয় বই 'দ্য মিস্ট্রি অব দ্য স্টাটারিং প্যারট'। এর কাহিনী অবলম্বনেই লেখা হয়েছে তিন গোয়েন্দার অন্যতম জনপ্রিয় বই 'কাকাতুয়া রহস্য'। মূল থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজের সর্বশেষ অর্থাৎ ৪৩তম বই ছিল 'দ্য মিস্ট্রি অব দ্য ক্রেংকি কালেক্টর'। সব বই কিন্তু রবার্ট আর্থার লেখেননি।
প্রথম ৯টি বই এবং ১১ নম্বর বইটি তাঁর লেখা। সিরিজের অন্যান্য লেখকের মধ্যে ছিলেন উইলিয়াম আরডেন, নিক ওয়েস্ট, এম ভি কেরি ও মার্ক ব্রান্ডেল। পরে নাম বদলে 'দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটরস : ক্রাইমবাস্টারস' নামে নতুনভাবে সিরিজের বই প্রকাশ করতে শুরু করে র্যান্ডম হাউস। কিন্তু ১১টি বই বের হওয়ার পর আইনি জটিলতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় নতুন বই প্রকাশ।
থ্রি ইনভেস্টিগেটরসে গোয়েন্দাত্রয়ের নাম ছিল জুপিটার জোনস, পিট ক্রেনশো আর রবার্ট বব।
জুপিটার জোনসের চরিত্রটির আদলে তৈরি হয়েছে কিশোর পাশা। অন্তত একটা বাঙালি চরিত্র না থাকলে পাঠক নিজেকে কাহিনীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না, তাই দলনেতা কিশোর পাশাকেই বানানো হলো বাঙালি। আর এটা করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জুপিটার জোনসের চরিত্রটিতে অনেক অদলবদল করা হলো। কারণ বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা, মমতা_এগুলো ভিনদেশি চরিত্র পাবে কিভাবে? পিট ক্রেনশোকে বেশ কিছুটা পরিবর্তন করে বানানো হলো মুসা আমান। পরিবর্তনটা যে অনেকটাই, তার প্রমাণ মাঝে মাঝেই মুসার মুখে বাংলা বুলি কিংবা মুদ্রাদোষ 'খাইছে'।
আর তিন গোয়েন্দার নথি গবেষক রবিন মিলফোর্ড চরিত্রটির সঙ্গে মিল খুঁজে পাবে রবার্ট ববের। তিন গোয়েন্দার প্রতিটি কেসে বাগড়া দিতে না পারলে শুঁটকি টেরির যেন রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ঠিকই নাকানিচুবানি খেতে হয় তাকে। তিন গোয়েন্দাকে জ্বালাতন করলেও শুঁটকি টেরিকে ছাড়া কাহিনী যেন ঠিক জমে না। এই শুঁটকি টেরির আইডিয়া নেওয়া হয়েছে থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের স্কিনি নরিস চরিত্রটি থেকে।
থ্রি ইনভেস্টিগেটরসও থাকত প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে আমেরিকার ছোট্ট শহর রকি বিচে। বাস্তবে কিন্তু এই নামে কোনো শহর নেই।
এবার বরং তিন গোয়েন্দা সিরিজের অন্য চরিত্রগুলো সম্পর্কে দু-চারটা কথা বলে নেওয়া যাক। কিশোর পাশা যে তার নিঃসন্তান চাচা-চাচির কাছে বড় হয়েছে, তা তো আমাদের সবারই জানা। ছোটখাটো গড়ন, বিশাল পাকানো গোঁফের রাশেদ চাচা কিংবা পরম মমতাময়ী মেরী চাচিকে পছন্দ করে না এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া ভার।
তেমনি মুসা আর রবিনের মা-বাবা, কেতাদুরস্ত চালচলনে অভ্যস্ত ইংরেজ শোফার হ্যানসন, গোয়েন্দা ভিক্টর সাইমন, রকি বিচ পুলিশের প্রধান ইয়ান ফ্লেচার, 'কাকাতুয়া রহস্য' আর 'ঘড়ির গোলমাল'-এর সেই দুর্ধর্ষ দস্যু শোঁপা তিন গোয়েন্দা বইয়ের খুব জনপ্রিয় কয়েকটি চরিত্র। এদের অনেকগুলোই তৈরি হয়েছে থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের বিভিন্ন চরিত্রের আদলে। তবে কাহিনীর প্রয়োজনে প্রতিটি চরিত্রেই অনেক পরবর্তন এনেছেন রকিব হাসান।
ওহ, জিনা আর রাফিয়ানের কথাই যে বলা হলো না। এ চরিত্র দুটির উৎস কিন্তু থ্রি ইনভেস্টিগেটরস নয়, বরং এনিড ব্লাইটনের 'ফেমাস ফাইভ' সিরিজ।
সিরিজের প্রথম দিককার বইগুলোর জনপ্রিয় চরিত্র জর্জিনা জর্জ ইরিনকেই ঘষেমেজে বানানো হলো জর্জিনা পার্কার ওরফে জিনা। জিনা যখন ছেলে সেজে থাকে, তখন তার নাম জর্জ।
ভূত থেকে ভূতের সাহায্যে কোনো সন্দেহজনক চরিত্র কিংবা অন্য কোনো কিছুর খোঁজ পেতে শহরের ছেলেমেয়েদের সাহায্য নেয় তিন গোয়েন্দা। প্রথমে তিন গোয়েন্দার প্রত্যেকে তাদের পাঁচজন বন্ধুকে ফোন করে তারা কিসের খোঁজ করছে তা জানায়। যাদের ফোন করেছে তাদের প্রত্যেকে আবার পাঁচজন বন্ধুকে ফোন করে এটা জানায়।
এই বন্ধুরা ফোন করে তাদের পাঁচজন বন্ধুকে। এভাবে শহরের তাবৎ ছেলেমেয়ের কাছে পেঁৗছে যায় খবর। ভূত থেকে ভূতের সঙ্গে মিল আছে জুপিটার জোনসদের ঘোস্ট টু ঘোস্ট হুক আপের।
এখন বরং আমাদের তিন গোয়েন্দার জন্মের সময়টাতে ফিরে যাওয়া যাক। কিশোরদের উপযোগী একটি গোয়েন্দা কাহিনী লেখার প্রস্তাব সেবার প্রকাশক লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনকে দিয়েছিলেন রকিব হাসান।
'কুয়াশা' বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেবাতে তখন ছোটদের কোনো সিরিজ ছিল না। কাজেই রাজি হতে দেরি করলেন না কাজী আনোয়ার হোসেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালের আগস্টে প্রকাশিত হলো তিন গোয়েন্দার প্রথম বই 'তিন গোয়েন্দা'। টেরর ক্যাসলের সেই রোমহর্ষক অভিযানে পাঠক-পাঠিকা এতটা বুঁদ হয়ে যাবে, কিশোর-মুসা-রবিনকে এতটা আপন করে নেবে_এটা বোধ হয় খোদ রকিব হাসানও কল্পনা করেননি। পাঠক-পাঠিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাসহ চিঠির তোড়ে ভেসে গেল সেবা প্রকাশনী।
একে একে প্রকাশিত হলো 'কংকাল দ্বীপ', 'রুপালী মাকড়সা', 'ছায়াশ্বাপদ', 'মমি'। এভাবে হতেই থাকল।
থ্রি ইনভেস্টিগেটরস থেকে আইডিয়া নেওয়া হয়েছে বলায় তোমরা আবার ভেবে বসো না, এর মাধ্যমে তিন গোয়েন্দার লেখক কিংবা প্রকাশক সেবা প্রকাশনীর অবদানকে খাটো করে দেখছি আমরা। তিন গোয়েন্দার মতো এমন অসাধারণ একটি সিরিজের জন্ম তো আর এমনি এমনি হয়ে যায়নি। বিদেশি একটা কাহিনীকে বাংলাদেশের পাঠক-পাঠিকার মনের মতো করে উপস্থাপন করা কি চাট্টিখানি কথা! এই কঠিন কাজটাই সহজভাবে করেছেন রকিব হাসান।
শুধু তা-ই নয়, চরিত্র আর কাহিনীতেও এনেছেন অনেক পরিবর্তন। তাই তো তিন গোয়েন্দা নিয়ে বসলে উঠতে মন চায় না, নাওয়া-খাওয়া পর্যন্ত ভুলে যেতে চাও।
একদিন ফুরিয়ে গেল মূল থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের ভাণ্ডার। তখন কিন্তু ঝামেলা আরো বাড়ল। লেখককে এবার অন্য বিদেশি লেখকদের কাহিনী নিয়ে সেটিকে তিন গোয়েন্দার মতো করে উপস্থাপন করতে হয়েছে।
কাজটি তিনি এত চমৎকারভাবে করেছেন যে তিন গোয়েন্দার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। এভাবে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন গোয়েন্দা লিখে যান রকিব হাসান। তার পরই বিরতি টানেন লেখায়। এবার তিন গোয়েন্দার হাল ধরেন শামসুদ্দীন নওয়াব। এরই মধ্যে লেখক কাজী শাহনূর হেসেনের পরামর্শে ভলিউম যুগে প্রবেশ করেছে তিন গোয়েন্দা।
এখন ভলিউমের বাইরে আলাদা একক বই আর প্রকাশ হচ্ছে না।
শামসুদ্দীন নওয়াবের তিন গোয়েন্দা ভক্ত-পাঠকদের ধরে রাখল, এই বইগুলোয়ও তিন গোয়েন্দার সঙ্গে রাশেদ পাশা, মেরী চাচি, জিনা, রাফিয়ান, শুঁটকি টেরিসহ পছন্দের বেশির ভাগ চরিত্রকেই খুঁজে পেল তারা। শামসুদ্দীন নওয়াবের সৃষ্ট খুব জনপ্রিয় একটি চরিত্র কথা বলিয়ে কাকাতুয়া কিকো। এখন তিন গোয়েন্দার কাহিনী আসে এনিড ব্লাইটন, ক্রিস্টোফার পাইকসহ আরো অনেক লেখকের বই থেকে। গোয়েন্দা রাজু, রোমহর্ষক আর কাজী শাহনূর হোসেনের লেখা নীল-ছোটমামা সিরিজের কথা মনে আছে? এই সিরিজগুলোর সমস্ত বইই রূপান্তর করা হয়েছে তিন গোয়েন্দায়।
শামসুদ্দীন নওয়াবের লেখা ভারি পছন্দ পাঠকদের। তাই বলে রকিব হাসানকে কিভাবে ভোলে। তারা রকিব হাসানের লেখা তিন গোয়েন্দাও চায়। তাই শামসুদ্দীন নওয়াবের পাশাপাশি এখন আবার তিন গোয়েন্দা লিখছেন রকিব হাসান।
গণ্ডির মধ্যে বন্দি বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের নতুন এক জীবনের স্বাদ দিয়েছে তিন গোয়েন্দা।
তিন গোয়েন্দার সঙ্গে একটির পর একটি জটিল রহস্য ভেদ করে অনায়াসে ঝালিয়ে নেওয়া যায় নিজের বুদ্ধি। ঘরে বসেই বেড়িয়ে আসা যায় আমাজনের জঙ্গলের নরমুণ্ডু শিকারিদের গ্রাম কিংবা জলদস্যুদের দ্বীপ থেকে। বেলুনে চড়ে আকাশে উড়ে বেড়াতেও নেই মানা। আবার মুক্তার খোঁজে মুসা আমানের সঙ্গে ডুব দেওয়া যায় সাগরে। এমন রহস্য-রোমাঞ্চের জগতের হাতছানি কজনই বা এড়িয়ে যেতে পারে।
তাই তো তিন গোয়েন্দা অন্য সবার চেয়ে আলাদা, সবার এত প্রিয়।
দুইটি ই আমার খুব প্রিয় । জানানর লোভ সামলাতে পারলাম না । ক্রেডিট কালের কণ্ঠের । কালের কণ্ঠ থেকে সংগ্রহীত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।