aurnabarc.wordpress.com
টিনটিন । অস্থির সুন্দর একটা কাবলি বেড়াল। বেড়ালটা ছিল বন্ধু তৌসিফের বড় আপুর। ওটাকে বছর খানেক আগে কাঁটাবন থেকে কিনে আনা হয়েছিল। বজ্জাত তৌফিস আপুকে চেতানোর জন্য প্রায়ই বলতো আপু তোমার থেকেও ইয়ে মানে বেড়ালটা ...।
আপু রেগে গম্ভীর হলেও কিছু বলতেন না। মাস দুয়েক আগে আপুর বিয়ে হয়ে যায়। তারপর সরাসরি সুইডেন। বাংলাদেশে হলে হয়তো আপু বেড়ালটাকে কখনোই একা ফেলতে পারতেন না। সব জায়গায় সাথে করে নিয়েই যেতেন।
হয়েছিলোও তাই। কিন্তু সুইডেনে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ কোথায়। তাইতো টিনটিন সবার কাছ থেকে এক্কেবারেই হারিয়ে গেল। চলে গেল না ফেরার দেশে
আপু শ্বশুর বাড়িতে চলে যাওয়ার দিন দুয়েক পর আমি আর তৌসিফ খেয়াল করলাম বেড়াল ব্যাটা কেমন যেনো চুপসে গেছে। চোখগুলো ফোলা ফোলা।
তৌসিফ যে কিনা বেড়াল দেখলেই ঘিন ঘিন করে এগিয়ে গেল ওটাকে ধরতে। কিন্তু বেড়াল সাহেব ঘৃণাভরে তৌসিফকে ফিরিয়ে দিলেন তার থাবা বের করে।
ব্যস্ততা ছিল ফিরে আসলাম। পরের দিন তৌসিফের আম্মা ফোন দিয়ে বললেন তোমার বন্ধু মারাত্মক অসুস্থ একটু আসতে হবে। আমি নিজেই দোতলা উঠতে হাফাইয়া যাইতেছি।
বেশ কয়েকটা টিউটোরিয়াল বাদ দিয়েছি। ক্লাসের পড়ালেখা আর আমার মধ্যে ফারাক্কা বাধ তুলে দিয়েছি। তবুও অনেক কষ্টে গেলাম। গিয়ে দেখি তৌসিফের অবস্থা সংঙিন। কিন্তু সোফার কোনায় একটা দৃশ্য চোখ এড়ালো না।
কাতর হয়ে বসে আছেন চির পরিচিত বাঘের মাসি টিনটিন। আমি সাহসে ভর করে বেসিনের কাছ থেকে টাওয়েল নিয়ে ওকে ধরতে গেলাম কোনো বাধা দিল। বুঝলাম সে শক্তি বেটার নেই।
সিলেটের জৈন্তাপুরে খাসিয়া মন্ত্রির বেড়ালের থাবা খাওয়ার পর থেকে চ্রম ভয় পাই এই বাঘের খালাম্মাদের। তবুও অনেক মায়া হলো টাওয়েল ফেলে সরাসরি বেটাকে কোলে নিলাম।
দেখি অনেক কষ্টে নি:শ্বাস নিচ্ছে। জ্বরে কাতরাতে থাকলেও উঠে বসেছে তৌসিফ। বলে চল হ্রামি ডাক্তারের লগে দেখা করি। সেই সাথে এই হ্লারে আপুর বাসায় রেখে আসি।
কুন হালা কি কয় যায় আসে না।
যেই কথা সেই কাজ। তৌসিফ চেয়েছিল কার্টুনে করে নেবে। কিন্তু আমি কোলে নিলাম তুলতুলে বেড়ালটাকে। এরপর সোজা মিরপুর-১০ থেকে উত্তরা। বেল বাজতে দুলাভাইয়ের ছোটবোন দরজা খুললো।
আমাদের দুজনকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। জ্বরাক্রান্ত তৌসিফকে দেখ মনে হয় তিনমাস ধরে জন্ডিসে ভুগছে, আর আমি সব সময় মনে হয় কোন গাঞ্জুইট্যা হালায় জীবনে ঘুম কি জিনিস চোখে দেখে নাই। সেই সাথে ঐ সিন্দাবাদের চেলা বেড়াল।
এবার অবাক হওয়ার পালা। প্রায় তিন দিন না খেয়ে চুপসে থাকা টিনটিন অনেকটা লাফ দিল আমার কোল থেকে।
দৌড়ে হারিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর বের হলেন আপু। হতচ্ছাড়া তার কোলে। ঐ ঝিমানি ভাব অসুস্থতা সব ছুটে গেছে ততক্ষণে। পরে শুনলাম বদমাশটা গিয়ে একবাটি মতো কাস্টার্ড সাবাড় করেছে আপুর যেটা নাকি আমাদের প্রাপ্য ছিল।
যাক তবুওতো ওটাকে বাঁচানো গেল।
এদিকে পরদিন পরীক্ষা, আর হাফরের মতো উঠানামা করছে ফুসফুস। মনে হয় ভাকুয়্যাম ক্লিনার ভেতরের সব বাতাস বের করে নিয়েছে। ভাবছি কখন পালানো যায়। পাশের বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম।
কিন্তু চাইলেই কি মন ভরে নি:শ্বাস নেয়া যায়। ঘ্যাস ঘ্যাস করে দুবার ইনহেলার চালান দিলাম ফুসফুসে। খুব একটা লাভ হলো বলে মনে হলো না। তাই কোনো মতেই ডিনার পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না।
তারপর ফিরে এসেছিলাম।
ভুলেই গেছিলাম টিনটিনের কথা। বিশেষ করে অসুস্থ থাকা আর পরীক্ষা চাপে ওদের বাসাতেই যাওয়া হয়না অনেক দিন। কিন্তু আজ মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল যখন তৌসিফের কাছে শুনলাম বেড়ালটা মারা গেছে।
সত্যি একটা বেড়ালের জন্যও অনেক খ্রাপ লাগে । হায়রে মানুষ বেড়াল যে তোর থেকে অনেক অনেক বেশি কৃতজ্ঞ হয়।
প্রিয় ব্যক্তিকে ছেড়ে থাকতে পারেনা। টিনটিন এটা দেখিয়েছিল। টানা দুদিন না খেয়ে ছিল। অবশেষে ফিরে গেছে যথাস্থানে। কিন্তু বেইমানি করেনি এতটুকু।
কিন্তু সবথেকে ইতর জীব মানুষ তার জন্য উপকারী মানুষটিরই ক্ষতি করে। বিশেষ করে সেই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় যখন প্রতিহিংসার বশে মানুষ পশুদের অপমান করার মতো আচরণ করে। চরিতার্থ করে তার ঘৃণ্য লালসা। এই এলিজি উৎসর্গ করছি অসাধারণ সুন্দর আর মায়াবী বেড়াল টিনটিনের জন্য।
বিবর্ণ রাত, বর্ণচোরা মানুষ আর বর্ণহীন চিন্তা কেমন যেনো এলোমেলো করে দেয় সবকিছু।
সত্য মিথ্যার কাঁটাতারের বেড়াটাই কেমন যেনো দুর্ভেদ্য হয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে জীবনকে। জীবন্ত প্রহেলিকায় না জানি এ কোন বিষাদ বর্ণন; এভাবেই বয়ে চলে মানুষের জীবন।
আর পশু। এর ভালো না হলেও অন্তত খারাপ কখনোই নয়।
ডিসক্লাইমার: ওর আসল ছবি খুঁজে পাচ্ছি না।
তাই প্রতীকী একটি ছবি দিলাম। আপু ব্লগে এই লেখা দেখে মন খ্রাপ করবেন না প্লিজ। তৌসিফের নিষেধ সত্ত্বেও পোস্ট দিলাম। কারণ আমারও অনেক খারাপ লেগেছে টিনটিনের জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।