আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি
এই ব্লগসাইটটিতে আমি নতুন। ভেবেছিলাম এই সাইটের সাথে আমার পরিচয়ের বিষয় নিয়েই আমার প্রথম ব্লগটি লিখব, কিন্তু একটি জরুরি বিষয় সামনে এসে পড়ায় এটি মুলতবি থাকল। যে বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকরষণ করতে চাচ্ছি সে বিষয়টি হল কম্পিউটারে বাংলা, ইউনিকোড বাংলা।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা। উইকিপিডিয়া অনুসারে- প্রকাশ-সংখ্যার ভিত্তিতে এটি ভারতে বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় দৈনিক।
কলকাতা, নয়া দিল্লী ও ভারতের অন্যান্য শহরে নিয়মিত এটি দশ লক্ষেরও অধিক সংখ্যায় প্রচারিত হয়। ইন্ডিয়ান রিডারশিপ সার্ভে অনুসারে পত্রিকাটি দেড় কোটিরও বেশি মানুষ পাঠ করেন।
এই দৈনিকটির একটি ওয়েব সংস্করণও আছে। এরকম একটি বিখ্যাত পত্রিকায় নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা হয়েছে এবং পত্রিকাটির ওয়েব সংস্করণেও তা প্রকাশিত হয়েছে এবং সার্চ করলে তা পাওয়া যাওয়ার কথা। আপনার ওয়েব ব্রাউজারে রবীন্দ্রনাথ লিখে সার্চ দিন, লাখে লাখে পাতার ঠিকানা আসবে, কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েব অ্যাড্রেস একবারও আসবে না, তার মানে হল রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বা রবীন্দ্রনাথের কোন লেখা যদি আনন্দবাজারে কখনও প্রকাশিত হয়ে থাকে এবং এই পত্রিকার আর্কাইভে তা যদি থেকেও থাকে এবং এ আর্কাইভের কন্টেন্ট (বা কন্টেন্টের কন্টেন্ট ) যদি সার্চ ইন্জিনে সাবমিট করা থাকেও তবু আপনি তা খুঁজে পাবেন না।
কারণ ? সার্চ ইন্জিনগুলি নন-স্ট্যান্ডার্ড বাংলাকে টেক্সট স্ট্রিং হিসেবে সোজা বাংলায় মনুষ্য-বোধগম্য শব্দ হিসেবে চিহ্নিত করে না। আর আনন্দবাজার পত্রিকা ইউনিকোডে তার ওয়েবপেজ তৈরি না করায় তা সার্চ ইন্জিনের চোখে ধরা পড়ে নি।
বিষয়টি আরেকটু কাছের নজির দিয়ে বলি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার কর্মব্যস্ততার কারণেই প্রতিদিন অনেক খবরের শিরোনাম হন। যে কোন সার্চ ইনজিনে তার নাম বা প্রধানমন্ত্রী লিখে সার্চ দিলে দেখবেন সার্চ রেজাল্টে বাংলাদেশের প্রায় সকল পত্রিকার ওয়েব অ্যাড্রেস আসবে একটি পত্রিকার ওয়েব অ্যাড্রেস নিশ্চিতভাবে আসবে না। সেটি হল দৈনিক ইত্তেফাক, কারণ? ঐ একই, ইত্তেফাক ইউনিকোড বাংলায় প্রকাশিত হয় না।
ইউনিকোড স্ট্যাণ্ডার্ড অবলম্বন না করার পরিণতি কী হতে পারে তা কি ইত্তেফাক কিংবা আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেছে? এর পরিণতি হারিয়ে যাওয়া, হারিয়ে ফেলা। বাংলা ভাষার প্রথিতযশা ব্যক্তিগণের রচিত বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য রচনার বিশাল ভাণ্ডার হওয়া সত্ত্বেও আনন্দবাজার পত্রিকাকে ওয়েবের জগতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। খুঁজে পাওয়া যাবেনা ইত্তেফাককেও দেশের নানা খবরের ধারক ও প্রচারক হওয়া সত্ত্বেও। আনন্দবাজার বা ইত্তেফাককে খুঁজে না পাওয়ার অর্থ হল তাদের কোলে জন্ম নেওয়া অসংখ্য রচনাবলীও খুঁজে না পাওয়া। বিষয়বস্তুকে যতই ডিজিটাল আর্কাইভভুক্ত করা হোক না কেন প্রবেশযোগ্যতা (accessibility) না থাকলে তা নিষ্প্রাণ ডিজিটাল 'র' ডাটা (বা শাঁসহীন শুকনো ডাঁটা) ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর এই প্রবেশযোগ্যতার পূর্বশর্ত হল, প্রযুক্তিযোগ্যতা। বাংলা ভাষায় নির্মিত ডকুমেন্টকে স্থায়ী এবং প্রবেশযোগ্য (accessible) ও অনুসন্ধানে-প্রাপ্তিযোগ্য (achievable ) হতে হলে তা অবশ্যই ইউনিকোড-কম্প্লায়েন্ট তথা ইউনিকোড-প্রযুক্তিযোগ্য হতে হবে। এটি করতে পারা না পারার ব্যাপার নয়- বিষয়টি হল, করতে চাওয়া না চাওয়ার বিষয়।
আমাদের ইত্তেফাক নন-স্টাণ্ডার্ড হলেও যে কোন ব্রাউজারেই কম্পিউটারে নির্ধারিত ফন্ট থাকলে ইত্তেফাক পড়া যায় , কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকা কেবল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে এবং নির্ধারিত টেকনোলজি (যা এক দশকের পুরনো) দিয়ে পড়া যায়। আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করেও কোন ফল না পেয়ে একদল স্বেচ্ছাসেবক আনন্দবাজারের একটি ইউনিকোড ভার্সন চালু করেছেন, এটি পৃথক কোন ওয়েবসাইট নয়, বরং আনন্দবাজারের প্রচলিত ওয়েবসাইটেরই ইউনিকোডে রেন্ডারিং।
সার্চের মাধ্যমে আনন্দবাজার পত্রিকার কোন পেজ পেলে দেখবেন সেটি ইউনিকোডে রূপান্তরিত একটি পেজ। বিষয়টি আশংকাজনক।
বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণভোমরা। এর উন্নতি, অগ্রগতি, প্রচার ও প্রসারে আমাদের সবারই কিছু না কিছু করার আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।