রাজধানীর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম আহমেদের হত্যাকা-ের ঘটনায় জব্দ করা পিস্তলের ও গুলি পরীক্ষায় সিআইডির প্রতিবেদনে পিস্তলের ট্রিগারে স্পষ্ট কারও আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। এর ফলে প্রকৃত খুনি চিহ্নিত করার ব্যাপারে বিপাকে পড়েছে মামলাটির তদন্ত সংস্থা ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ)। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ও ব্যালেস্টিক পরীক্ষায় হত্যার কথা বলা হলেও কোন আসামিকে গ্রেফতার না করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের স্ত্রী রিনা ইসলাম। তবে ব্যালাস্টিক রিপোর্টে পিস্তলের গায়ে খুনির হাতের ছাপ শনাক্ত না হওয়ায় জটিলতা বাড়লেও সাবলীল তদন্ত কাজে প্রকৃত খুনি বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মাহবুবুর রহমান জানান, তারা এ জটিলতা নিরসনে দু'একদিনের মধ্যেই আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
আদালত থেকে সময় নিয়ে হত্যা মামলা দায়েরের আগে আরও কয়েকদিন তদন্ত চালাতে চান তারা। তিনি বলেন, এমপি শাওনের পাজেরো গাড়ি ও ইব্রাহিমের শরীর থেকে নেওয়া রক্তের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, অস্ত্র ও গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট ও শেরেবাংলা নগর থানার এসআই ও ইব্রাহিমের অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার রিপোর্টসহ চারটি রিপোর্ট তাদের হাতে পেঁৗছেছে। সবগুলো বিষয় তারা আদালতকে অবহিত করবেন।
এদিকে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিমের স্ত্রী রিনা ইসলাম বিলাপ করে বলেন, একের পর এক যেভাবে খুনিকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা চলছে, তাতে মনে হচ্ছে স্বামী হত্যার বিচার পাব না। তিনি বলেন, এমপি শাওনকে বড় ভাইয়ের মতো বিশ্বাস করে ইব্রাহিম বাপের জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল সেই শাওন তার ঘাতক হলো সেটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।
আল্লার কাছে ছাড়া আর কারও কাছে বিচার চাওয়ার নেই। ঘটনার শুরু থেকে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের রহস্যজনক ভূমিকায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। শুরু থেকেই পুলিশ ও গোয়েন্দারা রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, এমপি শাওনকে গ্রেফতারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অন্য কাউকে গ্রেফতারে বাধা না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদের গ্রেফতার করছে না।
গত ১৮ আগস্ট ইব্রাহিমের ছোট ভাই মাসুম আহমেদ বাদী হয়ে এমপি শাওনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে ইব্রাহিমের মৃত্যু ও অপমৃত্যুর মামলার বিষয়ে অবহিত করতে আদালত পুলিশকে নির্দেশ দেন। ১৭ আগস্ট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্ত কার্যক্রম ডিবি'র হাতে ন্যস্ত হয়। এ পর্যায়ে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ডিবি'র ইন্সপেক্টর মশিউর রহমানকে। তদন্তের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবি'র উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মনিরুজ্জামানকে। সর্বশেষ গত বুধবার শেরেবাংলা নগর থানার এসআই ও অপমৃত্যুর মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আজিমুদ্দিন আদালতের কাছে জবাব দিয়েছেন।
এমপি শাওনের পিস্তল, গুলি ও গাড়িসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে ডিবির কাছে হস্তান্তর করেন। পরে গত ইব্রাহিমের খুনিকে শনাক্ত করতে গত ১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার ডিবি থেকে অস্ত্র ও গুলির ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করেন। এক সপ্তাহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত বুধবার সিআইডি থেকে অস্ত্র ও গুলির ব্যালাস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৩ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে নিহত হন যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম। ঘটনার পরপরই ইব্রাহিমের স্বজনদের না জানিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে নিজের পাজেরো জিপের চালক কামাল হোসেন কালাকে দিয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
পরদিন স্বজনরা থানায় হত্যা মামলা করতে গিয়ে জানতে পারেন ইব্রাহিমের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় শাওনের গাড়িচালক বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন। তখন থেকেই ইব্রাহিমের স্বজনরা অভিযোগ করতে থাকেন ইব্রাহিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সে সময় পুলিশ তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।