আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে আস্তিক আর কে নাস্তিক এই বিচারের ভার কার???

ধর্মীয় বিচারে মানুষের নানা পরিচয়, নানা ধর্মের নানা মানুষ, কেউ মুসলিম, কেউ হিন্দু, কেউ ক্রিশ্চান, কেউ বৌদ্ধ ... আরও বিভাজন করা যায় যেইটা বর্তমান সময়ে বেশ আলোচিত। সেটা হইলো আস্তিক, নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদ অমুক তমুক। কেউ আস্তিক হইলে তো মিটে গেল, তারে নিয়ে তেমন সমস্যা দেখিনা। সমস্যা হল নাস্তিকদের নিয়ে। নাস্তিক কে জবাই করা হইলেও কেউ কেউ হাত তালি দিচ্ছেন যে নাস্তিক মরলে প্রবলেম নাই, আরও নাস্তিক হত্যা করার, প্রতিরোধের পবিত্র(!) আহ্বান আসছে ইসলামের কিছু তথাকথিত অনুসারীদের কাছ থেকে।

বিশেষ করে নাকি শাহবাগ হইতেসে নাস্তিকের আখরা, তো আর কোন কিছু বিবেচনা করার দরকার নাই। আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছিনা, সেইটা হল একজন যদি নিজেকে নাস্তিক ঘোষনা করে, তাহলে আল্লাহ নিজে তো তাঁর উপ্রে বাজ ফেলেন না। সূর্য কে বলেন না তার জন্য আলো বন্ধ করতে, নদী তার জন্য শুকিয়ে যায়না, বৃষ্টি আর সবার মত একজন নাস্তিকের ফসলেরও হাসি ফোটায়, একজন নাস্তিক হলে আল্লাহ তার জন্য ভবিষ্যৎ বংশধর হারাম করে দেন না, সন্তানের মায়া তাকেও দেয় প্রজন্ম রেখে যাওয়ার সান্ত্বনা। একজন নাস্তিকের জন্যে আল্লাহ তাঁর কোন নেয়ামত ও রহমতের দ্বার বন্ধ করেন না,তাহলে আমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে কিভাবে একজন নাস্তিকের গলায় ছুরি চালানোকে সমর্থন দেই? যে সন্তান এতিম হল, যে নারী বিধবা হল, তারা আল্লাহর বান্দা না? কোন যুক্তিতে এই জুলুম ইসলামে জায়েজ? আমি একটা সহজ জিনিস যেটা বুঝি সেটা হল কে আস্তিক আর কে নাস্তিক সেইটা আল্লাহর সাথে তাঁর বান্দার হিসাব । তুমি আমি আমরা কোন অধিকারে এই হিসাবে নাক গলাই? যার যার হিসাব তার তার আল্লাহ কে ঠিকই দিতে হবে, তাহলে আমরা অন্যদের হিসাবে নাক গলানোর অধিকার রাখি? কিন্তু একজন যদি আমার সাথে মিথ্যা বলে, আমাকে হত্যা করতে আসে, আমার সম্পদ লুট করতে চায়, তাহলে কিন্তু এইটা আর শুধু এরকম না যে ওই খারাপ লোক যে কাজটা করছে তা শুধু তার সাথে তার আল্লাহর হিসাব।

এইখানে কিন্তু আমি তুমি আমরা কথা বলব, তাকে যথোপযুক্ত শাস্তি দেব। এখানে সে আস্তিক না নাস্তিক তা আমাদের দেখার দরকার নেই। কারন আল্লাহ বলেছেন যে কোন বান্দা যদি অন্য কোন বান্দার হক নষ্ট করে, যতক্ষন পর্যন্ত না ঐ বান্দা অপরাধীকে ক্ষমা না করছেন, স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করবেন না। আমরা আমাদের জীবনের আর কোন ক্ষেত্রে কিন্তু এই আস্তিক নাস্তিকের ভেদাভেদ মেনে চলিনা। জুকারবার্গ নাস্তিক- তাই বলে ফেসবুকে তো কোন প্রব্লেম হয়না, অসুখে পড়লে কেউ চিন্তা করেনা ডাক্তার আস্তিক না নাস্তিক, কম্যুনিস্ট চায়নার তৈরি টুপি পড়ে নামাজ আমরা হরদম পড়ে যাচ্ছি, তাতে নামাজের কোন সমস্যা কারও হচ্ছে বলে এরকম আশঙ্কা কখনও শুনিনি, হজ্জে যাওয়ার সময় কেউ কি চেক করে নেয় পাইলট মুসলিম না হিন্দু না ক্রিশ্চান না ইহুদী না নাস্তিক? শুধু নাস্তিক শাহবাগে গেলেই জাত গেল জাত গেল বলে চিৎকার তোলে কারা? তাহলে একজন দেশের জন্যে জীবন দেওয়া নাস্তিকের জানাজায় লাখো মানুষ সমবেত হলে কারা এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে? কাদের গায়ে আগুন ধইরা যায়? একটা খুব সহজ উদাহরণ হল কেউ যদি বলে যে আমি সূর্য বিশ্বাস করিনা, আসলে কোন সুর্য নেই, আকাশে যেইটা দেখা যায় সেইটা ফাঁকি।

যদি বলে মানলাম চাঁদ আছে, চাঁদে মানুষ যাওয়ার ছবি দেখছি, কিন্তু সুর্য নাই, কারন সূর্যে এখনও মানুষ যাইতে পারে নাই। তাহলে ওই মানুষটা সম্পর্কে আমাদের ধারনা কি হবে? আমরা কি তাকে নিতান্তই করুনা ভরে পাশ কাটাব না নাকি ছুরি হাতে বেরিয়ে পড়বো জবাই করতে? প্রথমটাই করব। এখন কেউ যদি কেউ বলে আল্লাহ নাই তাইলে কখন কেউ ছুরি হাতে বেড়িয়ে পড়ে? যে ছুরি হাতে বের হয় তাকে গালি দিলেও বুঝতাম, কিন্তু কেউ যদি আল্লাহ বা নবিজীকে গালি দেয় তাহলে তার বিচার আল্লাহকেই করতে দেন। আমার এক স্যারের কাছ থেকে অনেক আগে একটা হাদীস শুনেছিলাম, আল্লাহ তাঁর বান্দার সাথে কি বিচার, কেমন বিচার করবেন সেইটা শুধু আল্লাহই শেষ পর্যন্ত জানেন। নিজেকে খুব পরহেজগার ভাবা কেউ আল্লাহর বিচারে যেতে পারে জাহান্নামে, আবার পৃথিবীর খারাপ জানা একজন মানুষও কোন না জানা ভালো কাজে পেয়ে যেতে পারে ক্ষমা।

রাজীব নাস্তিক না আস্তিক ছিল সেই বিচার আর আমাদের হাতে নাই, সে তো তাঁর কাছেই গেছে, কাকে কি গালী দিয়েছে সেই হিসাব তো তাকেই দিতে হচ্ছে। ছুরি হাতে কল্লা কাটে ভন্ড বান্দার দল, সমাজে আস্তিক নাস্তিক বলে বিভেদ তৈরি করে তারাই যারা ধার্মিক তারা নন, তারাই বিভেদ তৈরী করে যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, যারা নিজেদের পাপ ধর্মের ঢাল দিয়ে ঢাকতে চায়। একজন নাস্তিক, আল্লাহ নবীকে গালি দেওয়া, ব্যঙ্গ করা কেউ ইসলামের যতটুকু ক্ষতি করতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতিকর এই সব ধর্ম ব্যবসায়ী ভন্ডের দল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.