আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচারের বাণী...


ইটিভির সাংবাদিক বন্ধু অঞ্জন রায় টেলিফোনে বললেন, তারই আত্নীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের করুণ কাহিনী। আমি তাকে বললাম, এটি লিখে মেইল করতে। অঞ্জন রায়ের অনুমতিক্রমে তার লেখাটি এখানে প্রকাশ করা হলো: আমার কাকা শহীদ জয়ন্ত কুমার রায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক নিহত হন। মৃত্যুর পরে পাবনা শহরের কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর নাম শহীদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার বদলে তাঁর নাম শত্র“ (অর্পিত) তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করায়। এর পরে থেকেই আমরা বিগত বিভিন্ন সরকারের কাছে এই বিষয়ে ন্যায় বিচার চেয়েছি।

এর ধারাবাহিকতায় আমি গত বছর ১৫ এপ্রিল এই দাবীর কথা প্রধান উপদেষ্টার দফতরে জানিয়েছি। তার পরেই পাবনার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিষয়টির তদন্ত করে সমাধান করার জন্য। জেলা প্রশাসন বিস্তারিত তদন্ত করে আমার এই দাবীর সত্যতা পেয়ে তা প্রধান উপদেষ্টার দফতরে জানায়। প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে দ্রুত শহীদ জয়ন্ত কুমার রায়ের উত্তরাধীকারীর কাছে এই সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য গত ১২ জুন নির্দেশ দেওয়া হয়। * এর পরেই জেলা প্রশাসন বিষয় নিষ্পন্ন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ৬০ দিন সময় প্রার্থনা করেন।

তারা গত ২৮ আগস্টে সম্পদ হস্তান্তর বিষয়ক একটি পত্র প্রধান উপদেষ্টার কর্যালয়েও পাঠান। প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে পাবনা জেলা প্রশাসনের ভুমি মন্ত্রনালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে পাঠানো পত্রটিকে 'দায়সারা গোছের' উল্লেখ করে এই ধরনের 'আনফেয়ার' কার্যক্রম 'কারেকশন' করার বিষয়ে সরকারেরই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে লিখেছেন। কিন্তু তারপরেও অর্পিত সম্পত্তি হস্তান্তরের নানা জটিলতার অজুহাতে থেমে গেছে সবকিছূ। পাবনা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে আজো পর্যন্ত এই বিষয়ে আমাকে কোন কিছুই জানানো হয়নি। * পাবনা জেলা প্রশাসন আমাকে কোন কিছু অবহিত না করলেও গত ২১ জানুয়ারী থেকে উক্ত জমির দখলদার মোশাররফ হোসেন (তাদের লিজ এ বছর নবায়ন না করার ফলে তাদের উক্ত স্থানে কোন অবস্থান না করার কথা হলেও) উক্ত জমিতে নির্মাণকাজ শুরু করেন।

আমি পাবনার স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়টি জানানোর পরে তারা বিলম্বে ব্যাবস্থা নিয়ে দখলদারদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করেন। এর আগে আমি পাবনার জেলা প্রশাসনকে বারংবার জানিয়েছি, যেহেতু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশে শহীদ জয়ন্ত কুমার রায়ের জমির সকল লিজ বাতিলের কথা বলা হয়েছে, সেহেতু উক্ত জমির সকল দখলদারদের উচ্ছেদ করা হোক। কিন্তু জেলা প্রশাসন আমার সেই কথাতে গুরুত্ব দেয়নি। চলতি বাংলা বছরে নতুন করে লিজ না দেওয়া হলেও দখলদারেরা উক্ত জমি দখলে রেখে সাবলিজ দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। এমনকি এবারেও দখলদারেরা কাজ শুরু করার পরে সংবাদপত্রে তা প্রকাশ হওয়ায় অবশেষে পাবনা জেলা প্রশাসনের টনক নড়েছে।

* পাবনা পৌরসভার মৃত্যু নিবন্ধন বইতে ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর তারিখ নিবন্ধিত করে লেখা আছে, তিনি পাকিস্তানী সৈন্য কর্তৃক নিহত হয়েছেন। সুতরাং তাঁর সম্পদ অর্পিত হিসাবে কোনমতেই তালিকা ভূক্ত হতে পারে না। কিন্তু প্রতিপক্ষ জানে কোনো মতে তালিকাতে ঢোকাতে পারলেই সেই সম্পত্তি লিজ নেওয়ার মাধ্যমে গ্রাস করা যায়। তাই তারা সেই কৌশলের আশ্রয় নিয়েই আমাদের দীর্ঘকাল বঞ্চিত করে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, যে মানুষটি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে, তা প্রমানিত হওয়ার পরে কোনো মতেই শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের অজুহাতে তার জমি আটকে রাখা বেআইনী এবং অমানবিক।

তৃতীয়ত, গত ৩৬ বছর ধরে জমে থাকা আমাদের বেদনা সবাই নিশ্চয়ই অনুভব করবেন। আপনাদের সবার সহায়তা পেলে নিশ্চয়ই আমি সুবিচার পাবো। আইনের মারপ্যাঁচে আটকে থাকবে না আমার এই দাবী। আন্তরিক শ্রদ্ধাসহ-- অঞ্জন রায়, ইটিভি, ঢাকা। (ছবি: রিকশা পেইন্টিং, ন্যাট জিও, ১৯৭২)
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.