অজানাকে জানতে ছুটছি অবিরাম...!
বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস রপ্তানি করছে আমেরিকা
আফগান যুদ্ধের ৯২ হাজার গোপন সামরিক দলিল ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে আলোচিত উইকিলিকসের কর্মকান্ডে বিপাকে পড়েছে খোদ ওবামা প্রশাসন। তাই আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানে এমন তথ্য প্রকাশে বিরত থাকতে আনুষ্ঠানিকভাবে উইকিলিকসকে অনুরোধ করেছিল পেন্টাগন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এবার সিআইএর গোপন দলিল ফাঁস করে আবারো বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় তুলেছে উইকিলিকস। নতুন প্রকাশিত এ দলিলে আমেরিকাকে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
‘বিদেশিরা আমেরিকাকে যদি সন্ত্রাস রপ্তানিকারক হিসেবে জানে তাহলে কেমন হবে?’... শিরোনামে ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৈরি তিন পাতার ওই রিপোর্টে উল্লেখ আছে, সারা বিশ্বে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী ঘটনার সঙ্গে আমেরিকানদের অংশগ্রহণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। রিপোর্টে একাধিক সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে আমেরিকান নাগরিকের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’র নামে আমেরিকার আগ্রাসন বরাবরই সমালোচিত। কিন্তু এবার সে সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়ে তাকে সত্যিতে পরিণত করেছে উইকিলিকস। এরআগে ২৩ জুলাই পৃথিবীর ইতিহাসে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক গোপন তথ্য প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগায় ওয়েবসাইটটি।
বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মাঝে তখনই নিন্দার ঝড় ওঠে। আর ইমেজ সঙ্কটে পড়ে ওবামা প্রশাসন ও আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। তাই আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানে এমন কোনো তথ্য না প্রকাশের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উইকিলিকসকে অনুরোধ করেছিল পেন্টাগন। কিন্তু কাজ হয়নি বরং এবার সিআইএর এমন একটি গোপন দলিল প্রকাশ করেছে উইকিলিকস যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান নড়বড়ে করে তুলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সিআইএর ওই গোপন দলিলে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, ‘আমেরিকা নিজেই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস রপ্তানি করছে।
’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা রয়েছে সারা বিশ্বে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী ঘটনার সঙ্গে আমেরিকানদের অংশগ্রহণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিবরণীতে একাধিক সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে আমেরিকান নাগরিকের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, সিআইএর বিশেষ বিভাগ ‘রেড সেল’ থেকে পাওয়া দলিলপত্রগুলো তেমন আহামরি কিছুই না।
এ ব্যাপারে সিআইএর ওয়েবসাইটে বলা হয়, রেড সেল বিভাগটি নাইন ইলেভেনের পর আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর কাজ ছিল, এমন কিছু বিবরণী তৈরি করা যা সাধারণ মানুষের ভাবনাকে প্ররোচিত করতে পারে।
ঘটনা মূল্যায়নের কোনো দায়দায়িত্ব তাদের দেয়া হয়নি। সিআইএ মুখপাত্র জর্জ লিটল বলেন, বিশ্লেষণধর্মী বিবরণীগুলো নিঃসন্দেহে রেড সেল সংস্থা থেকেই নেয়া হয়েছে। আর তথ্যগুলো তৈরি করা হয়েছে সাধারণভাবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে এবং ঘটনাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে।
রিপোর্টে বলা হয়, আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে অথবা দেশের বাইরে আমেরিকান অর্থায়নে ইহুদি, মুসলিম এবং আইরিশ-আমেরিকান সন্ত্রাসীদের দিয়ে অনেক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘাটানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রিপোর্টের একটা বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, চলমান বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে এখন আমেরিকা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর ধারণা পাল্টে যেতে পারে।
আলোচিত এ রিপোর্টে; বিশেষ করে আমেরিকার ভেতরেই আমেরিকান বংশোদ্ভূত মুসলিম জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান হামলার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। সেই সঙ্গে আমেরিকার অভ্যন্তরে উদ্ভূত সন্ত্রাস দেশটির সীমানার বাইরে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে, যারা আমেরিকান নয় তাদের হামলা করছে। আবার এসব সন্ত্রাসীর মধ্যে শুধু মুসলিমই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীও আছে।
রিপোর্টের উপসংহারে বলা হয়েছে, নিজেই সন্ত্রাস রপ্তানি করছে আমেরিকা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের যদি আমেরিকা সম্পর্কে এমন ধারণা তৈরি হয়, তাহলে তারা সন্ত্রাসী আটক, বিনিময় অথবা সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আমেরিকাকে সহায়তা করতে অনীহা প্রকাশ করবে, যা আমেরিকার জন্য সুখকর নয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ জুলাই আফগান যুদ্ধে আমেরিকান সেনাদের অবৈধ কার্যকলাপের ৯২ হাজার গোপন সামরিক দলিল নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে বিশ্বে হইচই ফেলে দেয় উইকিলিকস। ওই সব দলিলে স্পষ্টই আমেরিকান সেনাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযানের প্রমাণ পাওয়া যায়। শিগগির আরো ১৫ হাজার গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে ওয়েবসাইটটি। এর মধ্যে ইরাকযুদ্ধের বেশ কিছু দলিল রয়েছে বলে জানা গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।