সম্প্রতি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বিকাশ এত দ্রুত হয়েছে যে, বেশকিছু সূচকে তা পাশের দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। মানসিক স্বাস্থ্য, নারী শিক্ষা, আয়ুষ্কাল ইত্যাদি সূচকে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতির পেছনে নারীদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবুও নারীরা এ দেশে ও সমাজে অধিকার প্রশ্নে পিছিয়ে আছেন অনেক।
গতকাল মঙ্গলবার দ্য ইকোনমিস্টের অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এ দেশের নারীরা অনেক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তবে বৈষম্যের দেওয়াল ভেদ করার ক্ষেত্রে ক্রমে পিছিয়ে পড়ছেন।
ইকোনমিস্টের ‘হু ওনস বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের দুই হাজার ডলারের তৈরি পোশাক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ শ্রমিকই নারী।
১৯৯১ সাল থেকে দেশ শাসন করছেন নারী প্রধানমন্ত্রীরা। এ ধরনের রেকর্ড বিশ্বের আর কোনো দেশের নেই।
তার পরও এ দেশে ভূমি মালিকানা নির্ধারিত থেকেছে লিঙ্গ পরিচয়ের মাধ্যমে। জমির মালিকানা হিসাব করলে ‘দেশটি কার?’ এ প্রশ্নের জবাব মিলে খুব সহজেই।
বাংলাদেশের সম্পত্তির বণ্টন ঠিক কী ধরনের বৈষম্যমূলক, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।
সরকারের হাতেও লিঙ্গভিত্তিক সম্পত্তির মালিকানার কোনো হিসাব নেই। তবে একটি বেসরকারি হিসাবে জানা গেছে, সম্পত্তিতে নারীদের মালিকানা খুবই কম। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাব মতে, দেশের কৃষিজমির মাত্র ৩.৫ শতাংশের মালিক নারী। ২০ বছর পরে, কৃষিজমিতে নারীদের অধিকার ২ শতাংশের কম।
বাংলাদেশ কাগজে-কলমে ধর্মনিরপেক্ষ।
কিন্তু বিয়ে, বিচ্ছেদ, বিচ্ছেদের পরে খোরপোশ ও ক্ষতিপূরণ প্রদান থেকে শুরু করে সম্পত্তি অধিকারসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ধর্মানুসারেই সব নির্ধারিত হয়। দেশের প্রচলিত আইনানুসারে নারীরা ভূমি কিনতে, সেসবের মালিক হতে, এমনকি খাস জমি অধিগ্রহণেরও অধিকার রাখেন। কিন্তু এ দেশের মুসলমান নারীরা প্রধানত উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অধিকারী হন। কিন্তু হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিক হতে পারেন না। সমস্যা হলো, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুসলমান নারীদের ওপরে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মমতের সম্পত্তির অধিকারের নিয়ম সামাজিকভাবে প্রযোজ্য হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘সম্পত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে বৈষম্য জারি আছে, তার তুলনায় নারীদের এ বঞ্চনা হয়তো উপেক্ষণীয়। দেশটির ১৬ কোটি মানুষের দুই-তৃতীয়াংশই ভূমিহীন। ’ কিন্তু এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা অত্যন্ত বৈষম্যের শিকার। পাবলিক বাসে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা জমিতে তাদের অধিকারের মতোই। সাধারণত বাসে দু-একটি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, সম্পত্তিতে নারীদের পরিমাণ ক্রমে কমার আরেকটি কারণ হলো, নারীরা প্রায়ই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তাঁদের সম্পত্তি ভাইদের দিয়ে দেন। কিন্তু এর উল্টোটা মেলা ভার।
১৯৮০-র দশকে বাংলাদেশে ইউনিফরম ফ্যামিলি কোড প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়। এ আইনটির উদ্দেশ্য ছিল নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করা, না হলে অন্তত কমিয়ে আনা। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে এবং ২০০৭-০৮ সালে সেনা-সমর্থিত সরকার সম্পত্তি ও ভূমিতে নারীদের পুরুষদের সমানাধিকার দিয়ে আইন পাস করার চেষ্টা করেছিল।
২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ সরকার এ আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে এ সরকার নারীদের রক্ষায় ও যৌন নিপীড়নবিরোধী আইন পাস করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বাংলাদেশে যতবার সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার দিয়ে আইন প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে, ততবার দেশটির ইসলামপন্থীরা বাধা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারও এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক আইন খাটাতে পারেনি।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রক্ষণশীল ডানপন্থীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ বলে এ ক্ষেত্রে দলটির কোনো ইতিবাচক বক্তব্য নেই।
পত্রিকাটি আরও বলছে, ‘সম্পত্তিতে সব উত্তরাধিকারীকে সমান অধিকার দিয়ে একটি আইন পাসের উদ্যোগ নেওয়ার প্রত্যক্ষ ফল হলো ২০১১ সালে হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটির উত্থান। ’ তিন-চতুর্থাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগও এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
পত্রিকাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার দেশের সব ভূমির দলিল ডিজিটাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক কোটি ৩৩ লাখ ডলারের অর্থ সাহায্য দিয়েছে।
ভূমিহীনদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন এনজিও নিজেরা করির নেতা খুশি কবীর মনে করেন, দলিল সংরক্ষণের এ ধরনের চেষ্টা ভালো। এতে অন্তত ভূমির ওপর নারীর অধিকারের বিষয়টি দাপ্তরিক স্বীকৃতি পাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।