পরাঞ্জয়ী...
সকাল ৯ টা থেকে দুপূর ২টা পর্যন্ত একটানা ক্লাশ করে বড্ড ক্লান্ত লাগছিল! তারপর ইশরাত আর আমি গেলাম নিউ-মার্কেট। ভাগ্নের জন্মদিন। কার্ড কিনতে। আমার আর ইশরাতের একটা ব্যাপারে খুব মিল। আমাদের পছন্দগুলো কাছাকাছি হয় সবসময়! কার্ড কিনে ফিরব এমন সময় ঝুম বৃষ্টি।
কোন মতে রিকশা নিলাম। উফফফ, জ্যাম! নীলক্ষেতের জ্যামে যারা পড়েননাই তাদের বোঝানো যাবেনা সে যন্ত্রনা!
যাইহোক পলিথিন দেয়া থাকলেও রিকশায় বসে পায়ের পাতায় বৃষ্টি পড়ছিল টুপটাপ। রাস্তায় ভিজছিল কয়েকটা বাচ্চা, যাদেরকে আমরা খুব ভদ্র হয়ে ডাকি "পথশিশু"। হাত পাতছিল "আফা একটা ট্যাকা দেন, ২ ডা ট্যাকা দেন"। আমি দেইনি, ইশুও না।
আমাদের সামনেই একটা প্রাইভেট কার। ইশু আর আমি গলা মিলিয়ে গান ধরেছি ততক্ষনে! সিগনাল ছেড়ে দিল। ইশু বললো "পায়ে বৃষ্টি পড়ছে, বড্ড ভাল লাগছে রে"! আমি চুপ! আবার ও বললো "জীবনের কালো অংশ গুলো এই জলে ধুয়ে যেত! কতই না ভাল হত। "আমি তখনও চুপ। আমি জানি তা হবার নয়!
হঠাৎ খেয়াল করলাম সামনের প্রাইভেট কারের জানলা দিয়ে একটা গোলগাল হাত বাইরে এসে বৃষ্টি ধরছে।
যেন আকাশের কাছে পেতে চাইছে একটু বিলাস! আমি ইশুকে দেখলাম আঙ্গুল দিয়ে। ও মুচকি হাসলো। আমি বললাম "বৃষ্টিবিলাস"। ও বললো "বাহ বেশ নাম দিয়েছিস তো"! আমি আবার বললাম এই বৃষ্টিতে দুজন মানুষ হাত পাতছে...............কেউ হাত পেতে বৃষ্টি চাইছে আকাশের কাছে, আর কেউবা হাত পেতে চাইচে "একটা ট্যাকা"! হাহ, একজনের প্রয়োজন, একজনের বিলাস! হঠাৎ মনটা তিক্ত হয়ে উঠলো!
আমি কত আনন্দে ভাগ্নের জন্য কার্ড কিনছি, নিজের জন্য শপিং করছি হাজার টাকা উড়িয়ে......................আর ওরা! ছি! আমি কি মানুষ! নাহ, মানুষ নই। প্রানের দাবীতে একটা প্রানী মাত্র! ঠিক সেই মুহুর্তে নিজের প্রতি ঘেন্নায় গা গুলিয়ে উঠলো আমার।
মনে হল সব ছুঁড়ে ফেলে একবার মানুষ হয়ে উঠি! পারিনা! কারন সেই প্রাণের দাবী, প্রাণীত্বের দাসত্ব!! কেমন করে যেন মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েও মানুষ হয়ে ওঠা হয় না আমাদের! আমরা শুধু নিজেদের দাসে পরিণত হই আস্তে আস্তে!
হঠাৎ ইশু বলে "আচ্ছা তোর আর আমার বয়স যখন ত্রিশের কোঠা পার হবে তখন কি আমরাও অনুভূতিহীন মানুষে পরিণত হব? ঘুম থেকে উঠে অফিস, অফিস থেকে এসে ঘুম? ছোট ছোট অনুভূতিগুলো আর নাড়া দিবেনা আমাদের? উফফ! আমি তো ভাবতেই পারিনা। মনে হয় সেদিন আমি আত্মহত্যা করবো"! আমি জবাব দেইনা! মনে মনে বলি "আমার অনুভূতিগুলো তো এখনই মরে গেছে রে! কয়লা পোড়া হৃদয়টাকে কোন কালো দাগই কলঙ্কিত করতে পারেনা! বোধের জায়গা গুলো বড্ড ভোঁতা!"
বলা হয়না কিছুই। ইশু আর আমি আবার গেয়ে উঠি "এক ফালি ঘর , একটু আশা, এক মুঠো রোদ ভালবাসা, চায় মন ছুঁতে তোমায়....................
ইশু আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করে আমি ওকে এত ভাল বুঝি কেমন করে! আমি ওকে কোনদিন বলতে পারিনি ও আমারই ছায়া। বাইরে যাই হোক, ভেতর টা ওর আমারই মত, হুবহু! আর আমি সেইসব মানুষদের একজন যারা নিজেকে ভীষণভাবে বুঝে! আমি ঝুম বৃষ্টিতে পা ভিজিয়ে বাসার দিকে ছুটে চলি, ইশু রিকশা পাল্টে যায় চ্যানেল আই এর অফিসে। বৃষ্টির ঝাপটায় কখন যে চোখের পাতাদু'টি ভিজে উঠেছিল টের পাইনি।
সত্যি বলছি আমি কাঁদিনি!
উৎসর্গ : ইশরাত বিনতে ওয়াহিদ (আমার খুব কাছের মানুষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।