আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টিবিলাস



.......বৃষ্টি ঝরছে। আমি ভিজে ভিজে রাস্তায় হাঁটছি। টেম্পুর আশায়। প্রচন্ড ভিড়ের কারণে উঠতে পারছি না। শেষমেষ আজই প্রথম টেম্পুতে ঝুঁললাম।

নিজেকে খুব হালকা মনে হচ্ছিল। দেওয়ানহাট ব্রিজের উপর থেকে মাথা গলালেই বস্তি দেখা যায়। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ছোট ছোট দেবশিশুরা রেললাইনের উপর খেলছে। যদি অন্যপাশ থেকে রেল আসে তবে হয়ত দু’ভাগ হবে ১০ হাজার টাকা ঋণগ্রস্ত বস্তির ছেলেরা। ফাটের বাসিন্দারা সব সুখ কেড়ে নিয়ে যদি একই ঋণের বোঝা বহন করেন তবে উলঙ্গ শিশুটা কেন কিছু না পেয়ে সমহারে ঋণপাপী হবে? আমি ঝুঁলছি মনে হচ্ছে পৃথিবীটা ঝুঁলছে।

এত বৈষম্যের নগ্নবীজ বহন করে কিভাবে টিকে আছে ঈশ্বরের পৃথিবী? ........স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়া নিজের জীবন। এমন ভরা শ্রাবণে আমাদের প্রথম স্বপ্নঘর ‘জননী মাল্টিমিডিয়া’ গড়েছিলাম, তারপর অন্য শ্রাবণে স্বপ্নের সলিল সমাধি হল , আমি আবার ঝূঁলে পড়লাম অনিশ্চয়তার বুকে। এভাবে বাদুড় ঝোলা জীবন পাড়ি দিচ্ছি শ্রাবণে শ্রাবণে। বৃষ্টির জল আর চোখের জলের দারুণ সখ্যতা, ‘বৃষ্টি তুমি ঝরে পর দুর্বাঘাসের গায়ে, চোখের জলের ঢেউ খেলে যায় বুকের মাঝারে....’ ....... অন্য শ্রাবণের গল্প বলি। সেই শ্রাবণে কেউ একজন বুকের ভেতর কড়া নাড়ল।

রিনিঝিনি চুড়ির শব্দে আমি জেগে উঠলাম ঝোলানো অবস্থা থেকে। স্বপ্নঘরের ব্যর্থতা কেটে গেল, স্বপ্নপুরি বানানোর মেকানিজমে ভেসে গেলাম। সেই মায়াবিনীর নাম দিলাম ‌পরি। তার ভেজা চুলের গন্ধ আতরের চেয়ে মধুর.....। তার সাথে বৃষ্টিভেজা বিকেলে রিক্সায় চড়ে চড়ে স্বপ্ন বুনলাম, ঝুঁলে যাওয়া মানুষটি বেঁচে উঠল ২০০৬ এর শ্রাবণে।

......... এখন কল্পনার ঘুড়ি আকাশে ওড়ে। স্বপ্ন বেচি বেচি করেও বেচা হয় না। আমাকে থামিয়ে দেয় বকুল, বেলী, আমাকে সাহস দেয় সেলফোনে রাতজাগা পরি, আমাকে স্বপ্ন দেয় ভোরের আকাশ, আমাকে বিশ্বাস দেয় বৃষ্টির পরের নিঝুম রাত। মেঘ আর রোদ্দুরের মাঝে যেটুকু আলো তার সবটুকু চোখে মেখে বৃষ্টি বিধুর দিনে ছাতাবিহীন আমি পৌঁছে যেতে চাই স্বপ্নময় সেই গন্তব্যে। সেই দিনের প্রতীক্ষায় মেঘমাল্লা হয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি টেম্পুঝোলা জীবন।

‘বৃষ্টি আমার চোখের ভেতর বৃষ্টি আমার মনে, পরিকে আমি ভালবাসি, একেলা নির্জনে। ইচ্ছে করে এই জীবনটা পরির কাছে থুঁই, পাশে আছি সারাজীবন পাশেই যেন রই। ’ ..........বৃষ্টি তুমি সাক্ষী থেকো তোমাকে ছুঁয়েই ভরিয়ে দেব আগত ভবিষৎ। আজকের টেম্পু ঝোলা জীবনের ইতি টেনে বেলী হাতে দাঁড়াবো পরির সামনে। সেদিন হয়তো বৃষ্টি তুমি কাঁদবে, সেদিন আমি কাঁদব না।

আমার চোখের যে বৃষ্টি ঝরবে সেই বৃষ্টি কষ্টের নয়, প্রাপ্তির। দুঃখের নয়, অনন্ত সুখের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।