Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আর বিপদে যে এগিয়ে আসে সেই তো পরম বন্ধু। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমরা অনেককেই বন্ধু হিসেবে পাশে পেয়েছি। আমাদের গৌরবময় অধ্যায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম ভিনদেশী কিছু মমতাময় মানুষকে। সেইসব দরদী বন্ধুদের নামগুলো আজও আমাদের মনে পড়ে।
বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনেক আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছিলেন। বিভিন্ন দেশের শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সংগঠন নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে দ্বিধা করেনি। ১৯৭১ এর সে ৯ মাসের পুরোটাই এমন অনেক অকৃত্রিম বন্ধু পেয়েছিলাম আমরা।
সেইসব দরদী বন্ধুদের জন্য ভালোবাসা
একাত্তরে আমাদের দুঃসময়ে আমরা পাশে পেয়েছিলাম এমন আরও অনেক বন্ধুকে। স্মরণ করতে হয়, ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোকে, যিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করে এ দেশকে আপন করে নিয়েছিলেন।
মালরো লিখেছিলেন, ‘বিদ্রোহ যখন শুরু হলো, তখন থেকে ইসলামাবাদের সেনারা পূর্ব বাংলার কাছে আর স্বদেশবাদী বা স্বধর্মীয় থাকল না, তারা পরিণত হলো দখলদার বাহিনীতে। ’
অ্যালেন গিন্সবার্গের অসাধারণ সেই কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কি এখনও আমাদের আত্মাকে আন্দোলিত করেনা?
‘লক্ষ শিশু দেখছে আকাশ অন্ধকার/ উদর স্ফীত, বিস্ফোরিত চোখে জলধারা/ যশোর রোডে বিষন্ন সব বাঁশের ঘর/ ধুঁকছে শুধু, কঠিন মাটি নিরুত্তর। ’
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকান কবি ‘অ্যালেন গিন্সবার্গ’ লিখেছিলেন সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতাটি। যার আলোকে মৌসুমী ভৌমিক গেয়েছিলেন বিখ্যাত ‘যশোর রোড’ গানটি।
একাত্তরে সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের বয়স মাত্র ২৭ বছর।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর সংবাদদাতা। কঠোর পাহারার মধ্যেও তিনি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় তৎকালীন ইন্টারকন্টিনেন্টালে নজরবন্দী ছিলেন সাইমন ড্রিংসহ চল্লিশ জন বিদেশি সাংবাদিক। ২৭ মার্চ ঢাকার রাজপথে বের হন তিনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত রক্তাক্ত ঢাকা শহর দেখে শিউরে ওঠেন তিনি।
ব্যাংককে ফিরে প্রকাশ করেন ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’। প্রকাশ করেন সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ঠান্ডা মাথায় থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, দগ্ধ শহর, লাশের পাহাড়, হাজার হাজার মানুষের পালিয়ে যাওয়ার খবর।
১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত হয় দ্য টেস্টিমনি অব সিক্সটি। অক্সফামের সহযোগিতায় ঐতিহাসিক এ দলিল প্রকাশ করে ৬০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির সাক্ষ্য ও প্রত্যদর্শীর দেখা যুদ্ধাহত পূর্ব পাকিস্তান, হানাদারদের বর্বরতম গণহত্যা এবং অসহায় শরণার্থী শিবিরগুলোর করুণ চেহারা। এখানে লিখেছেন ভিনসেন্ট ফিলিপ, মনসেইনার ব্রুস , লেক্স হেনরি, অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস, মাদার তেরেসা, জন পিলজার, এডওয়ার্ড কেনেডিসহ খ্যাতনামা সাংবাদিকরা।
শুধু তা-ই নয়, ব্রিটেনের শ্রমিক দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য পিটার শো ব্রিটিশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান, যাতে পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো প্রকার অর্থনৈতিক সাহায্য না দেওয়া হয়।
একাত্তরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্থার কে ব্লাডও যুদ্ধাহত বাংলাদেশের চেহারা তুলে ধরে মানবিক সাহায্যের সুপারিশ করেন। তাঁর রিপোর্ট চলে যায় মার্কিন সিনেটে। মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টি দিয়ে ঢাকাকে পর্যবেণ না করায় ব্লাডকে ডেকে পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে।
বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সময়ে মাদার তেরেসা বারবার আকুলভাবে বিশ্ববাসীকে বলেছেন, ‘মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখাও।
তাঁরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান’।
এসময় বাংলাদেশের পাশে আরও ছিলেন মার্কিন সিনেটর এডমুন্ড লাস্কি, মি. ওয়ালডি, জন আর কেলি, মার্ক টালি, ম্যুচর স্যালি, রবার্ট পেইন, স্যার ডগলাস হিউম, রিচার্ড কে টেইলর, সিডনি শনবার্গসহ আরও অনেকে।
সারা বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ প্রতিবাদ করেছিল এই গণহত্যা এবং আগ্রাসন এর। আর তাই বিদেশি এসব সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী প্রত্যেকের অবদানই আমাদের জন্য ছিল অমূল্য। তাঁরাও আমাদের একাত্তরেরই একটি অংশ।
যুদ্ধকালীন টাইম সাময়িকী, দি অবজারভার (লন্ডন), ডেইলি টেলিগ্রাফ (লন্ডন), সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট (লন্ডন), নিউজউইক, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ওয়াশিংটন পোস্ট, হেরাল্ড ট্রিবিউন, স্টেটসম্যান, অমৃতবাজার পত্রিকা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ অসংখ্য সংবাদপত্র আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে রেখেছিল গতিশীল। তাই আমাদের দুঃখদিন ও বিজয়ের সঙ্গী সেইসব বন্ধুদের আমরা স্বরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।
পর্ব - ১
পর্ব - ২
পর্ব - ৩
পর্ব - ৪ পর্ব - ৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।