পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দিকে ধেয়ে আসছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, মহাসেন আজ বুধবার রাত নয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ রাতে অথবা কাল সকালে এটি আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৭ নম্বর এবং মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মহাসেনের প্রভাবে উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
সন্ধ্যার পর থেকেই উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ রাত ১০টা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ-সাত ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল।
এর আগে দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর সতর্কসংকেতের আওতায় থাকবে।
মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৫ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৫ নম্বর সতর্কসংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাগুলো এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ, সব জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠানো হচ্ছে
চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে চট্টগ্রামের মূল জেটিতে বন্দরের নিজস্ব তিন মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বন্দর সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বন্দরের মূল জেটি ও নিউ মুরিংয়ে ২১টি জাহাজ আছে। তিন মাত্রার সতর্কতা অনুযায়ী, এসব জাহাজ এখন জোয়ারের সময় পর্যায়ক্রমে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ বন্ধ রয়েছে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, চ্যানেল নিরাপদ রাখতে জেটিতে থাকা সব জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সাগরে অবস্থানরত জাহাজের পক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা সহজ হয়।
এক হাজার ৩২৭টি মেডিকেল টিম গঠন
মহাসেনের আঘাতের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ উপকূলীয় ১৩টি জেলায় এক হাজার ৩২৭টি চিকিত্সা দল গঠন করেছে। স্বাস্থ্য ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।