আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের উদাহরণ থেকে পাকিস্তানিরা শিখছে



মোহাম্মদ আবুল হোসেন: গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে ভাল খবর মিলছে। তা থেকে আমরা পাকিস্তানিরাও যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছি। উন্নয়ন ও অগ্রগতি সব সময় রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এ সব মিলিয়েই হয়ে থাকে। এর একটি আরেকটির পরিপূরক। যে দেশকে এক সময় হেনরি কিসিঞ্জার ‘তলাবিহিন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিলেন সেটাই হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গতিময়।

‘দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক মন্তব্য কলামে এ কথা লিখেছেন স্টকহোম ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্সের প্রফেসর এমিরেটাস ইশতিয়াক আহমেদ। গতকাল পাকিস্তানের ডেইলি টাইমস-এ প্রকাশিত ওই লেখায় তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশে গত বছর ও সমসাময়িককালে রাজনীতিতে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে ইসলামপন্থি ও সন্ত্রাসের হুমকি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ বিজ্ঞের মতো এবং দূরদৃষ্টি নিয়ে নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘ভূমিধস’ বিজয়ের মধ্যে এর ভিত্তি নিহিত।

দেশের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশের সুপ্রিম কোট। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের দেশ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেমন উলেমাদের ফতোয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সমপ্রতি মিডিয়া রিপোর্টে বলেছে, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা মওদুদীর লেখা বইগুলো সরকার সরকারি লাইব্রেরিগুলো থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেষোক্ত সিদ্ধান্তটি নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা উঠতে পারে। কিন্তু যদি কোন মত যদি শান্তি শৃংখলা নষ্ট করে তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে তা করা যেতে পারে। ওই লেখায় আরও বলা হয়, নারী ও পুরুসের সম অধিকার রক্ষা করে একটি সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে ধর্ম নিরপেক্ষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। যদি নারীদের ক্ষমতায়িত করা না যায় তাহলে গণতন্ত্র সেই অতলেই থেকে যায়। বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়ন শুরু করেছে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা।

তারা নারীকে অর্থনৈতিকভাবে বন্ধনমুক্তির পথ দেখিয়েছে। তাদেরকে শিক্ষিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এক্ষেত্রে অগ্রগামী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক। তাদের কর্মসূচী বিস্ময়কর সফলতা পেয়েছে। এখন ওই মডেল উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে আরেকটি নেতৃস্থানীয় বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ রুরাল এডভান্সমেন্ট কমিটি (ব্র্যাক)। বলা হয়, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও। এর কর্মকাণ্ড আফগানিস্তান, পাকিস্তানের খাইবার পখতুনওয়া, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিয়ন, উগান্ডা ও সুদানে প্রচলিত। বৈশ্বিক বাজারে লাভজনক হতে পারে এমন কলকারখানার উন্নয়নে পদক্ষেপে গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশে এ খাতটি হলো এপারেল বা তৈরি পোশাকের কারখানা।

এ ব্যবসা ক্রমশ বিস্তার ঘটছে। চীন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং তুরস্কের পর বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী দেশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ১০০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তনি করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে নারী শ্রমিকদের জন্য। এর মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে।

গার্মেন্টস শিল্পে নারী শিক্ষা ও চাকরি বলতে বুঝায় এর মাধ্যমে নারীদের সন্তান জন্ম দেয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। পরিণতিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২ দশমিক ৭ ভাগ থেকে কমে ১ দশমিক ৪২ ভাগে এসেছে। এটা উন্নয়নের একটি ইতিবাচক দিক। ১৯৭০ থেকে ৭৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রজনন হার ছিল প্রতি নারীতে ৬ দশমিক ৮৫। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তা কমে ২ দশমিক ৩৬ এ এসে দাঁড়িয়েছে।

এর অর্থ বাংলাদেশে সংসারের পরিধি ছোট হয়ে আসছে। ফলে আয় কম হলেও তাতে মানসম্মত জীবনযাপন করা সম্ভব। এসব জিনিস নিশ্চিত হয় যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয় ও উৎপাদন খাতে নজরদারি করা হয়। শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দ্বন্দ্বের পরিবর্তে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার চর্চা করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্য যে সামরিক শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

এর অর্থ ভারতের সামরিক শক্তির সঙ্গে কখনও প্রতিযোগী হয় নি বাংলাদেশ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.