আজকে (সোমবার) টিভি চ্যানেলের নিউজে মাহমুদুর রহমানকে দেখলাম। সাদা পাঞ্জাবি পরা, হাতে কিছু কাগজপত্র। মুখে হাসি ছিল। কিন্তু হাসির মধ্যেও তার বিদ্রোহের ছাপ দেখেছি। যেন বলছে, এই কি গণতন্ত্র? আমার কী অপরাধ যে আমাকে এভাবে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে? গণতন্ত্রের কথা বলছেন আপনারা।
আসলে কি গণতন্ত্র দেশে আছে? একথা বলতে গিয়েই তো আজকে আমার এই দুর্দশা।
আমি কোনো উত্তর দিতে পারছি না। কারণ দেয়ার মতো ভাষা বা শক্তি অন্তত আমার নেই। আমি বলতে পারি, আমি প্রতিবাদ করতে পারি। তাই তো বেশ কয়েকদিন ধরে হাইকোর্ট বা প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবাই বলে মানববন্ধন—আমি জানি না মানববন্ধন বলব কিনা।
নিশ্চুপ, নির্বিকার, হাতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছি—মাহমুদুর রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিন। তাকে মুক্তি দিন। যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিন।
তাকে আমি বেশিদিন ধরে চিনি না। যেহেতু আমি পেশায় একজন চলচ্চিত্রকার, সেহেতু আমি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের একজন সদস্য।
মাহমুদুর রহমান এ পরিষদের সভাপতি। এ কারণেই মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হতো। কথা হতো। আমি জেনেছি, তিনি একজন সত্, সাহসী, দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রেবিশ্বাসী সাংবাদিক। কখনও তাঁর কথার কোনো নড়চড় হতে দেখিনি।
আমার পরিচিত অনেকেই আছেন বিভিন্ন পেশায়। তার মতো একজন দেশপ্রেমিক, একজন ভালো মানুষ আমি পাইনি বললেই চলে।
একটি বিশেষ দিক না বললেই নয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর গোটা জাতি যখন অবরুদ্ধ ও নিশ্চুপ, নির্বাক ছিল, সে সময় শুধু কয়েকজন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে অন্যয়ের প্রতিবাদ করেছেন। মাহমুদুর রহমান ছিলেন তাদের অন্যতম প্রধান।
তিনি লিখেছেন, বলেছেন। বর্তমানে অনেকেই অনেক কথা বলছেন, লিখছেন। কিন্তু সেই দুঃসময়ে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। যারা এখন বলছেন, প্রতিবাদ করছেন আরও সোচ্চার হন, তাদের বলছি, সামনে আরও প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে আপনাদের যেতে হবে। মাহমুদুর রহমান সাহস, সততা ও দেশপ্রেমের প্রতীক।
অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিয়ে গণতন্ত্রকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এবং মাটি যতদিন এদেশে থাকবে, ততদিন মাহমুদুর রহমানের অবস্থান দৃঢ় হয়ে থাকবে। দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগ্রহ যদি এতটুকু আমাদের থেকে থাকে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় যদি আমরা বিশ্বাসী হই, তাহলে অবিলম্বে তালবাহানা না করে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে তাকে মুক্তি দেয়া হোক। তা না হলে এ লজ্জা ও গ্লানি আমাদের সবার।
লেখক : চাষী নজরুল ইসলাম
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।