বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি ব্রিটিশ উপনিবেশী যুগের শেষ প্রান্তে, অবিভক্ত বাংলার রাজধানী কলকাতায়। তার রাজনৈতিক গুরুদের একজন ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং তার রাজনীতির কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছিল মধ্য-চলি্লশের অস্থির সময়। ওই সময়ের একটি নিবিড় হিসাব নিলে যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য (যেগুলো সমসাময়িক রাজনীতির চরিত্র লক্ষণ তৈরি করে দিয়েছিল) আমাদের চোখে ধরা পড়বে, তা নিম্নরূপ :
১. একেবারে সাম্প্রদায়িক না হলেও সম্প্রদায়ভিত্তিক চিন্তা-ভাবনা;
২. বাম রাজনীতির উপস্থিতি সত্ত্বেও বুর্জোয়া ধ্যান-ধারণার প্রাধান্য, বিশেষ করে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সঙ্গে উচ্চবর্গীয় শ্রেণী, পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক;
৩. নিম্নবর্গীয়দের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের মতো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের অভাব অথবা তাদের ঊন-অবস্থান এবং
৪. সর্বভারতীয় রাজনীতির অভিঘাতে স্থানীয় রাজনীতিতেও বিভিন্ন ধরনের মেরুকরণ।
পাকিস্তান আন্দোলন বাংলার মুসলমানদের জন্য, তাদের বেশিরভাগ ছিল নিম্নবর্গীয়, উপেক্ষিত এবং প্রকৃত অর্থে সাব-অল্টার্ন, সম্ভাবনার একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। সুযোগটি ছিল জাতিগত পরিচিতি, শিক্ষা-দীক্ষা এবং সামাজিক গতিশীলতাসহ অন্যান্য সম্ভাবনার।
এসব সম্ভাবনা যতটা প্রকৃত ছিল, তার থেকে বেশি ছিল অনুমিত। পাকিস্তান সৃষ্টির পরের এক দশকে বাঙালি বুঝতে পেরেছিল, পাকিস্তান রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের কোনো ভূমিকা পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সমাজপতিরা মেনে নেবে না, কারণ তারা নিম্নবর্গীয়দের প্রতিনিধি ছিল না, নিম্নবর্গীয়দের শোষণ ও বঞ্চনার মাধ্যমেই বরং তাদের অবস্থান সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে তারা ছিল একমত। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতাধররা ছিল সাম্প্রদায়িক, তাদের চিন্তা-চেতনায় আধুনিকতা ছিল না। তারা ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আদায়ের জন্য ব্যবহার করেছে। ভারতে শুরু থেকেই গণতন্ত্র একটি কাঠামোগত ভিত্তি পাওয়ার জন্য নিম্নবর্গীয়দের একটি অবস্থান তৈরি হয়ে যায়।
উচ্চবর্গীয় ব্যবসায়ী পুঁজিপতি ও রাজনীতিবিদরা গণতন্ত্রের কারণেই তাদের অন্তত ঠোঁট সেবা দিয়েছিলেন। তাছাড়া গণতান্ত্রিক কিছু রক্ষা কবচের ফলে এই শ্রেণীটি তার
ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার কিছুটা হলেও প্রতিফলন জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে দেখতে পেয়েছে। পাকিস্তানে সেই সম্ভাবনা ছিল না।
বঙ্গবন্ধু শুরুতে যে রাজনীতির চর্চা করেছেন, তার চিন্তা ছিল ওই ক্ষমতাধর পুঁজিপতি, জমিদার ও ব্যবসায়ী শ্রেণী। এই রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব ছিল, অন্তত এর অনেক ধ্যান-ধারণা ছিল রক্ষণশীল।
শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকে তাই যে সংগ্রামে নামতে হয়েছিল, তা ছিল ধর্মীয় অনুশাসন অথবা রক্ষণশীলতার আচরণ থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করার সংগ্রাম। একই সঙ্গে নিম্নবর্গীয়দের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামটি তাকে শুরু করতে হয়েছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পাকিস্তানের সাত বছরের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এই দুটি সংগ্রাম মুসলিম লীগের পরাজয়ের পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, রক্ষণশীলতা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে যায় এবং নিম্নবর্গীয়দের স্বার্থহানি করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন খুব পরিষ্কারভাবে আমাদের জানিয়ে দিয়েছিল, বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি এবং জীবনাচরণ কোনোক্রমেই আপসের বিষয় হতে পারে না।
ভাষা আন্দোলন থেকেই প্রকৃত অর্থে সেক্যুলার এবং জনমুখী রাজনীতির সূত্রপাত। এই দুই চিহ্ন নিয়ে আমাদের রাজনীতি এখনও যে একটি আদর্শিক রূপে আমাদের মনে বিরাজমান তাতে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণ সেই শুরু থেকেই ছিল অনিবার্য। বস্তুত ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ইতিহাসে বাংলাদেশে এই রাজনীতিই ছিল মূলধারা।
১৯৫৬ সালের পর থেকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপ যখন প্রকাশ হতে শুরু করল, তখন বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামে আরেকটি মাত্রা যুক্ত হলো। সেটি ছিল শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, সামরিক বাহিনীর মতো এককেন্দ্রিক অনিয়ন্ত্রিত শক্তির বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রের ডানপন্থি, প্রতিক্রিয়াশীল ডিসকোর্সের বিরুদ্ধে।
বঙ্গবন্ধু সামরিক শক্তির বিপরীতে গণতন্ত্র, ডানপন্থি প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে প্রগতিবাদী ও সেক্যুলার রাজনীতি এবং নিয়ন্ত্রণকামী শক্তির বিরুদ্ধে অংশগ্রহণমূলক সামাজিক-রাজনৈতিক চর্চার বিকাশ ঘটাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি যে ছয় দফা সনদ ঘোষণা করেন, তা ছিল এসব চর্চার আকাঙ্ক্ষার একটি নিকষিত রূপ। বলা বাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর এই সংগ্রাম পাকিস্তানিরা সহজভাবে নিতে পারেনি। অসংখ্যবার তাকে জেলে যেতে হয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন তার এই সংগ্রামে তিনি পুরো বাংলাদেশকে সঙ্গে পাবেন। পাকিস্তানের কিছু রাজনীতিবিদ ও বামধারার ক্ষুদ্র অংশটিও বঙ্গবন্ধুর সহযোগী হয়েছিল।
কিন্তু তার আস্থা ছিল বাঙালির সম্মুখ চিন্তা এবং অংশগ্রহণমূলক সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহ্য ও চর্চার ওপর। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের সমর্থন পেলেন, তা এই কারণে। অবশ্য ততদিনে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি সংগ্রাম সূচিত হয়ে গেছে এবং তা বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের।
১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষরূপে সামরিক শাসন জারি থেকেছে এবং এই পুরো সময়জুড়ে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম চলেছে সামরিক বাহিনী নামের শক্তিশালী অপশক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম শুধু রাজনীতির মাঠে সীমাবদ্ধ ছিল না, সেই সংগ্রাম ছিল অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ও উৎকর্ষ অর্জনের জন্যও।
ফলে ছয় দফার সনদটিকে বাঙালি তার সার্বিক মুক্তির একটি উপায় হিসেবে দেখেছে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ছিল একটি ন্যায়নিষ্ঠ, স্বচ্ছ এবং নিম্নবর্গীয়দের পক্ষে সহানুভূতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য। তিনি সেই ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বলেছিলেন, রাষ্ট্র যেখানে নিপীড়ক সেখানে রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান ন্যায়নিষ্ঠ থাকতে পারে না। নিপীড়ক রাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারে না। তার আদালত সুবিচার নিশ্চিত করতে পারে না; তার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে নৈতিকতা ও সত্যবাদিতা থাকে না।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামময় জীবনের একটি মোড় ফেরার ঘটনা। এই মামলা তাকে দেখিয়ে দিল, রাষ্ট্রের নৈতিকতা নিশ্চিত করতে না পারলে এর কোনো প্রতিষ্ঠানেরই নৈতিকতা থাকে না। তিনি জানতেন, নানা ঐতিহাসিক-নৃতাত্তি্বক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্র তার চরিত্র পরিবর্তন করতে পারবে না। কিন্তু বাঙালিদের পক্ষে সেটি সম্ভব, বাঙালিরা ধর্মভীরু হলেও উগ্রবাদী নয়, বাঙালিদের ভেতর বৈষম্য, নিপীড়ন, শোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে একটি প্রবল প্রতিরোধ রয়েছে এবং বাঙালি ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণীর বিভাজন ভেতর থেকে গ্রহণ করতে পারে না। ১৯৬৯ সালের পর বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের রাষ্ট্রীয় একটি পরিচয় অর্জনের সংগ্রামে লিপ্ত হলেন এবং ১৯৭০-এর নির্বাচনে জয়লাভের পর শুরুতে কিন্তু পাকিস্তানের কাঠামোর ভেতরে থেকে রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব কি-না, এ নিয়ে ভেবেছেন।
শিগগিরই তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীতি হয়েছেন যে, পাকিস্তান যাবে পাকিস্তানের পথে, আমাদের পথ আমাদেরই খুঁজে নিতে হবে। বস্তুত এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানে নানা ব্যর্থতা এবং এর চরিত্রগত কোনো পরিবর্তন না হওয়াটা বঙ্গবন্ধু ওই ধারণাকে সম্প্রসারিত করে। ফলে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামটি শুরু হয় ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করে এবং বাঙালির নিজস্ব ভাবনাকে একটি দৃঢ় অবয়ব দেয়।
২. তাহলে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালটাকে নিরীক্ষা করে দেখলে আমরা দুটি বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসতে পারি।
এক. পাকিস্তান রাষ্ট্রের গোড়ার দিকের রক্ষণশীল এবং সাম্প্রদায়িক, সংস্কৃতি বিদ্বেষী শ্রেণী বিভাজিত, রাজনীতির প্রাধান্য এবং তা থেকে বেরিয়ে এসে প্রগতিশীল উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক এবং নিম্নবর্গীয়দের পক্ষ অবলম্বনকারী রাজনীতির জন্য বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম এবং দুই. পাকিস্তানের রাষ্ট্রদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্রদর্শনকে চালিকাশক্তি হিসেবে নিয়ে একটি জাতিগত পরিচয় স্থাপনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম। ১৯৭২ সালের সংবিধানে যে চারটি মূলনীতি সংযোজিত হয়েছিল, এ চারটি ছিল বাঙালির রাষ্ট্রদর্শনের ভিত্তি। এ জন্য ১৯৭৫ সালের আগস্টের পর যখন পাকিস্তান সমর্থিত সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো (যেমন সামরিক বাহিনীর একটি অংশ, যেখান থেকে আগস্ট-হত্যাকাণ্ডের উদ্যোক্তা ও তাতে অংশগ্রহণকারীদের দলটি এসেছিল) গোড়া থেকেই এই চার মূলনীতির বিরোধিতা করেছে এবং সংবিধান থেকে এগুলো উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পরে আশির দশকে যখন জেনারেল এরশাদ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করলেন তখন বাঙালির রাষ্ট্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র_ ধর্ম ও রাজনীতির তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শাসনব্যবস্থার আলাদা অবস্থান_ লুপ্ত হয়ে গেল। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার পেছনে কারণ এই ছিল না যে, বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন অথবা এতে ইসলামের মর্যাদা বাড়বে।
ইসলাম বাংলাদেশে কোনোদিন বিপন্ন হয়নি, আগামীতেও হবে না। ইসলাম বিপন্ন বরং পাকিস্তানে যেখানে প্রায় প্রতি শুক্রবার মসজিদে বোমাবাজি হয়, আত্মঘাতী আক্রমণ হয় এবং অসংখ্য নিরীহ মুসলি্ল মারা যান; যেখানে মেয়েদের স্কুলে বোমা মারে উগ্রবাদীরা। মূল কারণটি বরং ছিল উগ্রবাদী ও পাকিস্তানপন্থি মহলটিকে খুশি করা। অবশ্য দেশের মানুষ তাদের প্রতিদিনের জীবনাচরণে উগ্রবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশের মানুষ তাদের চিন্তাচেতনায় প্রগতিশীল রাজনীতিকেই সার্বিকভাবে ঠাঁই দিয়েছে।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে নির্বাচনে এটিই আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে।
৩. ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলে তার শেষ সংগ্রামটি শুরু করেন এবং সেটি ছিল বাংলাদেশকে 'সোনার বাংলায়' রূপান্তরিত করা। তবে এ সংগ্রামটি ছিল সবচেয়ে কঠিন এবং এতে বিজয় লাভ ছিল প্রায় দুঃসাধ্য। এর কারণ দেশের ভেতর ও বাইরে অসংখ্য প্রতিকূলতা। বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ।
এর অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত। এর অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ শীতলযুদ্ধের পরোক্ষ বলি হয়েছিল। সোভিয়েত রাশিয়া বাংলাদেশের মিত্র হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা কিছু শক্তি বাংলাদেশকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করেনি। ফলে বড় মাপের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে উন্নতি সাধন ছিল দেশটির জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ।
তাছাড়া দেশের ভেতর, বঙ্গবন্ধুর সরকারের ভেতর ছিল তার বিরুদ্ধাচারীরা। এদের সঠিকভাবে চিনতে পারেননি বঙ্গবন্ধু, বরং তাজউদ্দীনের মতো মেধাবী, দেশপ্রেমী এবং উদ্যোগী সহকর্মীকে এদের কারণে তাকে ত্যাগ করতে হয়েছে। বাকশাল গঠন ও একদলীয় সরকার গঠন ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামটি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণ। বাকশাল গঠনেও বঙ্গবন্ধু যাদের পরামর্শ নিয়েছিলেন, পরে তাদের কেউ কেউ তার আদর্শ ছেড়ে চলে গেছেন। বঙ্গবন্ধু যদি ঘরটাকে শক্ত হাতে তার সত্যিকার মিত্রদের সহযোগিতায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামলাতে পারতেন তাহলে বাইরের প্রতিকূলতা তিনি নিশ্চয় কাটিয়ে উঠতে পারতেন।
বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল সব বাঙালিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত। কিন্তু বাস্তব ছিল ভিন্ন জিনিস।
৪. তবে বঙ্গবন্ধুর এই শেষ সংগ্রাম আমাদের সবারই সংগ্রাম। এটি আমাদেরই চালিয়ে নিতে হবে। ঘাতকের বুলেট বঙ্গবন্ধুকে চিরকালের মতো আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে না দিলে ওই সংগ্রামের একটা সফল পরিণতির দিকে তিনি হয়তো আমাদের নিয়ে যেতে পারতেন।
কিন্তু তিনি নেই বলে আমরা হাত গুটিয়ে না বসে থেকে সংগ্রামটি বরং চালিয়ে নেব এবং এর সফল পরিণতিই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি সুযোগ। [সমকাল - ১৫ আগস্ট ২০১০ ]
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : অধ্যাপক,
ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।