আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গবন্ধুর তর্জনী

seremos como el Che
কি ক্ষমতা ছিল ওই তর্জনীর? যার হেলনে নুয়ে পড়ল পাকিস্তান, শত শত টগবগে যুবক বুক পেতে দিল তপ্ত বুলেটের সামনে, বাঙ্গালী জাতি স্বপ্ন দেখতে শুরু করল তাদের নিজের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। কেন একটি মানুষের শুধু মুখের কথায় একটি জাতি এতটা আত্মত্যাগ করল, নিজের সব কিছু হারিয়েও স্বপ্ন দেখল স্বাধীনতার। কত মা মরতে দেখল তাদের সন্তানদের, কত বোন হারাল তাদের সম্ভ্রম। আর সেই ছেলেটি যাকে মাজা পর্যন্ত মাটিতে পুতে রেখে বেয়নেট চার্জ করে পাকিস্তানীরা বলেছিল ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে, কিন্তু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগ পর্যন্ত সে চীৎকার করে বলেছিল ‘জয় বাংলা’। সেই যে জনতা যারা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে জেগে উঠেছিল সারা দেশে, যারা মার্চ মাসে অচল করে দিয়েছিল সারা দেশ – এ সবই আজ গল্পের মত শুনায়।

বাঙ্গালীর সেই নেতাও নেই, বাঙ্গালীর সেই দেশপ্রেমও আজ বিস্মৃত। আমি রাজনীতি বুঝি না। আমি আওয়ামীলীগ-বিএনপি বুঝি না। আমি আম জনতার একজন। আমি এই দেশের ছেলে, আমি আমার দেশকে ভালবাসি।

এই ১৫ আগষ্ট আসলে নিজেকে কেমন অপরাধী বলে মনে হয়। এইদিনে আমরা আমাদের জাতির জনককে হত্যা করেছি। আমি জানি বঙ্গবন্ধু দোষ-ত্রুটির উর্ধে ছিলেন না, কিন্তু যে লোকটা এই দেশের জন্য, বাঙ্গালীদের জন্য এত করেছে, যার জন্ম না হলে আমরা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম কিনা সন্দেহ – তাকে আমরা মেরে ফেললাম, অনেক সময় আমার বিশ্বাস হতে চায় না। এ সবই ঘটেছে আমার জন্মের আগে, তবুও এই ১৫ই আগষ্ট আসলে কেমন যেন কষ্ট লাগে, সব কথা চিন্তা করে চোখ ভিজে আসে। আজও যখন বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ এর ভাষণগুলো শুনি, গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, দেশের জন্য কিছু করতে ইচ্ছা করে।

। বাঙ্গালী জাতির জীবনে যদি ফিরে আসত ’৭১ এর দেশপ্রেম তাহলে হয়ত আমাদের দেশটা অনেক পরিবর্তন হয়ে যেত। আমি জানি আজ বা কাল ব্লগে, সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক অনেক লেখা হবে, চ্যানেলে চ্যানেলে অনেক টক-শো হবে। কিন্তু এ সবই অর্থহীন যদি আমরা এসবের আদর্শ ধারণ করতে না পারি, দেশের জন্য কিছু করতে না পারি। বঙ্গবন্ধুর ১০ই জানুয়ারীর ভাষণের কিছু কিছু অংশ শুনলে বোঝা যায় বাংলাদেশ তথা বাঙ্গালীদের সম্পর্কে তার আবেগ ও ভালবাসা।

আমরা সবাই এটা অনেকবার শুনেছি, তবুও কিছু লিখছিঃ ‘আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে, আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে, আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে, আমার বাংলা স্বাধীন থাকবে। আমি আজ বক্তৃতা করতে পারব না- বাংলার ছেলেরা, বাংলার মায়েরা, বাংলার কৃষক, বাংলার শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবি যেভাবে সংগ্রাম করেছে, আমি কারাগারে বন্দী ছিলাম, ফাঁসিকাষ্ঠে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম আমার বাঙ্গালীকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, আমার বাংলার মানুষ স্বাধীন হবে...আমি জানতাম না আপনাদের কাছে আমি ফিরে আসবো, আমি খালি একটা কথা বলেছিলাম, তোমরা যদি আমাকে মেরে ফেলে দাও, আমার আপত্তি নাই। মৃত্যুর পরে আমার লাশটা আমার আমার বাঙ্গালীর কাছে ফিরায়ে দিও। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে, বাংলাদেশকে কেউ দাবাতে পারবে না...কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করনি’ – কবিগুরুর কথা আজ মিথ্যা প্রমানিত হয়ে গেছে, আমার বাঙ্গালী আজ মানুষ...’ আজও কি আমরা মানুষ? আজও কি আমরা সেই বাঙ্গালী যাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না? এটা হোক আজকে আমাদের নিজের কাছে প্রশ্ন। ১৪ আগষ্ট, ২০১০, ঢাকা।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.