আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গবন্ধুর জীবন কথা

ইমানের পরীক্ষা হয় সংকট কালে। ইমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকুন।

১৯৪৭ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে কোলকাতায় দাঙ্গা প্রতিরোধ তৎপরতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

২৩ ফেব্র“য়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে’ বলে ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ জানান। খাজা নাজিমউদ্দিনের বক্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শেখ মুজিব মুসলিম লীগের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কর্মতৎপরতা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেন। ২ মার্চ ভাষা প্রশেড়ব মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে বিভিনড়ব রাজনৈতিক দলের কর্মীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবμমে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে। ১১ মার্চ বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সাথে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারে সারাদেশে ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। মুসলিম লীগ সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে বঙ্গবন্ধুসহ গ্রেফতারকৃত ছাত্র নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

বঙ্গবন্ধু ১৫ মার্চ মুক্তি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভের পর ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় বঙ্গবন্ধু সভাপতিত্ব করেন। সভায় পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সভা থেকে বঙ্গবন্ধু ১৭ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানান।

১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ ২১ জানুয়ারি শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে তাকে জরিমানা করে। তিনি এ অন্যায় নির্দেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহি®কৃত হন। ১৯ এপ্রিল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করার কারণে গ্রেপ্তার হন। ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু এ দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। জুলাই মাসের শেষের দিকে মুক্তিলাভ করেন। জেল থেকে বেরিয়েই দেশে বিরাজমান প্রকট খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করতে থাকেন।

সেপ্টেম্বরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে গ্রেপ্তার হন ও পরে মুক্তি লাভ করেন। ১১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের সভায় নূরুল আমিনের পদত্যাগ দাবি করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ ভুখা মিছিল বের করে। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেবার জন্য ১৪ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবারে তাকে প্রায় দু বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয়।

১৯৫২ ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ঘোষণা করেন ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। এর প্রতিবাদে বন্দি থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্র“য়ারিকে রাজবন্দি মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসেবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৪ ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্র“য়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর শহীদ হন।

বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে এক বিবৃতিতে ছাত্র মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একটানা ১৭ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন। জেলখানা থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়ে তাকে ঢাকা জেলখানা থেকে ফরিদপুর জেলে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২৬ ফেব্র“য়ারি ফরিদপুর জেল থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ডিসেম্বর মাসে তিনি পিকিং-এ বিশ্বশান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন।

১৯৫৩ ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাকিস্তান গণপরিষদের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে ঐক্যের চেষ্টা হয়। এই লক্ষ্যে ১৪ নভেম্বর দলের বিশেষ কাউন্সিল ডাকা হয় এবং এতে যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৫৪ ১০ মার্চ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট লাভ করে ২২৩ আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি আসন।

বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ১৫ মে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। ৩০ মে বঙ্গবন্ধু করাচি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং গ্রেফতার হন। ২৩ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি লাভ করেন।

১৯৫৫ ৫ জুন বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করা হয়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা না হলে দলীয় সদস্যরা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। ২৫ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু বলেন, ““Sir, you will see that they want to place the word ‘East Pakistan’ instead of ‘East Benal’. We have demanded so many times that you should use Bengal instead of Pakistan. The word ‘Bengal’ has a history, has a tradition of its own. You can change it only after the people have been consulted. If you want to change it then we have to go back to Bengal and ask them whether they accept it. So far as the question of One-Unit is concerned it can come in the constitution. Why do you want it to be taken up just now? What about the state language, Bengali? What about joint electorate? What about Autonomy? The people of East Bengal will be prepared to consider One-Unit with all these things. So, I appeal to my friends on that side to allow the people to give their verdict in any way, in the form of referendum or in the form of plebicite.. [অনুবাদ: “স্যার আপনি দেখবেন ওরা পূর্ববাংলা নামের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতে চায়। আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে; আপনারা এটাকে বাংলা নামে ডাকেন।

বাংলা শব্দটার একটি নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য। আপনারা এই নাম আমাদের জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরিবর্তন করতে পারেন। আপনারা যদি ঐ নাম পরিবর্তন করতে চান তাহলে আমাদের বাংলায় আবার যেতে হবে এবং সেখানকার জনগণের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা নাম পরিবর্তনকে মেনে নেবে কিনা। এক ইউনিটের প্রশড়বটা গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আপনারা এই প্রশড়বটাকে এখনই কেন তুলতে চান? বাংলাভাষাকে, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে কি হবে? যুক্ত নির্বাচনী এলাকা গঠনের প্রশড়বটারই কি সমাধান? আমাদের স্বায়ত্তশাসন সম্বন্ধেই বা কি ভাবছেন? পূর্ববাংলার জনগণ অন্যান্য প্রশড়বগুলোর সমাধানের সাথে এক ইউনিটের প্রশড়বটাকে বিবেচনা করতে প্রস্তুত।

তাই আমি আমার ঐ অংশের বন্ধুদের কাছে আবেদন জানাবো তারা যেন আমাদের জনগণের ‘রেফারেন্ডাম’ অথবা গণভোটের মাধ্যমে দেয়া রায়কে মেনে নেন। ] ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.