আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গবন্ধুর ঢাবির ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার

সব কিছুই বলা হয়ে গেছে

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ অবশেষে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ঠিক করা হল, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তার কলংক মোচন করল এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হল। ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছিলেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র (রোল-১৬৬, এসএম হল) ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন ও ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ আরও ৪ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেন। এ সময় প্রশাসন ১৫ টাকা জরিমানা ও অভিভাবকের মুচলেকাসহ ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে শর্ত আরোপ করেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপরে অবৈধ বহিষ্কারাদেশকে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন।

বহিষ্কারাদেশের সভা : চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দেয়ার অভিযোগে ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভিসির বাসভবনের কাউন্সিল রুমে বিকাল ৫টায় এক জরুরি সভা ডাকে। ওই সভায়ই বঙ্গন্ধুর ওপর এ অবৈধ আদেশ জারি করা হয়। তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কোষাধ্য, রেজিস্ট্রার আবদুল হাদী, ঢাকা হলের প্রভোস্ট, সলিমুলাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট, ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট, কলা অনুষদ ও আইন অনুষদের ডিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজ, এমসি কলেজ, ভিক্টেরিয়া কলেজ ও মাদরাসা-ই-আলিয়ার অধ্য, পূর্ববাংলা মাধ্যমিক শিা বোর্ডের সভাপতি, পঙ্কজ কুমার ঘোষ, মিজানুর রহমান, রাজ খগেন্দ্র নারায়ণ মিত্র বাহাদুর, আবদুলাহ আল মাহামুদ, এসএ সেলিম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর। বহিষ্কারাদেশ : ১৯৪৯ সালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন ও যোগদানের অপরাধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ররহমানসহ যে ৫ জন শিার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় তাদের মধ্যে অন্যরা হলেন-কালায়নচন্দ্র দাস গুপ্ত, নাইমুদ্দিন আহমেদ, নাদিরা বেগম ও মুহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ। এই ৫ শিার্থীকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য ১৭ এপ্রিলের মধ্যে অভিভাবকের সম্মতিপত্র ও ১৫ টাকা জরিমানাসহ হল প্রভোস্টের কাছে আবেদন করতে বলা হয়।

বঙ্গবন্ধু বাদে বাকি ৪ জন আবেদন করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনে সমর্থনকে যৌক্তিক মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। ফলশ্র“তিতে ১৮ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন তৎকালীন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার : বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভা বসে। এ সভায় ১৭ জন সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ১৪ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতির জনকের ওপর অবৈধ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক। সভায় ১৯৪৯ সালের গৃহীত সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য করা হয়। সভাশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তিকৃত ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন ও নেতৃত্বদান ছিল তার অসাধারণ দূরদর্শী ও জ্ঞানদীপ্ত গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। অধিকন্তু এটি ছিল ওই সময়ের সাহসী ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে একটি সাহসী পদপে।

কর্মচারীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ ছিল যথার্থ। তাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অনৈতিক, ন্যায়বিচার ও জঁষব ড়ভ ধঁফর ধষঃবৎবস ঢ়ধৎঃবস-এর পরিপন্থী ছিল বলে আজকের সভা মনে করে। তাই ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত ওই বহিষ্কারাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সর্বসম্মতিক্রমে আজ (১৪-৮-২০১০) প্রত্যাহার করছে। ’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরিমানা ও মুচলেকা প্রদান না করে সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান যে সাহসী প্রতিবাদী ভূমিকা রেখেছিলেন তা এ সভা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৪৯ সালে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্য যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এ সভা তাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।

’ সভা থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা এ বহিষ্কারাদেশ বহু আগেই প্রত্যাহার করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন এবং বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের প্রস্তাব সিন্ডিকেটে উপস্থাপনের জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিককে সিন্ডিকেটের প থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়। কর্তৃপরে বক্তব্য : এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে শিার্র্র্থীদের অংশগ্রহণ সঠিক ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপরে দেয়া বহিষ্কারাদেশ ও জরিমানার আদেশটি ছিল অযৌক্তিক। এত বছর পর হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছে। তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে একটি ভুল সিদ্ধান্তের পরিসমাপ্তি ঘটল ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হল। ছাত্রলীগের অভিনন্দন : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।

শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা এ অভিনন্দন জানান। নেতৃদ্বয় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বৈরাচারী প্রশাসন ও সিদ্ধান্তকে অন্যায় সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে বলেন, এ অবৈধ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় আজ জাতির কাছে দায় মুক্ত হল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.