আমি ভাই জিপসী মানুষ । বাংলাতে যাকেবলে যাযাবর । আমি অলটাইম রাস্তা-ঘাটে থাকি । এখান-সেখান ঘুরে বেড়াই । সমাজের হাল-চিএ অবলোকন করি আর ভাবি ।
আজ এ জগতে থাকি তো কাল ওজগতে,আজ মামার বাড়ী কাল চাচার বাড়ী। কখনো বিজনেস করি কখনো জব । কখনো পড়াশোনা করি কখনো......শ
রোজার সময় সাধারণত যে ধরনের খাবার আমরা খাই, তা কতটুকু স্বাস্থ্যকর, তাদের পুষ্টিমূল্যই বা কেমন, তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম আখতারুজ্জামান-এর পরামর্শ তুলে ধরা হলো ।
সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে আমাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি ভাজা ও তেলযুক্ত বিভিন্ন খাবার যেমন পিঁয়াজু, পিঁয়াজ-মরিচ ও মুড়িসহযোগে লোভনীয় ছোলা ভাজা খাওয়া হয়। জিহ্বায় পানি আনা এসব মুখরোচক খাবার থেকে নিজেদের বিরত রাখা সত্যি বেশ কঠিন।
তবে এসব খাবারের পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে ইফতারে পদ নির্বাচন যেমন সুবিধাজনক হয় তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হয়।
ইফতারে বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং এর পুষ্টিমূল্য
আমাদের দেশে ইফতারের অত্যন্ত সাধারণ একটি পদ হলো পিঁয়াজু। এটি ডালের সঙ্গে পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলা মিশিয়ে তেলে ভাজা একটি খাবার। আমরা বাড়িতে যে পদ্ধতিতে বুটের ডালের সঙ্গে মাংস মিশিয়ে টিকিয়া প্রস্তুত করি, পিঁয়াজুর প্রস্তুতপ্রণালীও অনেকটা সে রকম। পিঁয়াজু তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের ডাল বেটে ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহৃত ডালের মধ্যে আছে মসুর, খেসারি প্রভৃতি। অনেকে মসুর ডালের পরিবর্তে বুটের ডালও ব্যবহার করে থাকেন। সব ধরনের ডালই হলো উদ্ভিজ্জ আমিষ, যা কি না দেহের ক্ষয় পূরণে সাহায্য করে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, সারা দিনের রোজা শেষে ডালের বড়া বা পিঁয়াজু আমাদের দেহের জন্য কি আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত? এর উত্তর নির্ভর করে আপনি পিঁয়াজু ভাজার জন্য কী ধরনের তেল ব্যবহার করছেন এবং দৈনিক কয়টি পিঁয়াজু খাচ্ছেন তার ওপর।
প্রতিদিনের পিঁয়াজু ভাজার জন্য যদি একই তেল একের অধিকবার ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাইরের খোলা জায়গায় ভাজা পিঁয়াজুর ক্ষেত্রে ঠিক এ ব্যাপারটাই ঘটে থাকে। কারণ সেখানে একই তেল ভাজার জন্য বারবার ব্যবহার করা হয়। আবার কেউ যদি প্রতিদিনই একসঙ্গে অনেক পিঁয়াজু খেতে থাকেন, সেটাও পরবর্তী সময়ে এসিডিটিসহ দেহে নানা জটিলতা সৃষ্টি করবে। এ জন্য পিঁয়াজু খাওয়ার সময় পরিমাণের দিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।
এবার আসা যাক ছোলা ভাজা বা বুট ভাজা প্রসঙ্গে।
এটিও যেহেতু ডাল দিয়েই প্রস্তুত করা হয়, তাই এরও পুষ্টিমূল্য পিঁয়াজুর মতোই। উদ্ভিজ্জ আমিষ হওয়ার কারণে বুটও আমাদের দেহের ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। উপরন্তু ছয়-সাত ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার ফলে এতে থাকা এনজাইমগুলো সক্রিয় হয়ে যায়, যা দেহের জন্য দারুণ উপকারী। অবশ্য ছোলার সঙ্গে ব্যবহৃত মুড়ির ব্যাপারে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ বাজার থেকে কেনা মুড়িতে অনেক ধরনের ধুলাবালি-ময়লা মিশে যায়, যা পরে পেটের পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অনেকেই আবার ইফতারে কাঁচা ছোলা খেয়ে থাকেন, সেটাও শরীরের শক্তিবর্ধনে বেশ সহায়ক। পিঁয়াজু বা ছোলা ছাড়াও আমরা বেসন দিয়ে ভাজা বেগুনি, আলুনি ইত্যাদি খেয়ে থাকি। বেসন ডালের গুঁড়ো দিয়ে প্রস্তুত করা হয় বলে এরও কার্যকারিতা পিঁয়াজু বা ডালের মতোই। কিন্তু তেলের ব্যাপারে অবশ্যই লক্ষ রাখা জরুরি। আর কোনো খাবারই যেন খুব বেশি পুড়ে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
কারণ অধিক পরিমাণে জারিত বা পুড়ে যাওয়া খাবার স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর।
এ ছাড়া ইফতারের সময় অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন শসা, কলা, খেজুর খেয়ে থাকেন, সেগুলোও শরীরের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে। খেজুর সহজপাচ্য হওয়ায় এটি হজমে বিশেষভাবে কার্যকর। ইফতারের আয়োজনে দু-একটি মিষ্টি-জাতীয় খাবার যেমন জিলাপি বা মিষ্টি থাকলে সেটা শর্করার অভাব পূরণে সাহায্য করবে। কিন্তু ক্ষতিকারক রং দিয়ে প্রস্তুত করা জিলাপি বা মিষ্টি গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
তবে রোজার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি লক্ষ রাখতে হবে সেটি হলো, রক্তের তারল্য ও স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখা। এ জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, শরবত-জাতীয় খাবার ইফতারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কী পরিমাণ ইফতার করা স্বাস্থ্যসম্মত
অনেকেই মনে করে থাকেন, সারা দিন যেহেতু না খেয়ে থাকা হয়, তাই দেহের ঘাটতি পূরণে ইফতারের পর থেকে প্রচুর পরিমাণ খাওয়াদাওয়া করা উচিত, যা একটি ভুল ধারণা। এ ছাড়া রোজার দিনে অন্যান্য দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ করে বাসায় শুয়ে-বসে কাটানোও ঠিক নয়। এ সময়ও অন্য দশটি দিনের মতো সব কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকা উচিত।
স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য একজন মানুষের দৈনন্দিন ১৮০০ কিলো ক্যালরি শক্তি প্রয়োজন। লিঙ্গ, বয়স, ওজন, উচ্চতা ও কাজের ধরনভেদে এই পরিমাণের সামান্য তারতম্য হয় ঠিকই, কিন্তু রোজা রাখা হয় বলে শরীরের ক্যালরির চাহিদা বাড়ে না। এ সময় যদি চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা হয়, তাহলে উপকারের চেয়ে অপকারই হবে বেশি। বেশি খাবার খেলে তা চর্বি আকারে শরীরে জমা হয়। বিশেষ করে ইফতারের সময় একেবারে ভরপেট খেয়ে ফেলা কোনোমতেই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়।
বরং ইফতারের দুই-আড়াই ঘণ্টা পর আমরা যে রাতের খাবারটুকু খেয়ে থাকি সেটা একটু ভারী করা যেতে পারে; কিন্তু তখনো যেন অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
সেহ্রির খাবার
সেহ্রির খাদ্যতালিকায় থাকবে মোট খাবারের তিন ভাগের এক ভাগ ফলমূল ও শাকসবজি। বাকি তিন ভাগের এক ভাগে রাখুন ভাত, রুটি, পাউরুটি, আলুর মতো কার্বহাইড্রেট-জাতীয় খাবার। এর সঙ্গে প্রোটিন হিসেবে রাখুন মাছ, মাংস, অল্প চর্বিযুক্ত খাবার, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
কার্বহাইড্রেট খাবার বাছাইয়ের সময় কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট রাখলে সারা দিন শরীরে শক্তি পাওয়া যায়।
কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি উৎপাদন করে। ঢেঁকিছাঁটা চাল, বাসমতি চাল, ওট, লাল আটা কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট-জাতীয় খাবার।
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারও ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। যেমন_ছোলা-বুট, শিমের বীজ, খোসাসহ আলু, শাকসবজি ও প্রায় সব ধরনের ফলই ফাইবারসমৃদ্ধ।
সতর্ক থাকুন কিছু বিষয়ে
রোজায় কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত খাবারদাবারে অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকেই এ সমস্যা দেখা দেয়।
সারা দিন খাওয়া হয় না; কিন্তু খাবারের কথা চিন্তা করা হয়, ক্ষুধা পায়_ফলে পাকস্থলীতে অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই এসিড নিঃসৃত হয়। কিন্তু পেট খালি থাকে বলে এই এসিড দিয়ে হজম হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সেখানে থাকে না। তাই যাঁদের এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের তো বটেই; যাঁদের এসিডিটি বা বুকজ্বলা সমস্যা নেই তাঁরাও বুকজ্বলা সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
ওষুধ খেয়ে বুকজ্বলা সমস্যা কমিয়ে রাখা যায়, তবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সমস্যাটি দূর করা বেশি ভালো।
যাদের এসিডিটি সমস্যা আছে বা রোজায় খুব বেশি হয় তাঁদের তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া, বাসি ও অধিক মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে ইফতারে। তাঁরা সহজপাচ্য খাবার খেলে উপকার পাবেন। শরবত, খেজুর ইত্যাদির সঙ্গে বিভিন্ন রকম ফল ও কম তেলযুক্ত খাবার তাঁদের জন্য বেশি দরকারি।
না খেয়ে থাকার জন্য যেমন ক্ষুধা লাগে তেমনি পানি পিপাসাও বোধ হয়।
এর কারণ পানিশূন্যতা। এ সমস্যাটি প্রায় প্রত্যেক রোজাদারের হয়। প্রস্রাব ও ঘামের মাধ্যমে শরীর যে পরিমাণ পানি হারায় তা দিনের বেলা পূরণ হয় না বলে দিনের শেষভাগে (ইফতারের আগে) প্রবল পানি পিপাসা হয় ও শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
অনেকের রোজার দিনে মাথাব্যথা সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। এর কারণও পানিশন্যতা।
পাশাপাশি ঘুম কম হওয়া, রেস্ট কম নেওয়া, চা-কফি পান না করাও কারণ হিসেবে কাজ করে।
রোজার সময় পানিশূন্যতা পূরণের জন্য সেহ্রি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এ পানি একবারে পান না করে বারবার পান করা উচিত। ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বারবার পানি ও তরল খাবার খেতে পারেন। সেহ্রিতেও বেশি করে পানি পান করতে পারেন।
বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দিনের বেলা রোদ এড়িয়ে চলুন, শারীরিক পরিশ্রমের কাজ কমিয়ে দিন।
অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন হয়। সাধারণত সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়ার কারণে এবং পানিশূন্যতার জন্য এ সমস্যা হয়। যাঁদের বেশি হয় তাঁরা সেহ্রি, ইফতার ও রাতের খাবারে বেশি করে সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
ডায়াবেটিস যাঁদের আছে তাঁরা দুবার করে রক্তে সুগারের মাত্রা পরিমাপ করুন।
বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাঁদের অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীরা সব ধরনের খাবার ইচ্ছেমতো খেতে পারেন না, তাই কতটা খেতে হবে, কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।
মনে রাখবেন
এই এক মাসে যেন ইফতারে ও বাহ্যিক আয়োজনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যায় সবাই। ইফতারির আয়োজন কার বাড়িতে কত বড়_সেটাও যেন হয়ে উঠে সামাজিকতা-লৌকিকতার একটা অনুষঙ্গ। খাবারের আয়োজনকে সংক্ষিপ্ত করলে রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য যেমন সফল হবে তেমনি শরীর থাকবে ভালো।
সৌজন্যে কালের কন্ঠ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।