আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামিনা চৌধুরী’র একান্ত সাক্ষাতকার


কবিতা পড়ার প্রহর, সময় যেন কাটে না, একবার যদি কেউ ভালোবাসতো- এসব গান বাংলাদেশের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। আর এসব গানের শিল্পী হলেন সামিনা চৌধুরী। সঙ্গীতের সাধক এই শিল্পী অনির্বানের আমন্ত্রনে সম্প্রতি সিডনী ঘুরে গেলেন। সিডনী থাকাকালিন সময়ে তার সাথে কথা হয় প্রবাসে বাংলাদেশের চিফ এডিটর ইকবাল ইউসুফ টুটুলের সাথে। তাদের কথোপকথোনের বিশেষ অংশগুলো তুলে ধরছি।

প্রবাসে বাংলাদেশ: সিডনী কেমন লাগছে? সামিনা চৌধুরী: অনেক ঠান্ডা। তাছাড়া এমনিতে অনেক ভালো লাগছে। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে এখানকার পথে বাংলাদেশের মতো জ্যাম নেই। প্রবাসে বাংলাদেশ: আপনি তো নতুন কুঁড়ির মাধ্যমে সঙ্গীত জগতে এসছেন।

কে আপনাকে নতুন কুঁড়ির ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে? সামিনা চৌধুরী: আসলে নতুন কুঁড়িতে আমি হুজুগে অংশ গ্রহন করেছি। নাম দিয়ে দিলাম, গান গাইলাম, দেখী প্রথম হয়ে গেছি। তখন আমি সবে মাত্র স্কুলে। ঐ সুবাদেই আলাদীন আলী আমাকে ডেকে বসল। আর এর পর থেকেই বড়দের সাথে গাইতে শুর করলাম।

আমি খুব ভাগ্যবান যে আমি ছোট থাকতেই বড়দের সাথে গাইতে শুর করেছি। আসলে নতুন কুঁড়িটাই আমার জীবনের পরিবর্তন এনে দিয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশ: আগের দিনের গান আর এখনকার গান কোনটা ভালো? সামিনা চৌধুরী: এখনকার মিউজিক, মানে কম্পোজিশন অনেক ডেভেলপড। এখন অনেক ভালো ভালো গান হচেছ। তবে আগেকার দিনের গানে যেসব কারকাজ ছিল, এখনকান দিনের গানে সেগুলো খুব কম ব্যবহার হয়।

আগেকার দিনের গান মানুষ হদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারতো। আর এখনকার দিনের গান মাত্র ২/৩টা সুরের মধ্যে খেলাধুলা করে। যারা গান শোনার জন্য শোনে তাদের এতোবেশী মাথা ঘামাতে হয়না। এখনকার গানের সুর খুবি সহজ। এতো সহজ সুর আমার ভালো লাগেনা।

প্রবাসে বাংলাদেশ: আপনিতো বাংলা গানের নকল প্রবনতার বিরদ্ধে সবসময় সংগ্রাম করেছেন। ফলে একসময় অনেকদিন আপনাকে সঙ্গীত জগতের বাইরে রাখা হয়েছিল। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? সামিনা চৌধুরী: আসলে এরকম কিছু কখনো ঘটেনি। আসলে আমিতো স্কুলে পড়া অবস্থায় সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করি। তখন তো আমি অনেক ছোট।

তো সেই সময় আমাদের দেশের অনেক বড় গায়ক গায়িকারা ভারতের সুর নকল করে গাইতো। তো আমি একবার পত্রিকায় বলেছিলাম এটা উচিত নয়। তখন তাদের গায়ে এটা লেগেছিল। তারা বলেছিল ছোট মেয়ে এতো বড় বড় কথা কেন বলে? এর পর বিভিন্ন পলিটিক্রা শুর হয়ে যায়। সবাই বলে স্কুলের মেয়ে কেন বড়দের গান গায়? আর এই পলিটিক্রা করে আমাকে গ্রায় ১০ বছর গান গাইতে দেয়া হয়নি।

আসলে পলিটিক্রোর স্বীকার। প্রবাসে বাংলাদেশ: ভালো সঙ্গীত শিল্পী হতে হলে কি কি গুন থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন? সামিনা চৌধুরী: ভালো সঙ্গীত শিল্পী হতে হলে প্রথমে ভালো মানুষ হতে হবে। বিনয়ী হতে হবে। গলায় সুর থাকতে হবে। আবেগ থাকতে হবে, লোভ ত্যাগ করতে হবে।

প্রবাসে বাংলাদেশ: আপনিতো বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের বিচারক হিসাবে কাজ করেছেন। কেমন লাগে এসব অনুষ্ঠানে কাজ করতে? সামিনা চৌধুরী: বিচারক হিসাবে কাজকরা অনেক কঠিন। কেউ হয়তো অনেক ভালো গাইছে কিন্তু একটি এপিসোডে খারাপ করেছে, আমাকে তখন ঐ এপিসোডের উপর ভিত্তি করে মার্ক দিতে হয়। আমি হয়তো চাচ্ছি সে প্রথম হোক অথচ এসএমএসের কারনে সে হয়তো খারাপ করছে। তখন আরো বেশী কষ্ট হয়।

আবার যখন দেখী ৫জনই ভালো, কাকে রেখে কাকে বেশী নম্বর দেই তখনো কষ্ট হয়। প্রবাসে বাংলাদেশ: কখনো কখনো আপনাদের বিচারকদের মধ্যে মত বিরোধ দেখাদেয়। এসম্পর্কে কিছু বলেন? সামিনা চৌধুরী: এটাতো হবেই। এটা হওয়াই স্বাভাবিক। সবারতো আলাদা আলাদা মতামত থাকবেই।

তবে এটা আমরা উপভোগ করি। প্রবাসে বাংলাদেশ: এখন কোন এ্যালবাম নিয়ে কাজ করছেন? সামিনা চৌধুরী: নতুন কোন এ্যালবাম নিয়ে কাজ এখনো শুরু করিনি, তবে ফুল ফোটে, ফুল ঝরে যায় এর পার্ট টু তৈরী করব। আর শ্রোতাদের অনুরোধে আমার পুরোনো গানের রিমিক্রা করার ইচ্ছা আছে। প্রবাসে বাংলাদেশ: আপনি তো বাইরে যেমন টেক্রাাসে, অষ্ট্রিনে বিভিন্ন গানের স্যুটিং করেছেন, যেমন- সময় যেন কাটেনা ইত্যাদি। অষ্ট্রেলিয়ায় এরকম কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি? সামিনা চৌধুরী: আসলে অষ্টিনের ওটা করা হয়েছে কারন ওরা ওখান থেকে আমাকে আমন্ত্রন জানিয়েছিল।

ওদের আমন্ত্রন এতো বেশী ভালোছিল যে আমি না করতে পারিনি। এখানকার কেউ তেমন প্রোপজ করলে করা হতেও পারে। কারন অষ্ট্রেলিয়া এতো সুন্দর আর অদ্ভুত আমি কল্পনাও করিনি। প্রবাসে বাংলাদেশ: আপনার ছেলে-মেয়ে তেজী ও বীরবল আপনাকে গানের জগতে উৎসাহিত করে কি? সামিনা চৌধুরী: অবশ্যই। ওরা এখন আমার ভুল ধরে।

এবার আসার সময় অবশ্য খুব কান্নাকাটি করছিল। বলছিল মা তোমার কি বিদেশে না গেলে হয়না। তুমি এখানেই অনুষ্ঠান কর। তবে তারা আমার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে। বিশেষ করে কোন গ্রোগ্রামে নিয়েগেলে সারাক্ষন চুপ করে বসে থাকে।

প্রবাসে বাংলাদেশ: আর আপনার স্বামী? সামিনা চৌধুরী: আসলেই ও আমাকে অনেক সাহায্য করে। কালকেও আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছে তোমার প্রোগাম কেমন হলো। আর বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন ক্ষুদে গানরাজ এর পরিচালকও সে ছিল। আর এই সুবাদে ঝগড়াও কম হয় না। আমি হয়তো কাউকে নিয়ে মন্তব্য করেছি, ও বলবে এটা কেন বল্লে­? আমি বলি আমি বিচারক, আমি তো বলবোই।

আর লেগে গেলো ঝগড়া। তবে আমাদের দু’জনার বোঝাপড়া অনেক ভালো। কিছুক্ষন পরেই আবার সব ঠিক। প্রবাসে বাংলাদেশ: শিল্পী না হলে কি হতেন? সামিনা চৌধুরী: আমার ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হওয়ার। আর নাহলে অবশ্যই আমি চিত্রশিল্পী হতাম।

তাও না হলে অভিনয় শিল্পী। হাহ্ ....... প্রবাসে বাংলাদেশ: এখনকার বেশীরভাগ সঙ্গীত শিল্পী অভিনয়ে আগ্রহী, আপনার মতামত কি? সামিনা চৌধুরী: আসলে কেউ যদি দুটোই সামলাতে পারে তাহলে ভালো। কিন্তু আমার মনে হয় একসাথে দুটো চালাতে গেলে যে কোন একটা কম গুরুুত্বপূর্ন হয়ে পড়ে। আমি কিন্তু অভিনয়ে ছিলাম। পরে গানে চলে এসেছি।

অভিনয় অনেক কঠিন ব্যাপার। শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম, অভিনয় হয়ে গেল এমন নয়। অবশ্য আজকাল সব ডিজিটাল হয়ে গেছে। বেসুরায় গান গাচ্ছে, কম্পিউটারে ঠিক করে নিচেছ। অভিনয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম, ডায়লগ আলাদা করে সেট করছে।

সবকিছু সহজ হয়ে গেছে। প্রবাসে বাংলাদেশ: আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু বলেন? সামিনা চৌধুরী: আমার বাংলাদেশ সম্পর্কে একটাই স্বপ্ন। সব মানুষের মধ্যে নিয়ম, শৃঙ্খলা, সততা, পরিচছন্নতা থাকবে। আর রাস্তা গুলো পরিষ্কার, জ্যাম বিহীন হবে। আমি স্বপ্নে এই বাংলাদেশ কল্পনা করি।

প্রবাসে বাংলাদেশ: নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে উপদেশ মুলক কিছু বলেন। সামিনা চৌধুরী: নাহ্ আমার কোন উপদেশ নাই। এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক ভালো, অনেক সচেতন। তারা নিজেরাই অনেক ভালো বোঝে। ওদের উপদেশ দেয়া মানেই ঝামেলায় ফেলে দেয়া।

আমি তাদের জন্য অনেক দোয়া করি। প্রবাসে বাংলাদেশ: আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাদের কিছু সময় দেয়ার জন্য প্রবাসে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সামিনা চৌধুরী: প্রবাসে বাংলাদেশের জন্যও আমার শুভেচ্ছা রইলো।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।