আমার বন্ধু টিপুর বয়স কত হল তা ঠিক বলতে না পরলেও এটা বলতে পারি, তার চেয়ে তার প্রেমের বয়স বেশি হবে।
সেই কবে থেকে প্রেম করে সে। ভাবতে গেলেও টায়ার্ড লাগে। অনেক আগে থেকেই গৌরি নামের একটি মেয়ের সাথে প্রেম করত। আনন্দের বিষয় সে প্রেম এখনও আছে।
তারা আবার প্রতিবছর প্রেমের জন্মদিন পালন করত। আমরা যেতাম।
সেটাও এত আগের স্মৃতি যে, মনে করতে চাইলে এমন স্মৃতি ভেসে আসে যেন আমরা সেজেগুজে আমাদের মা বাবার সাথে তাদের প্রেমের জন্মদিনের দাওয়াত খেতে যাচ্ছি।
অনেক আগের স্মৃতি তো! চিত্রটা এমনই আসে করব কী?
টিপুর প্রেম আমাদের জন্য চিরকালই একটা ঐতিহ্যের মত। স্পর্শকাতর বিষয়।
সেটা টিপুর নিজের জন্যও স্পর্শকাতর ছিল। প্রেমের ব্যাপারে সে অন্যরকম।
একবার টিপু আর গৌরির মধ্যে মান অভিমান দেখা দিল। আমরা শুনতে পেলাম টিপু আত্মহত্যা করতে গেছে নদীতে।
ছুটে গেলাম।
গিয়ে দেখি টিপু হাত ভাসিয়ে রেখে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। অবাক হলাম। আগে আসা বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলাম, কাহিনী কী?
জানলাম, এই হাতের জন্য টিপু আত্মহত্যা করতে পারছেনা। ডুবে যেতে পারছেনা।
যে হাতে সে গৌরির হাত ছুঁয়েছে সে মরে গেলেও হাতটাকে এভাবে ডুবতে দিতে চায়না।
শীতলক্ষার ময়লা পানিতে গৌরিকে ছোঁয়া টিপুর হাত অপবিত্র হতে পারেনা।
সে যাত্রায় হাতের কারণে টিপুর আত্মহত্যা হয়নি।
মানুষ প্রেমে পড়লে পাগর হয়। টিপু কিছুটা আঁতেল হয়ে গিয়েছিল।
এসএসসি পরীক্ষার পর যে টিপু বিমাল বিশাল ভাষনে এটা প্রমাণ করতে ব্যাস্ত ছিল, জীবনে একটা জিনিসই শেখার মত সেটা হচ্ছে কম্পিউটার।
সেই টিপুই প্রেমে পড়ার পর হঠাৎ কি মনে করে বেহালা শেখার জন্য উঠে পড়ে লাগল। পরে জেনেছিলাম, গৌরি বেহালা পছন্দ করে।
টিপু চাকরীজনিত কারণে একটু দুরে থাকে। আমাদের মাঝে আসে মাঝে মাঝে। আমাদের এখানে আরও কম আসে তার বিয়ে নিয়ে কথা বলি আমরা।
জিজ্ঞাসা করি, বিয়ে করবে কবে?
টিপু গৌরি হয়তো বিয়ে করবে না। তারা হয়তো ঠিক করে ফেলেছে প্রেম করেই কাটিয়ে দেবে। আমরা আতঙ্কে আছি, এত বছর প্রেম করার পর আর কিছু থাকে বলে মনে হয়না। বিতৃষ্ণা আসার কথা। তাদের আবার বিতৃষ্ণা এসে যাচ্ছে কিনা? জানিনা।
কিন্তু এখন আর সেটা জিজ্ঞাসা করতে পারিনা। এখন সে ম্যাসেঞ্জারে আছে। বেশ কিছুদিন হল তার সাথে আমার কথাবার্তা বন্ধ। সম্প্রতি সে কি মনে করে আমাকে বলল, পরিচিত কোনও মেয়ের নাম্বার আছে কিনা? থাকলে দিতে। তার হাতে নাকি এখন অনেক টাইম।
টাইমপাস করার একটা কিছু দরকার।
আমি দ্রুত আমার আরেক বন্ধুকে ফোন দিলাম। টিপুর অধঃপতনের কথা জানালাম এবং দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং যোগার করে আমাদের এলাকার একটা মেয়েলী টাইপের ছেলে সবুজের নাম্বার দিয়েছিলাম।
সে থেকে টিপু আমার সাথে কথা বলে না।
যদিও টিপুকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম ফোন দিয়েছিল কিনা? নাম্বার যে আমাদের কাছ থেকে পেয়েছে সেটা ওই মেয়ের কাছে বলেছে কিনা? অথবা ওই মেয়েই তাকে কি বলেছে?
টিপু অবশ্য সব তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, আরে দুর এত টাইম কই কথা বলার?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।