"দেহ অনাবৃত রাখা যদি আধুনিকতার বিষয় হয়, তবে পশু-পাখি পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক প্রাণী। "
জীবন মানেই যুদ্ধ, জয় কর। জীবন মানেই মানবতা, মানবিক হও।
প্রেসিডেন্সি কলেজের বার্ষিক উৎসব। সভাপতি হয়েছেন ইতিহাসের অধ্যাপক ইএফ ওটেন।
কয়েকজন ছাত্র উদ্বোধন সংগীত গাইতে শুরু করল- বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার দেশ। ইংরেজ সাহেবের সেই গান সহ্য হল না। বক্তৃতা দেওয়ার সময় রাগ ফেটে পড়লো। বললেন, ইউ বেঙ্গলিজ আর বার্বেরিয়ানস। ছাত্ররা সব সভা ছেড়ে চলে গেল।
উত্তেজিত হয়ে উঠল সব ছাত্ররা। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি বললেন, ওটেন সাহেব শুধু ছাত্রদের নয়, বাঙালি জাতকে অপমান করেছে। এর প্রতিশোধ নিতেই হবে।
সুভাষের পরামর্শে কলেজের গেটে পরদিন থেকে পিকেটিং শুরু।
কোনো ছাত্রকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হলো না। প্রিন্সিপাল এইচআর জেমস ডেকে পাঠালেন ছাত্রদের দলপতিকে। সুভাষ গিয়ে দেখেন ওটেন সেখানে উপস্থিত। প্রিন্সিপাল আগেরকার দিনের ঘটনাটি শুনেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ওটেন সাহেবের ঐ মন্তব্য করা উচিত হয়নি।
তিনি ওটেনকে এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বললেন ছাত্রদের কাছে। কিন্তু উদ্ধত ওটেন ক্ষমা প্রার্থনা করলেন না, দুঃখ প্রকাশ করলেন। ধর্মঘট মিটে গেল।
ওটেনের কিন্তু মনের রাগ কমেনি। বরং ছাত্রদের কাছে দুঃখ প্রকাশেও তিনি নিজের পক্ষে অবমাননার ব্যাপার মনে করতে লাগলেন।
সেই ক্ষোভ ধীরে ধীরে তার মনে সঞ্চিত হতে লাগলো। একদিন সামান্য এক অজুহাতে এক ছাত্রকে তিনি ঘুষি মারলেন।
সহপাঠির উপর এ আঘাতকে নিজের ওপর আঘাতের সামিল মনে করলেন সুভাষ। তিনি একদিন ক্লাসে ঢুকবার মুখে সিঁড়ির ওপর ওটেন সাহেবকে ঘুষি মেরে বসলেন। এরপর ফল হল খুবই মারাত্মক।
বিদ্রোহী ছাত্রদের নেতা হিসেবে সুভাষচন্দ্রের উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেওয়া হলো। কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষকে ডেকে বললেন- সুভাষ, কলেজের মধ্যে তুমি সবচেয়ে দুর্দান্ত ছেলে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে তোমাকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হলাম।
২.
পিতা জানকীনাথ বসু ছিলেন কটকের একজন খ্যাতনামা উকিল। সেখানেই ২৩ জানুয়ারি, ১৮৯৭ সালে সুভাষচন্দ্রের জন্ম।
কটক থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে তিনি কলকাতায় চলে যান পড়াশোনা করতে। জানকীনাথ প্রচুর অর্থোপার্জন করতেন। অর্থব্যয়ে তার কোনো কার্পণ্য ছিল না। কাজেই জানকীনাথের পরিবারবর্গের মধ্যে পুরোমাত্রায় সাবেীয়ানা বজায় ছিল। কিন্তু শৈশব থেকেই সুভাষচন্দ্রের বিদেশি চালচলনের দিকে ছিল বিতৃষ্ণা ।
বাড়ির অন্যান্য ছেলেরা সাহেবী পোশাক পরে স্কুলে-কলেজে যেত। কিন্তু সুভাষচন্দ্র পরতেন বাঙালির পোশাক- জামা ও ধুতি। তিনি বলতেন, আমরা বাঙালি, জাতীয় পোশাকই তো আমাদের গৌরব।
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হবার পর দু’বছর সুভাষচন্দ্রকে বসে থাকতে হলো। তারপর গেলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে।
আশুতোষ তখন তাকে স্কুটিশ চার্চ কলেজে পড়বার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই কলেজ থেকেই কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন সুভাষচন্দ্র।
৩.
১৯১১ সালের ১১ আগস্ট ছিল কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসির দ্বিতীয় বার্ষিক দিবস। সুভাষের নেতৃত্বে কলেজিয়েট স্কুলের সব ছাত্র সেদিন উপবাস করে পালন করল সেই পূণ্য দিনের স্মৃতি।
কটকের সেই কলেজিয়েট স্কুল থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যায়ের সকল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার গৌরব লাভ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র।
কলকাতার স্কুটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর পিতা জানকীনাথ সুভাষচন্দ্রকে আইসিএস পড়বার জন্য বিলেতে পাঠালেন। তার আকাঙ্ক্ষা, ছেলে আইসিএস হয়ে বড় সরকারি চাকরি হবে। বিলেতে মাত্র আট মাস অধ্যায়ন করে মেধাবী সুভাষচন্দ্র আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করলেন। আরও কৃতিত্বের ব্যাপার, সমস্ত ইংরেজ ছাত্রদের পেছনে ফেলে ইংরেজিতে তিনি অধিকার করলেন প্রথম স্থান।
৪.
এই সময়ে ভারতের রাজনীতির ক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধীর আর্বিভাব ঘটেছে।
তার নেতৃত্বে জেগে উঠেছে সারা ভারত। পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচন করার জন্য দিকে দিকে শুরু হয়েছে প্রবল আন্দোলন। সুভাষচন্দ্র বিলেত থেকে ফিরে ভারতের মাটিতে পা দিয়েই সোজা গান্ধীজীর কাছে গিয়ে দাড়ালেন। প্রবীণ ও নবীন দুই যুগনায়কের হল মিলন। দু’জনের মধ্যে অনেক আলোচনা হল।
সুভাষচন্দ্র গান্ধীজীর কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তখন গান্ধীজী বললেন, সুভাষ তুমি অবিলম্বে বাংলায় গিয়ে দেশবন্ধুর সঙ্গে দেখা করো। দেশবন্ধুই তোমার যোগ্যতম গুরু।
সুভাষচন্দ্র কলকাতায় এসে দেশবন্ধুর সঙ্গে দেখা করলেন। সুভাষচন্দ্র কথা শুনে ও তার মনের দৃঢ়তার পরিচয় পেয়ে খুবই খুশী হলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন।
বললেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য এতদিন আমি তোমারই মত একজন সেনাপতির খোঁজ করছিলাম।
লোকের মুখে মুখে তখন দেশবন্ধু ও সুভাষচন্দ্রের নাম। ইংরেজ সরকার দুজনকেই গ্রেপ্তার করল। বিচারে হল দু’জনের ছয় মাস কারাদণ্ড। একই কারাগারের বিভিন্ন কক্ষে বন্দী রইলেন দুই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক।
দু’জনের যখন কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেন তখন বাংলাদেশের নানা অঞ্চল বন্যায় ভেসে গিয়েছে। অধিবাসীদের দুঃখ দুর্দশার অন্ত নেই। আশ্রয় নেই, খাদ্য নেই বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের। শিশু ও নারীদের অবস্থাটাই সবচেয়ে ভয়াবহ। আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি সাহায্য সমিতি গঠিত হল।
চিত্তরঞ্জন সুভাষকে বললেন প্রফুলচন্দ্রের সহযোগী হয়ে বন্যাত্রাণে এগিয়ে যাবার জন্য। সুভাষচন্দ্র স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করে ঘুরে ঘুরে অর্থ, বস্ত্র, খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করলেন। তারপর ছুটে গেলেন ভেসে যাওয়া দুর্গত এলাকায়।
৫.
১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের জীবনাবসান ঘটল। দুঃখের বিষয় সুভাষচন্দ্র সেই সময়ে কারাগারে বন্দী ছিলেন।
১৯৪২ সালের ২৫ অক্টোবর বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স আইন অনুসারে তাকে বিনা বিচারে আটক করা হয়েছিল। তার জীবনের উপদেষ্টার মৃত্যুতে সুভাষচন্দ্র যেমন দুঃখের অভিভূত হলেন, তেমনি তার উপর কাজের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। স্বরাজ্যদল পরিচালনার ভার পড়ল তার হাতে। তাছাড়াও বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতি, দাক্ষিণ কলকাতা সেবক সমিতি ও ইয়ং বেঙ্গল পার্টির পরিচালনার কাজ তাকেই করতে হত। ইংরেজি ‘ফরোয়ার্ড’ এবং বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ‘বাংলার কথা’ পত্রিকারো তিনি সম্পাদনা করতেন।
‘বাংলার কথা’ এবং ‘ফরোয়ার্ড’ পত্রিকার ভিতর দিয়ে তিনি যা মতবাদ প্রচার করতেন তাতে দেশবাসীর মনে প্রবল অনুপ্রেরণা জেগে উঠতে লাগল। কর্মবীর সুভাষের অসাধারণ কর্মশক্তি এবং সংগঠনশক্তি প্রত্যক্ষ করে ইংরেজ সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল। কারাগারে বন্দী অবস্থায়ও তিনি তার কর্মনির্দেশ তার দলের লোকদের কাছে পাঠাতেন।
বাংলাদেশে রাখা নিরাপদ নয় মনে হয় মনে করে সুভাষকে পাঠিয়ে দেওয়া হল সুদূর মান্দালয় জেলে। সেখানে তার শরীর একেবারে ভেঙে পড়ল।
জনমতের চাপে পড়ে প্রায় আড়াই বছর ব্রিটিশ সরকার সুভাষচন্দ্রকে জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন।
জেল থেকে ফিরে এসেই তিনি আবার তার উপর অর্পিত কাজগুলো সম্পন্ন করার দিকে মনোনিবেশ করলেন। কিন্তু সুস্থিরভাবে কাজ করতে পারলেন না। আবার তাকে গ্রেফতার করা হলো। তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো মধ্যপ্রদেশের জেলে।
কিন্তু তার শরীরে দেখা গেল ব্যাধি। সেই খবর পৌছে গেল দেশবাসীর কাছে। ইংরেজ সরকার বিব্রত হয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু আদেশ জারী করা হল তিনি জার্মানি ও ইংল্যান্ড যেতে পারবেন না। তার ফলে ভিয়েনায় তার চিকিৎসা চলতে লাগল।
১৯৩৬ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগদান করার জন্য সুভাষচন্দ্র স্বদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু বোম্বেতে তাকে গ্রেফতার করা হলো। প্রায় এক বছর পর জনমতের চাপেই তাকে মুক্তি দেওয়া হল। সুভাষচন্দ্র তার চিকিৎসকদের পরামর্শে আবার ইউরোপ যাত্রা করলেন।
৬.
তখন সুভাষের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
যদিও দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর স্বরাজ্য দল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি তখন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন সুভাষ। হরিপুরার অধিবেশনে তরুণতম জননায়ক এই প্রথম জাতীয় যজ্ঞের পুরোহিতের আসন গ্রহণ করলেন। সভাপতি হিসেবে তার ভাষণ ভারতের জনগণের মনে নতুন আশা আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলল।
১৯৩৯ সালে বসবে ত্রিপুরাতে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন। মহাত্মা গান্ধী সভাপতির পদে প্রার্থী দাড় করালেন পট্টভি সীতারামিয়াকে। কিন্তু সুভাষচন্দ্র পট্টভি সীতারামিয়াকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সভাপতি নির্বাচিত হলেন। তখনই কংগ্রেসের অর্ন্তদ্বন্দ শুরু হল। কংগ্রেসের সেই ভাঙন রোধ করার জন্যই সুভাষচন্দ্র স্বেচ্ছায় সেই পদ পরিত্যাগ করলেন।
কিন্তু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে চালিয়ে নেওয়ার কাজে সুভাষচন্দ্র সঙ্কল্পে রইলেন অবিচল।
সুভাষচন্দ্র ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’ নামে একটি দল গঠন করলেন। নীতি নিয়ে দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধ থাকলেও তিনি কোনো বিবাদে যেতে চাইলেন না। জাতীয় দল কংগ্রেসের প্রতি তার শ্রদ্ধা অবিচল রইল। তিনি ভিন্নভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামকে পরিচালিত করে দেশের স্বাধীনতা লাভকে ত্বরান্বিত করার জন্য যত্নবান হলেন।
এক নতুন পরিকল্পনা ঘুরতে লাগল সুভাষচন্দ্রের মাথায়। তিনি নানা স্থানে ঘুরে রাজদ্রোহের বক্তৃতা দিতে লাগলেন। ১৯৪০ সালে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হল। জেলে অনশন শুরু করলে তাকে এলগিন রোডের বাড়িয়ে অন্তরীণ করে রাখা হল। কিন্তু বাড়ির বাইরে রইল পুলিশ পাহারা।
সেই সময় ঘটল এক আশ্চর্য ব্যাপার। ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাসে রাতে এলগিনর রোডের বিরাট অট্টালিকার পেছন দিকে দাঁড়াল একটি মোটর গাড়ি। এমনি কতদিন গাড়িই তো আসে, কাজেই কারো কিছু সন্দেহ করার অবকাশ রইল না। গাড়িখানা ছুটে চলল চল্লিশ মাইল দূরের এক রেলস্টেশনের দিকে। আরোহী এক মৌন সন্ন্যাসী আর চালক হলেন তারই ভাইপো।
পরদিন উত্তর-ভারতগামী এক ট্রেনের কামরায় দেখা গেল এক মৌলবী নিবিষ্ট মনে পড়ে চলেছেন একখানা দৈনিক সংবাদপত্র। পাশের এক সহযোগী জানতে চাইলেন তার পরিচয়। এমনই আগুন্তুকদের সহযোগিতায় সুভাষ পৌঁছে গেলেন বার্লিনে। সেখানে হিটলারের সঙ্গে দেখা করলেন। তার সঙ্গে অনেক কিছু আলোচনা হলো।
জার্মানিতে অবস্থান করে সুভাষচন্দ্র তার অনেক কিছু বিপ্লবী কার্যকলাপ পরিচালনা করতে লাগলেন।
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পুরোদমে চলছে। যে সমস্ত ভারতীয় সৈন্য ইংরেজদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করছিল তাদের অনেকেই ছিল তখন জার্মানদের হাতে বন্দী। তিনি পরিকল্পনা করলেন, সেই সব বন্দীদের নিয়ে একটি সৈন্যদল গঠন করলেন। সেই সৈন্যদল নিয়ে রাশিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবেন ভারতের দিকে।
ভারতীয় সৈন্যরা প্রথমে অসম্মত হলেো সুভাষচন্দ্রের ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়ে সুভাষচন্দ্রের পরিকল্পিত দলে যোগ দিল। জার্মান সেনাপতিদের সাহায্যে এই বাহিনীকে বিশেষ সামরিক শিক্ষা দেওয়া হয়। এই সময়েই প্রবাসী ভারতীয়রা সুভাষচন্দ্রকে ‘নেতাজী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
এই সময়েই একদিন জার্মানী থেকে বেতারের স্রোতে ভেসে আসে প্রিয় নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর কণ্ঠস্বর। বার্লিন বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত নিয়মিত ভাষণে নেতাজী তার স্বদেশবাসীকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানাতে থাকেন।
কিন্তু কিছুদিন পর তিনি উপলব্ধি করেন, পরিকল্পিত মুক্তিযুদ্ধ জার্মানির চেয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে পরিচালনা করা অনেক সহজ।
৭.
১৯৪৫ সালের ২৩ এপ্রিল জাপানিরা রেঙ্গুন ত্যাগ করে। আজাদ হিন্দ ফৌজকে তারা পরামর্শ দিল রেঙ্গুন ছেড়ে যাবার। কিন্তু নেতাজির কোনো নির্দেশ না পাওয়ায় তারা রেঙ্গুনেই থেকে যায়। কিন্তু যখন অবস্থা খুবই অসহনীয় হয়ে উঠল তখন আজাদ হিন্দ ফৌজের রেঙ্গুন ত্যাগ করা ছাড়া উপায় রইল না।
নেতাজি তখন বিভ্রান্ত। কি করবেন কোনো উপায়ই স্থির করতে পারছেন না। সর্বাধিনায়কদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠকে বসতে লাগলেন। কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন, ইংরেজের কাছে আত্মসর্মপণ করা হোক। কিন্তু নেতাজি কিছুতেই সে পরামর্শের প্রস্তাবে রাজি হলেন না।
ঠিক সেই সময়ে জাপান রেডিও ঘোষণা করল- টোকিও আসার সময় মাঞ্চুকুও যাওয়ার পথে বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র নিহত হয়েছেন।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই জানা গেল সেই মৃত্যু সংবাদ মিথ্যা, সুভাষচন্দ্র জীবিতই আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন জানা যায়নি। আজও পৃথিবীর ইতিহাসে নেতাজির সেই সংবাদ একটি রহস্য হয়েই রয়ে গেছে।
সুভাষ চন্দ্র বসুর সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি হল, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’ (হিন্দিতে, তুম মুঝে খুন দো, ম্যায় তুমহে আজাদি দুঙা)।
৪ জুলাই ১৯৪৪ সালে বার্মাতে এক র্যালিতে তিনি এই উক্তি করেন। তার আর একটি বিখ্যাত উক্তি হল ‘ভারতের জয় (জয় হিন্দ)’, যা কিনা পরবর্তিতে ভারত সরকার গ্রহণ করে নেয়।
নেতাজি একবার এক ভাষণে বলেছিলেন, পরাধীন জাতির পক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিক হওয়ার চেয়ে বড় সম্মান এবং গৌরবের বিষয় অন্য কিছুই নেই। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি- আলোক এবং অন্ধকারে, দুঃখে এবং সুখে, পরাজয়ে এবং বিজয়ে আমি সর্বদা তোমাদের পাশে থাকবো। বর্তমানে আমাদের ক্ষুধা, দুঃখ কষ্ট, দুর্গম অভিযান এবং মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু দিতে অসমর্থ।
FUTURE INDIAN NATIONALIST SUBHAS CHANDRA BOSE, STANDING EXTREME RIGHT, WITH HIS LARGE FAMILY OF 14 SIBLINGS IN CUTTACK, INDIA, CA. 1905
SUBHAS CHANDRA BOSE AS STUDENT IN ENGLAND
SUBHAS CHANDRA BOSE WITH HIS WIFE EMILIE SHENKL IN AUSTRIA, 1937
GANDHI AT THE INDIAN NATIONAL CONGRESS ANNUAL MEETING IN HARIPURA IN 1938 WITH CONGRESS PRESIDENT SUBHAS CHANDRA BOSE
GREATER EAST ASIA CONFERENCE, FROM LEFT TO RIGHT: BA MAW, ZHANG JINGHUI, WANG JINGWEI, HIDEKI TŌJŌ, WAN WAITHAYAKON, JOSÉ P. LAUREL, SUBHAS CHANDRA BOSE
সংগ্রহ : Internet
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।