আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বন্ধু নিরঞ্জন - ভাস্কর চৌধুরি



অনেক কথা বলবার আছে আমার তবে সবার আগে নিরঞ্জনের কথা বলতে হবে আমাকে ৷ নিরঞ্জন আমার বন্ধুর নাম আর কোন নাম ছিল কি তার ? আমি জানতাম না ৷ ওর একজন বান্ধবী ছিল অবশ্য কিছুদিনের জন্য সে তাকে প্রীতম বলে ডাকত ৷ ওর বান্ধবীর নাম ছিলো জয়লতা ৷ নিরঞ্জন জয়লতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলেনি তেমোন ৷ জয়লতাকে কখনো কোন চিঠি লিখেছিলো কিনা সে কথাও আমাকে সে বলেনি ৷ তবে জয়লতার চিঠি আমি দেখেছি একটা চিঠি ছিল এরকম - প্রীতম, সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ তুমি বলেছ , এখন দু:সময় - কিন্তু আমি জানি , সব সময়ই সুসময় , যদি কেউ ব্যবহার করতে জানে তাকে ৷ আমি বুঝি বেশি দিন নেই ৷ যদি পার এক্ষুনি তুলে নাও নইলে অন্য পূরুষ ছিবড়ে খাবে আমাকে - আমার ঘরে বসে সিগারেট টানতে টানতে নিরঞ্জন চিঠিটা চুপ করে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল "বিভূ, চিঠিটা পড়ুন ৷" আমি প্রথমে পড়তে চাইনি ৷ পরে ঐটুকু পড়ে তার দিকে তাকিয়েছিলাম -- না - ঐ সিগারেটের ধুয়োয় আমি কোন নারী প্রেম-তাড়িত মানুষের ছায়া দেখিনি - ভয়ানক নির্বিকার ৷ কিছু বলছেন না যে ?- আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কি বলব ? এই ব্যাপারে ৷ কোন ব্যাপারে ? এই যে জয়লতা ৷ বাদ দিন ৷ আমি বাদ দিয়েছিলাম ৷ নিরঞ্জন আমার ঘরে বসে অনেকক্ষণ সিগারেট টেনে টেনে ঘরটাকে অন্ধকার করে চলে গিয়েছিল সেদিন ৷ জয়লতার সংগে অন্য পূরুষের বিয়ে হয়েছিল ৷ আমি জয়লতা এবং অন্য পূরুষটিকে দেখেছি বহুবার বিশ্ববিদ্যালয়েই ৷ জয়লতা আরো দেমাগী আরো সুন্দরী হয়ে উঠেছিল৷ অন্য পূরুষ ছিবড়ে খেলে মেয়েরা বুঝি আরো সুন্দরী হতে থাকে ? এ কথার সূত্রে নিরঞ্জন আমাকে বলেছিল , " মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না ৷ মানুষ এত বড় যে , আপনি যদি 'মানুষ ' শব্দটি একবার উচ্চারণ করেন যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন ' মানুষ' - তো আপনি কাঁদবেন ৷ আমি মানুষের পক্ষে , মানুষের সন্গে এবং মানুষের জন্যে ৷ হ্যাঁ , মানুষের মুক্তির জন্য নিরঞ্জন মিছিল করতো আমি শুনেছি নিরঞ্জন বলছে তুমি দুষ্কৃতি মারো , বান্গালী মারো , হিন্দু-মুসলমান মারো , গেরিলা - তামিল মারো , এভাবে যেখানে যাকেই মারো না কেন ইতিহাস লিখবে যে এত মানুষ মরেছে ৷ বড়ই করুণ এবং বড়ই দু:খজনক শক্তির স্বপক্ষে তুমি যারই মৃত্যু উল্লেখ করে উল্লাস কর না কেন মনে রেখো মানুষই মরেছে ৷ এই ভয়ংকর সত্য কথা নিরঞ্জন বলেছিল মিছিলে হাত উঠিয়ে বলেছিল , এভাবে মানুষ মারা চলবে না ৷ মানুষকে বাঁচতে দাও ৷ তার উদ্যত হাতে লেগেছিল মানুষের হাতে বানানো বন্দুকের গুলি ৷ বুকেও লেগেছিল- যেখান থেকে " মানুষ ' শব্দটি বড় পবিত্রতায় বেরিয়ে আসতো ৷ সে লাশ -- আমার বন্ধু নিরঞ্জনের লাশ - আমি দেখেছি - রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন লাশ , মানুষ কাঁধে করে তাকে বয়ে এনেছিল মানুষের কাছে ৷ জয়লতা সে লাশ দেখেছিল কিনা সে প্রশ্ন উঠছে না ৷ দেখলেও যদি কেঁদে থাকে সে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে , তাতে নিরঞ্জনের কোন লাভ হয়নি ৷ মানুষ কেঁদেছিল আমি জানি , তাতে নিরঞ্জনের লাভ ছিল ৷ নিরঞ্জন প্রমাণ করতে পেরেছিল গতকাল মিছিলে আইন অমান্যের অভিযোগে যে দুষ্কৃতি মারা গিয়েছে তার নাম নিরঞ্জন -- সে আসলে " মানুষ" ৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.