শেষ বলে কিছু নেই
যেহেতু সোডিয়াম আলোর ঔপনিবেশিক আচরণে অন্ধকার রাজপথ থেকে বিতাড়িত, তাই অনেকটা ক্ষোভে না কি দুঃখে কে জানে উদ্যানের ঘুন্চি ঘান্ছিতে পলাতক অন্ধকার বেশ একটা আদিম আবহ নিয়ে নেমে আসে; আলো-আঁধারির বিমুগ্ধ কোলাজ যেখানে, সেখানে আদিমতা বেশ প্রগাঢ় মনে হয়; সেই প্রগাঢ়তার নীলাভ-ধূসর রহস্যে ওরা চারজন- অনিন্দ্য, ডেভিড, বাবু এবং হাশিমকে ঘিরে একটা চমৎকার পরিবেশ ফেনিয়ে ওঠে। ওদের মাথার উপর অন্ধকারে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলা লাল-সবুজ কৃষ্ণচূড়া; লাল
আর সবুজের অনস্তিত্বের নিচে ওরা চারজন অস্তিত্বের কিছু জটিল হিসেব মেলাতে ব্যস্ত।
আসলে ব্যস্ততা-ট্যাস্ততা কিছু না, কেবল তাড়না; স্খলনের তাড়না- যা মূলত মূলজ অন্ধকারে গতিশীল...
গতির প্রসঙ্গ ধরেই বলা যায়, কৃষ্ণচূড়া থেকে কদম্বতলা পর্যন্ত একটা রৈখিক গতিবৃত্ত রচিত হয়েছে।
কৃষ্ণচূড়াতলা থেকে কদম্বতলা;
কদম্বতলা থেকে কৃষ্ণচূড়াতলা।
কদম্বতলায় জ্বালানো হয়েছে ভাড়াটে চুল্লি।
প্রথমে অনিন্দ্য গেল- পদার্থবিদ্যার জিনিয়াস ছাত্র হয়েও এই অনিন্দ্য কি না আপাদমস্তক কবি;
তো সে গেল একেবারে বাদশার মত দুলকি চালে এবং ফিরে এল ফকিরের মত
চুপসে, অন্তত বাবুর সেরকমই মনে হল। কিন্তু হাশিমের মনে হল, অনিন্দ্য গিয়েছিল ফকিরের মত
এবং ফিরে এসেছে বাদশার মত। দু’জনের যে কোন একজনের মতবাদই সত্যি হতে পারে; আসলে
আলো-আঁধারির বিমুগ্ধ কোলাজে কোন সত্যই ধ্রুব হতে পারে না।
অনিন্দ্য ফিরে এসে আঙ্গুলে একটি তুড়ি রচনা করে বলল, ওর নাম উদ্ধার করেছি। হার নেম ইজ লক্সমি।
হোয়াট? ডেভিড বিস্ময়াবিষ্ট। লছমি? ও কি ট্রাইব?
আরে বাবা, লছমি নয়। লক্ষ্ণী, ইংরেজী উচ্চারণে বলেছি।
বাবু বলল, ভুয়া নাম। ওরা ঠিক নাম বলে না।
ব’লে মেয়েদের মত লম্বা চুল ঝাঁকিয়ে নিল দু’বার।
বাবু চারুকলার ছাত্র, ওর কথা বলার ঢং অনেকটা ছবি আঁকার মত; যেন ক্যানভাসে একটা একটা করে শব্দচিহ্ন বসিয়ে দিচ্ছে।
অনিন্দ্য নাছোরবান্দার মত বলল, ওটা ঠিক নাম, আমি ম্যানেজ করেছি।
হাশিম বলল, কোন নামের মেয়েতে বেশি মজারে অনিন্দ্য? ভুয়া না ঠিক নামের?
ডেভিড বলল, বাহ্ হাশিম, এক্কেবারে ছক্কা কষেছিস! কথার চমৎকার সাফল্য দেখিয়েছিস। যা এবার তোর পালা।
হাশিম খুশি না হয়ে পারল না; আসলে ওর ইচ্ছে ছিল সবার প্রথমে যাওয়ার;
অনিন্দ্যটা একগুঁয়ে, ফার্স্ট টেস্ট ও-ই নিয়ে ছাড়ল, তা বন্ধু হিসেবে কী আর করে হাশিম।
এখন সেকেন্ড পজিশনে নাম আসায় খুশি সে।
মিনিট পাঁচেক পর হাশিম- যে কিনা একটি তৃতীয় শ্রেণীর দৈনিকের ইউনিভার্সিটি
কর্সপনডেন্ট- বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে এর মাঝে নামও করেছে-
ফিরে এসে বলল, আমি বুঝতে পারছি না। আই কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড। ওর গলা হাতাশায় নাজুক।
কী? প্রশ্নটা ডেভিডের।
কেন এমন হল রে? শি কুডন্ট মেক মি ইরেক্টেড।
অনিন্দ্য বলল, তুই শালা নপুংশক হয়ে গেছিসরে...
প্রতিবাদ করল হাশিম, ইমপসিবল। আমার কখনও এমন হয় নি, ভবিষ্যতেও এমন হবে না, কিন্তু কেন যে আজ...
অনিন্দ কিছু বলতে যাচ্ছিল, বাবু তাকে বাঁধা দিয়ে মিউচ্যুয়াল করে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, এমনটি হতেই পারে।
এটা অনেকটা ব্লাড ডোনেট করার মত ব্যাপার।
গ্রুপ না মিললে হবে না। সব সময় গ্রুপ মিলবে কে
বলতে পারে? ডেভিড, ওহে ঈশ্বরপুত্র, এবার বল তুমি না আমি?
ডেভিড একটু ভেবে বলল, তুই যা। আমি ততক্ষণে মেনটালি প্রিপেয়ার্ড হই।
বাবু একটু পর ফিরে এসে বেশ হৈ চৈ এর ভঙ্গিতে ঘোষণা করল, হাশিম ইজ অল রাইট।
চুল্লিটা কম্প্যারেটিভলি কম গরম।
হাশিম সাপোর্ট পেয়ে হৈ হে করে উঠল, টাকাটাই জলে গেল।
ডেভিড বলল, স্টপ ইট। আমি যাচাই করে আসি। এই বলে ডেভিড গেল; সে কবি নয়, শিল্পী নয়,
সাংবাদিক নয়, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, নন-রেসিডেন্সিয়াল, মাঝে মাঝে মাকে ম্যানেজ করে হলে
বন্ধুদের সাথে রাত্রিযাপন করা এবং সেই সূত্রে বেপরোয়া কিছু মিশনে এটেন্ড করার স্পৃহা থাকা
সাধারণ ক্যালিবারের ছেলে। তো ডেভিড ফিরে এসে বলল, এভরিথিং ইজ অলরাইট।
এভাবল আই অ্যাম স্যাটিসফাইড।
এই সময় হুইসেল শোনা যায়। ডেভিড বলল, খাঁকি বাবারা এসে গেছে, এবার কেটে পড়া যাক।
মুহূর্তে সকলে সতর্কে টানটান; কৃষ্ণচূড়া এবং কদম্বতলায় একটা আলোড়ন ওঠে; কতিপয় ফিসফিসানি;
মুদ্রা প্রদানের ঝামেলা প্রথম অংকেই সমাধা হয়েছে; অতএব নো মোর ডিলে এন্ড লেটস মুভ...
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।