২য় দিন শেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৯১
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ১৫৮/৪
হারারের উইকেটে বল সাপের মতো বাঁক নেয়? কখনো মাথার ওপর ফণাও তোলে? তাহলে আছেন রবিউল ইসলাম। না, এই উইকেট আসলে স্পিনারদের। ঝুলিয়ে দেওয়া বলগুলোর অন্য নাম মরীচিকা। উইকেটে বিভ্রান্তিকর টার্ন। তাতেও ক্ষতি নেই।
সাকিব আল হাসান আর সোহাগ গাজীও তো আছেন!
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে হোম কন্ডিশনেও কতই না অসহায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা! প্রথম টেস্টের সেই ব্যাটিং যেন ভুলে যাওয়া কোনো ইতিহাস। বোলারদের নিয়ত ফেলা জালে ধরা পড়ে যায় ব্রেন্ডন টেলরের ধৈর্যও। প্রথম দিনে ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যার মানসিকতা ৩০০ রান করার সুখের চাদরেও সেঁটে দিয়েছিল শোকের কালো কাপড়। তবে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা কেবলই বাংলাদেশের। লাঞ্চের মিনিট পনেরো আগে অলআউট হয়ে গেলেও নাসির-রবিউলরা মিলে স্কোরবোর্ডে জমা করলেন ৩৯১ রান।
কাল দিন শেষে তা থেকে জিম্বাবুয়ে পিছিয়ে ২৩৩ রানে। উইকেটও পড়ে গেছে ৪টা। সবচেয়ে বড় কথা, ১৫৮ রানের মধ্যে কালই ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়া চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে আছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর।
ভালো বলকে সম্মান দেখানো আর বাজে বলকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া বুঝি ব্রেন্ডন টেলরের কাছ থেকেই কেউ শেখে! বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাপারটা মানতেও শুরু করেছেন। পরশু খেলা শেষে তামিম ইকবাল তো দুই দফা টেলরকে উদাহরণ হিসেবে সামনে দাঁড় করালেন।
প্রতিপক্ষকে নিজের চেহারাটা আরও ভালো করে দেখাতেই কিনা টেলর কাল আরও একবার আবির্ভূত হয়েছিলেন পুরোনো চেহারায়। বলের পর বল হয়ে যাচ্ছে, তবু রানের চাকা মন্থর। রবিউল-সাজেদুলরা মাঝেমধ্যেই লোভ-জাগানিয়া শর্ট বল দিলেও টেলর শুধু গায়ের ওপর আসাগুলো থেকেই আত্মরক্ষা করছেন। গ্যালারিতে ‘টেলর টেলর’ রব। সেটিতেও উন্নাসিক অধিনায়ক যেন বুঝতেই পারছিলেন না, এই টেলর আবার কোন টেলর! বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দুই বেলা উইকেটে পড়ে থাকার চেয়ে এক বেলায় শ-খানেক রান করে ফেলে খুশি হতে পারলেও টেলর প্রথম ৬টা রান করতেই খেললেন ৩৯ বল।
তবে ধৈর্যের পরীক্ষায় কাল শেষ পর্যন্ত এই টেলরও ব্যর্থ।
উইকেটে বোলারদের জন্য খুব বেশি কিছু ছিল না। তবে যেটুকুই ছিল, বাংলাদেশের বোলাররা কাজে লাগাতে সফল হয়েছেন। তীব্র পেসার-সংকটের মধ্যে আলোকবর্তিকা হয়ে আসা রবিউল জিম্বাবুয়ের ২৬ রানের মধ্যে তুলে নেন দুই ওপেনার ভুসিমুজি সিবান্দা ও রেগিস চাকাভার উইকেট। দুজনেই কট বিহাইন্ড, যদিও রবিউলের বলে ইনিংসের নবম ওভারেই চাকাভার ক্যাচটা নিতে পারেননি উইকেটকিপার মুশফিক।
১১ ওভারের টানা প্রথম স্পেলে ৬ মেডেনসহ ১৬ রানে ২ উইকেট—জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংটা নাড়িয়ে দেন রবিউলই। প্রায় পাঁচ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি পেসার সাজিদুল উইকেট না পেলেও সুইং আদায়ের চেষ্টায় একেবারে ব্যর্থ নন। তবে অভিষেক টেস্টে জিয়ার প্রথম ৫ ওভারের বোলিং খুব বেশি দৃষ্টি কাড়তে পারেনি।
শুরুটা করেছিলেন পেসার রবিউল, পরে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটানোর কাজটা সাফল্যের সঙ্গে করেছেন স্পিনাররাই। ইনিংসের ২৩তম ওভারে সাকিবের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মুশফিক।
প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে বোল্ড করে সফরের প্রথম উইকেট তুলে নেন সাকিব। চোট থেকে ফিরলেও পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় প্রথম টেস্টে তাঁর বল করারই কথা ছিল না। তার পরও দুই ইনিংসে ১৬ ওভার বল করেছেন, উইকেট পাননি একটিও। কাল মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে শুধু সফরের প্রথম উইকেটটাই পেলেন না, ব্রেন্ডন টেলরের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে রবিউলের মতো তিনিও রেখেছেন বড় অবদান। টেলরের মূল্যবান উইকেটটা শেষ পর্যন্ত গেছে সোহাগের পকেটে।
একটু ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ছক্কা হাঁকাতে গেলেন টেলর। ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে সাকিবের হাতকে ফাঁকি দিতে পারল না সেটা। টেলরের বিদায়ের পর ওয়ালারারের সঙ্গে জুটি বাঁধা এলটন চিগুম্বুরা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংই। দিন শেষে ৪৫ রানে অপরাজিত মাত্র ৪৯ বল খেলে।
আগের দিনের ৩০০ রানের সঙ্গে আর ৯১ রান যোগ করে লাঞ্চের মিনিট পনেরো আগেই অলআউট বাংলাদেশ।
আগের দিনের তুলনায় কিছুটা সংযত নাসির তুলে নিয়েছেন টেস্টে নিজের পঞ্চম ফিফটি। কিন্তু সেটা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে পরিণত হওয়ার আগেই ক্রেমারের বল স্টাম্প ভেঙে দিয়েছে তাঁর। ৩৬৭ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাসিরের বিদায়ের পরও যে বাংলাদেশ চার শর কাছাকাছি গেল, তার জন্য আরেকটা ধন্যবাদ পেতে পারেন রবিউল। ১৯ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন, এর মধ্যে ক্রেমারের এক ওভারে পর পর দুই ছক্কা ও এক বাউন্ডারিতে নিয়েছেন ১৭।
হারারেতে সুসময় কাটছে রবিউলের।
বল হাতে সাফল্য পাচ্ছেন, এবার না হয় চেষ্টা করলেন ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠারও। বিশেষ করে বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিংটা যখন টেল এন্ডারদের ব্যাটিংয়ের মতোই!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।