বা
Click This Link
৫. আঠার পর্যন্ত রাশেদুল বারী’র জীবনটা যেন গ্রীষ্মকালীন ছুটির মত ছিল। তারপর বারী, পিতার হাত ধরে, বাইরের জগতে ঢুকে গেল। তাদের বিশাল স্পিনিং মিলের দায়িত্বটা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেলেন তার পিতা। তার পিতার বন্ধু মি: আজাদ। যা কিছু স্থিরকৃত বিশ্বাস সেখানেই তিনি বুনে যাচ্ছেন অবিশ্বাসের বীজ।
ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দিহান। পাপ বলে যা কিছু প্রচলিত তাতেই তার স্পষ্ট বিরোধিতা। মি: আজাদ যুক্তিবাদী। প্রেম-ভালবাসা তার কাছে হাস্যকর। তিনি বুঝান যে জগতের সকল মানবীয় প্রবনতার মূলে যৌনতা।
ক্রমে ক্রমে মি: আজাদের যুক্তির কাছে হেরে যায় বারী। মদ খাওয়াকে সে পাপ মনে করে না এবং প্রায়ই নেশাগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে লাগল। তার মা তাকে বারণ করলে বলে- মদ কোন খারাপ জিনিস না মা। জগতের বড় বড় বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিক সকলেই মদ খেয়েছেন, খাচ্ছেন।
একদিন পার্টিতে ভরপুর মদ খেয়ে বাড়ি ফিরল বারী গভীর রাতে।
সকালে সীমা উপস্থিত।
‘তোমার বাবা-মা কখন বাসা থেকে বেড়িয়ে গেছেন, আর তুমি এখনও ঘুমে ?’ সীমা বলে।
‘আমাকে বিছানা থেকে উঠতে সাহায্য কর’ বারী বলে, সে খেলার সব নিয়ম-কানুন জেনে গেছে, প্রতারণার সমস্ত কৌশল।
সীমা ভালবাসার গন্ধ পাচ্ছিল। হারিয়ে গেল।
সব কিছুই দিতে প্রস্তুত ছিল সীমা। কিন্তু একটি পরিচ্ছন্নতা উপহার হিসাবে রাখতে চাইছিল বাসর রাতের জন্য। বারী অস্থির ছিল, সে আরো চেয়েছিল, গভীর আকুতি নিয়ে।
বারী’র কাছে পাপবোধের যুক্তি হারিয়ে গিয়েছিল আর সীমা ভালবাসায় অন্ধ। কিছুদিন পর বারী বিমুখ হয়ে গেল।
- ‘তুমি কি আমাকে আর চাচ্ছোনা ?
- না
চোখের জলে সীমার ঠোট ভিজে গেল। চোখ ব্যথাক্রান্ত হয়ে উঠল। হৃদয় বিবর্ণ।
বারী দুরন্ত হয়ে উঠল। সে অন্য এক মেয়েকে যোগাড় করে নিল।
আর প্রায়শই রুচির পরিবর্তন করতে লাগল।
৬. সীমা গুরুতর অসুস্থ। বারী খবর পায়।
যতক্ষণে বারী ফিরে এলো, ততক্ষণে সব শেষ।
কালো রক্ত তার ঠোটের কোণায় লেগে আছে।
মুখ নিঃসৃত লালাগুলো জমে রয়েছে দু-ঠোটের মাঝখানে।
- আমার সীমা! কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বারী। দেরী হয়ে গেছে, খুব বেশি। মা চিৎকার করে উঠলেন-
- তুই খুনি, তুই আমার মেয়েটাকে, আমার বোনের মেয়েটাকে খুন করেছিস। আমি খুন করেছি, আমি।
আমি-তোদের ছাড়ব না। তোর বাবা, তুই পুরুষ মানুষ। ঘৃণা করি তোদের...............
বলতে বলতে মা ঢলে পড়লেন মেঝেতে।
দু’টি লাশ পাশাপাশি দাফন করা হলো।
সময় চলে গেল।
সীমা আঠার, কোনদিন উনিশে এলোনা। মা মধ্যবয়সী কখনও বৃদ্ধা হলেন না।
বারী নিজের ভিতর ফিরে আসতে চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। বহু কষ্টে ফিরে এলেন। মনে পড়ে তার আজ তার ছিয়াত্তরতম জন্মদিন।
কেউ তাকে শুভেচ্ছা জানায় নি। না ছেলে, না মেয়ে। কে খবর রাখে এই দিনের?
৭. চোখ বুজতেই ভয় পাচ্ছিলেন বারী। মেঘমুক্ত জ্যৈষ্ঠের আকাশ। চমৎকার চাঁদ উঠেছে।
বারী জানালা বন্ধ করে দিল। ঘরের ভিতর ক্রমে গরমে ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বারী বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। স্পষ্ট দু’টি ছায়া বাইরে অপেক্ষারত। একটা ধমকা হাওয়া।
দরজাটা খুলে গেল। বারী হাসছে, প্রাণবন্ত যৌবনের সেই হাসি...........
- তুমি কি আসতে চাও, রাশেদুল বারী, তুমি কি আমাকে খেলবে ? আমাকে ?
- হ্যা এখন আমি তা পারি। আমি তোমাকে ভালবাসি, শেষ পর্যন্ত তোমার বুকেই আমার আশ্রয়।
- আমি খুবই খুশি, রাশেদুল বারী। আমি দীর্ঘদিন তোমার প্রতীক্ষায় ছিলাম।
বারী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। প্রাণবন্ত যুবক।
ছিয়াত্তুর বছরের একটি দেহ পড়ে রইল মেঝেতে। নিরব। নিস্তব্ধ।
একা।
সমাপ্ত....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।