কেউ কেউ একা
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়
রইলো না রইলো না
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ............................
দিনগুলি হারিয়ে যায়। অতীতের কৃষ্ণ গহ্বরের দিনগুলি আর ফিরে আসে না। তারপরও মনের জানালায় উঁকি দেয় সেই দিনগুলির কথা, হাসি কান্নার কথা। অতীত সে দুঃখের হোক আর সুখেরই হোক তা বরাবরই আমাদের কাছে ভাল লাগে। আমাদের ভেতরে ভাললাগার স্মৃতিগুলো উঁকি দিলে মনের জানালায় মেঘভাঙ্গা রোদ বয়ে যায়।
আবার দুঃখের স্মৃতিগুলো আমাদের অন্তর আকাশে কালো মেঘের সঞ্চার করে। তারপরও অতীত আমাদের কাছে অমূল্য সম্পদ। অতীত ভুললে মানুষ নিজে নিজেকে ভুলে যায়। নিজের পেছনকে ভুলে যায়। নিজের ভিতকে ভুলে যায়।
নিজের শিক্ষাকে ভুলে যায়। তাই ইচ্ছে করলেও মানুষ অতীতকে ভুলে যেতে পারে না। আমিও ভুলতে পারি না- সেই পুকুর-নদীর জলে বন্ধুদের সাথে অবাধ সাঁতার, চৈত্রের রোদে টো.. টো.. করে বন-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, বৈশাখের ঝড়ে আম কুড়ানো, সকালে মা-বাবার ঘুম ভাঙ্গার আগে বিছানা ছেড়ে মাছ ধরতে যাওয়া, ফুটবল খেলা, চুটিয়ে আড্ডা দেয়া, পূর্ণিমার রাত জেগে ঠাকুমার কাছে গল্প শোনা, ঈদ, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধপূর্ণিমা বড়দিনে অনন্দের বন্যা বয়ে যেত আমার মনে, আমাদের মনে। আমাদের বলছি এই কারণে, একা একা আনন্দকে উপভোগ করা যায় না। আমরা সবাই মিলে উৎসবগুলোর আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতাম।
আবার বন্ধুদের মধ্যে যেমন ছিল মুসলমান, তেমন ছিল খিস্টান ও বৌদ্ধ। আমাদের পরিবারে জাতাপাতের কোন বালাই ছিল না বললেই চলে। আমাদের পরিবারের সদস্যরা শিক্ষিত হবার কারণে তারা একটি কথাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো- মানুষকে ভালবাসার উপরে বড় কোন ধর্ম নেই। ধর্ম পালন করতে হলে মানুষকে ভালবাসতে হবে। মানুষকে ঘৃণা করে কখনই ধর্ম পালন করা যায় না।
আমি এবং আমার পরিবারের সব সদস্যই মনের ভেতরে কোন গ্লানি না রেখে, জাতপাতের কথা মাথায় না রেখে মানুষ হিসেবেই তাদের সাথে মিশতাম। অতএব আমাদের বাড়ি ছিল সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। সেই দিনগুলো আর ফিরে পাব না। সেই মানুষগুলোকেও আর ফিরে পাব না। সময়ের স্রোতে আজ আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবই কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
আমরা যারা বেঁেচ আছি তারাও গুনছি সেই বাস্তব সত্যির মহেন্দ্রক্ষণ।
আমাদের দেশ বরাবরই স¤প্রীতির একটি দেশ। এদেশে মুসলমানের সংখ্যা ৮৮.৩ ভাগ, হিন্দু ১০.৫ ভাগ, খিস্টান ০.৫ ভাগ এবং অন্যান্য ০.১ ভাগ। এদেশের প্রধান উৎসবগুলোর মধ্যে হল নবান্ন ও বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। ধর্মীয় উৎসব গুলোর মধ্যে হল- ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, শবে বরাত, শবে কদর, ঈদে-মীলাদুননবী, মুহররম ইত্যাদি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবের ভেতরে হল দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতীপূজা, দোলযাত্রা, হোলি ইত্যাদি। বড়দিন খিস্টানদের এবং বৌদ্ধপূর্ণিমা বৌদ্ধদের। এ দেশের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খিস্টান সবাই মিলেমিশে বসবাস করে। বেশ ক’বছর ধরেই ঈদ আর দুর্গাপূজা এক সময়ে হয়ে আসছে আমাদের দেশে। মুসলমানদের নামাজের সময় হিন্দুরা পূজার ক্রিয়াদি থেকে বিরতি থাকে।
অনেক সময় দেখা যায় যে, তারাবির নামাজের সময় গান-বাজনা, আনন্দ-ফূর্তি স্থগিত রাখা হয়। আবার মুসলমানেরা তারাবির নামাজ শেষ করে চলে আসে পূজামণ্ডপে। তারা দুর্গাপূজার আনন্দ উপভোগ করে। পূজা শেষে প্রসাদ নেয়। বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমার সময় হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে মিশে আনন্দ করে।
আবার বড়দিনও তার ব্যতিক্রম নয়।
বাঙালি জাতীয়তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্বাধীন বাংলাদেশেল রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, সেহেতু ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান কোন ধর্মীয় বা উপজাতীয় সংখ্যালঘুকে কোন পৃথক মর্যাদা প্রদান করেনি। সংবিধানের যে বিধান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসরত সকল মানুষকে এক জাতি বলে গণ্য করেছে এবং ধর্ম ও উপজাতিত্ব নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল অধিবাসীকে বাঙালি বলে অভিহিত করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।