আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তি, তর্ক, গল্প নয় পড়ুন আবেগ, তর্ক, গল্প.....

এখনই, নয়তো কখনই নয়...।

Click This Link জনাব আবুল মোমেনের শিক্ষা বিষয়ক লেখা পড়ে আমি রিতিমতো অবাক হলাম। যেহেতু যুক্তি, তর্ক, গল্প এই ব্যানারেই উনি লেখেন, সেহেতু সবসময় এ ধারনাই লালন করি যে ওনার লেখায় যুক্তি, তর্ক, গল্প এ সব উপাদানই থাকবে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ওনার আজকের লেখায় প্রথম উপাদানটির ঘাটতি লক্ষ্য করলাম। ওনার একটা বড় অভিযোগ এই যে বিখ্যাত স্কুল-কলেজের কাজই হলো দূর্বল ছাত্রদের ছাটাই করে শুধু ভালো ছাত্রদের রেখে দেয়া।

তার মানে হলো তাদের ভালো ফলাফলের এটাই একমাত্র কার্যকরী কৌশল। বিখ্যাত স্কুল কলেজগুলোর শিক্ষকরা তাহলে দূর্বল ছাত্রদের কিভাবে তাড়ানো যায়, সেই কাজেই সদা ব্যস্ত থাকেন যদি মোমেন সাহেবের বক্তব্য সঠিক হয়ে থাকে। সবল ছাত্র যারা টিকে থাকে তারা কি শুধুমাত্র নিজেদের মেধায় টিকে থাকে? শিক্ষকদের কি কোন ভূমিকাই নেই? তাহলে তো একটা কাজ করা যায়, ঐ সব বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষক রাখারই দরকার নেই। তাদের অখ্যাত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়া যায়। আরেকটা বিষয় হলো এই যে কোন ছাত্র যদি দূর্বল হয়ে থাকে তবে তার দায়ভারটা কার সেটা সঠিকভাবে নিরুপন করতে হবে।

একজন ছাত্র যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারনে দূর্বল হয়ে থাকে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। আর সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও যদি কোন ছাত্র নিজস্ব অবহেলার কারনে দূর্বল ফলাফল করে তবে তার দায়ভারটা কার? দূর্বল ফলাফল করার পর সুযোগ দেয়া সত্ত্বেও এবং এরপরও না শোধরাবার পরও যদি কাউকে নিয়মিত শিক্ষার সুযো্গ দেয়া হয় তবে সবলেরা কেন পড়াশোনার পিছনে এত কষ্ট করবে? অথচ পরীক্ষায় ফেল করলে তাকে পরর্বতী শ্রেনীতে নেয়া হয় না যা কিনা এই কলাম লেখকেরও বাবা দাদার আমল থেকে চলে আসছে এমনি তাদের সময় ডাবল প্রমোশনের রীতিও প্রচলিত ছিলো। আসলে এসব করাই হয়ে আসছে যেন দূর্বলেরা তাদের দূর্বলতা কাটানোর আগ্রহ পায়। আরো একটা বিষয় তা হলো মেধা যাচাইটা কি করে হবে? নাকি দূর্বলদের অধিকার রক্ষার জন্য, তাদের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় যারা শেষের দিকে থাকে সেই সর্বশেষ অবস্হানকে বিবেচনায় রেখে শেষ ৫০ কিংবা ১০০ জনের তালিকা করতে হবে? যেহেতু সবলেরা তো এমনিতেই ভালো। ওনার ক্যাডেট কলেজ বিষয়ক বক্তব্য আমার কাছে হাস্যকর মনে হলো।

ধরা যাক আমি একজন ক্যাডেট একটা প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। তারপর শিক্ষকদের সহযোগিতা আর নিজের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জিপিএ-৫ পেলাম। আমার এ ফলফলের জন্য এখন আমি কেন লজ্জা পাবো এবং কেনই বা আমাকে আমার বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে? সরকার আমার পেছনে ৭৪ হাজার টাকা খরচ করেছে শুধু এজন্যই ? ভালো কথা, সরকার নিশ্চয় ৭৪ হাজার টাকা খরচ করে আমার জন্য জিপিএ-৫ কিনে দিচ্ছে না, নাকি আমার জিপিএ-৫ পাওয়ার পেছনে সরকারের ঐ ৭৪ হাজার টাকা মহৌষধের মতই ? লেখকের বক্তব্য কিন্তু সেদিকেই ইঙ্গিত করে যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অপমানজনক । জনাব আবুল মোমেন সাহেবের সাম্য অসাম্যের চিন্তাধারাও বেশ অদ্ভুত মনে হলো। কারন একটা সমাজে যার যার মেধার তারতম্যের কারনে সমাজে মানুষের আর্থিক অবস্হার তারতম্য থাকবেই যে কারনে ধনী গরিবও থাকবে।

কেউ যদি নিজের দোষে গরীব হয় তবে তার সেই দারিদ্রতা কি তার অধিকার রক্ষার রক্ষাকবচ হতে পারে? অন্যদিকে কেউ যদি তার নিজ গুনে ধনী হয় তবে সে কারনে তাকে শ্রেনীশত্রুর অন্তর্ভুক্ত করাটা কি ন্যায়সঙ্গত হবে? খেয়াল রাখতে হবে যারা সমাজে ধনী হচ্ছে তারা অন্যায়ের পথ অবলম্বন করছে কিনা এবং যারা গরীব তারা বৈষম্যের কারনেই গরীব কিনা। ঐসব অন্যায় বা বৈষম্যগুলো যখন কার্যকরভাবে রুখা যাবে তখন থেকেই সমাজে ধনী গরীবের মাঝের ব্যবধান সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে আর সমাজের সবচেয়ে গরীব মানুষগুলোর জীবনমানও একটা নূন্যতম গ্রহনযোগ্য মানে উন্নিত হবে। আশা করি পরবর্তী লেখায় উনি ওনার ব্যানারের প্রথম উপাদানটির প্রতি সুবিচার করবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.