আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রলীগের চাবি সন্ত্রাস ৫৭টি গাড়ি অচল : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সত্য সন্ধানে সর্বদা নির্ভিক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গতকাল রোববার সকালে ছাত্র-শিক্ষকদের বহনকারী ৫৭টি গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১০ হাজার শিক্ষার্থী গতকাল ক্যাম্পাসে যেতে পারেননি। শিক্ষার্থী না থাকায় কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগের সাত নেতা-কর্মীর মুক্তি, প্রক্টরের পদত্যাগ এবং নবগঠিত ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত কমিটির নেতা-কর্মীরা এ ঘটনা ঘটান বলে জানা গেছে। পরে রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরে উপাচার্য এম আলাউদ্দিনের বাসভবনে তাঁর উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক রেজওয়ানুল ইসলামের কাছে গাড়ির চাবিগুলো বুঝিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

চাবি সন্ত্রাসের ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিনের পক্ষের নেতা-কর্মীরা গতকাল ক্যাম্পাসের মূল ফটকের বাইরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁদের দাবি, ছাত্রলীগের বিদ্রোহী পক্ষের নেতা-কর্মীরা এমন কাজ করেছেন। তাঁরা ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা দূর করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান। জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি বাতিল ও বহাল রাখা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ হয়। এতে ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুজার গিফারি গাফফার, আনিছুজ্জামানসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

গতকাল তাঁদের কুষ্টিয়া বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ২২ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গতকাল সকাল সাতটার দিকে কুষ্টিয়ার পিটিআই রোডের কাস্টমস মোড়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজে যান। তাঁরা চালকদের কাছ থেকে সেখানে থাকা ২৫টি গাড়ির চাবি কেড়ে নেন। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার চৌড়হাস ও ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ থেকে আরও ৩২টি গাড়ির চাবি কেড়ে নেন। এসব গাড়িতে করে প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় কুষ্টিয়া শহরে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ হাজার শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রী ক্যাম্পাসে যেতেন।

গাড়ি বন্ধ থাকায় তাঁরা কেউই গতকাল ক্যাম্পাসে যেতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের এক চালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকাল সাতটার দিকে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করলে ৪০-৫০ জন ছাত্র এসে গাড়ির চাবি চান। চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে গাড়ি ভাঙচুর করার হুমকি দেন তাঁরা। পরে প্রশাসনিক কর্মকর্তার (পরিবহন) সঙ্গে কথা বলে চাবিগুলো দিয়ে দিই। ’ আল-কুরআন ও আল-হাদিস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ (রোববার) সকাল নয়টায় পরীক্ষা ছিল।

সকাল সাতটার গাড়িতে যাব বলে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। গাড়ি বন্ধ দেখে দাঁড়িয়ে আছি। জানি না পরীক্ষা দিতে পারব কি না। ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল ৫৭টি গাড়ি ক্যাম্পাসে আসার কথা ছিল। চাবি কেড়ে নেওয়ায় কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে আসেনি।

’ প্রক্টর মাহবুব আরেফিন বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী একদল ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন গ্যারেজে থাকা প্রতিটি গাড়ির চাবি নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় পদক্ষেপ নেবে। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানামতে কয়েকজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু করা যাচ্ছে না। ’ তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ শুরু করবে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। ছাত্রলীগের বিরোধী পক্ষকে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ শাহনূর আলম কেরামত প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মুক্তি, প্রক্টরের পদত্যাগ ও নবগঠিত ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবি আদায়ে প্রশাসনে অচলাবস্থা তৈরির জন্য তাঁরা চাবি কেড়ে নেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.