আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিষিদ্ধ ক্রন্দন

সকাল থেকেই আকাশে মেঘ করেছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, আকলিমার শরীরটা ভাল লাগছে না। কাল রাতে বেশ বড় ঝড়ই বোধহয় গেছে। তিন তিন জন কে সামলানো কোন চাট্টে খানি কথা নয়। কিন্তু আকলিমার এখন আর খারাপ লাগে না।

তবুও অ্যাজ সারা শরীরে ব্যাথা। ওষুধ কিনতে হবে নয়ত আজ সারাদিন কোন খদ্দের ধরতে পারবে না। কাশু টা যে কই গেল, আজ সকাল থেকেই কাশুর দেখা নেই। ওকে পেলে বাজারের ওষুধের দোকান থেকে কিছু ব্যাথার ট্যাবলেট আনানো যেত। আকলিমা বাজারে যেতে পারে না, বাজারে গেলে লোকে মন্দ বলে।

তাই ওষুধ আনার জন্য কাশুই একমাত্র ভরসা। --এই কাশু, ওই কাইশ্যা এদিকে আয়। --আরে আকলিমা বু নি, কিরাম আছিস। --আরে হারামজাদা তুই কই ছিলি নি? আমি একিদে ব্যাথায় মরে যাচ্ছি। --কি যে বল না বু, তুমার মত বেডির আবার ব্যাথা।

বল দিকি কি করতি হবি। --কয়টা ব্যাথার ট্যাবলিট এনে দে ভাই। খাইয়ে মরি যাই। --কি যাচ্ছিতাই কথা বলছ বু। এনে দিচ্ছি।

তবি খাওয়ার আগি ভাত খেয়ি নিও। --ঠিক আছে। যা তাড়াতাড়ি নিয়ি আয়। কাশু হনহন করে চলে যায়। আকলিমা বসে বসে আকাশ দেখে।

আকাশে আজ অনেক মেঘ করেছে। খদ্দের কম হবে। ওই পাশে ফেরি চলা বন্ধ, সব ট্রাক আটকে আছে, এই পাশে কিছু ট্রাক এসে জমেছে কিন্তু তাই বলে ওরা তেমন আসবে না। আকলিমার গ্রামের কথা মনে পরে যায়। গ্রাম অনেক সুন্দর ছিল।

আইলের মাঝখান দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে সগিরদের বাড়িতে যেত। সগিরকে আকলিমার অনেক ভাল লাগলো। কালো কৃশকায় দেহে ঘাম চিকচিক করা পরিশ্রমি সুঠাম দেহ। দেহের প্রেমেই পরে গিয়েছিল আকলিমা। মেঘ গুর গুর দিনেই সগির তাকে প্রথম স্পর্শ করে, শরীর মাঝে বিদ্যুৎ খেলে যায় আকলিমার।

অষ্টাদশী তরুনির যৌবনের বাধ ভেঙ্গে যায়,ভালবাসা বসিতে আকাশের সাথে গোয়ালঘরের পেছনের পরিত্যক্ত ঘরটির বাতাসও ভারি হয়ে উঠে। ঘরের চাল হতে চুয়ে চুয়ে পরা বৃষ্টির পানির সাথে একাকার হয়ে যায় তাদের ভালবাসা। সগির একটি মোটর গ্যারেজে কাজ নেয়। শহরে চলে আসে। পরে থাকে আকলিমা ও তার বাধভাঙ্গা ভালবাসা।

অশ্রুর সাথে মিশে বৃষ্টির পানি হয় লবনাক্ত। কিছুদিন সগির আবার ফিরে আসে। --আমি তোকে বিয়ে করব। শহরে একা একা ভাল লাগে না। --তুমি শহরে কি কর? --আরে পাগলি, আমি একটা মোটর গ্যারেজে কাজ করি।

তোকে বিয়ে করি নিয়ি যাব নি। তখন তুই আর আমি। --যাও!!! আমার শরম লাগে। --ওরে আমার স্বতিরে। আমার লগে শুতি সময় শরম লাগি নি --তুমি একটা শয়তান --আচ্ছা আয় তো দেকি আমার বুকি আয়।

কলিজেটা একটু ঠাণ্ডা করি। সগিরের বুকে মাথা রেখে আকলিমা সুখের সংসারের স্বপ্ন দেখে। দুটা ছেলে একটা মেয়ে। ছোট্ট একটা ঘর। ভালবাসায় পরিপূর্ণ।

--ওরে হতচ্ছাড়ি। পোড়ামুখি, তুই কি করি বেড়াচ্ছিস শুনি। সগিরের মত এক লম্পটের সাথে তকি দেখা যায়। তাও আবার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকা। ইয়া আল্লাহ তুমি আমাকে তুলি নাও।

এই পোড়ামুখি কে নিয়ে এখন আমি কই যাব। --কোথাও যাতি হবি না। আমি চলি যাব। থাক তোমরা সুখে, আমাকে নিয়ে চিন্তা করতি হবি না। মায়ের সাথে ঝগড়া করে সগিরের হাত ধরে আকলিমা ঘর থেকে বের হয়ে আসে রাতের আধারে।

একান্নবর্তী সংসারে উচ্ছিষ্টের মত আকলিমার পিছনে ফেরে তাকাতে ইচ্ছে হয় না। সগিরকে নিয়ে সে সুখের সংসার পাতবে। যেখানে থাকবে না সৎ মায়ের ঝারি, আর মুখ ঝামটা। সুখে সুখে পরিপূর্ণ হবে ওর সংসার। আকাশ ভারি হয়ে এসেছে।

বৃষ্টি হতে পারে। আকলিমা সগিরের হাত ধরে তার নতুন জীবনের দিকে রওয়ানা দেয়। রান্না ঘর থেকে, খাবার এসেছে। ভাত, করল্লা ভাজি, আর মুগডাল দিয়ে খাশির মাথা। আকলিমার এগুলা ভাল লাগে না।

খিদে নেই। জীবনের সুখের আশার সাথে সাথে খিদেও যেন মরে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু খেতে হবে নয়ত খদ্দেরের চাপ সহ্য করতে পারবে না। পল্লিতে আকলিমা একমাত্র কর্মী, যাকে নিলামে তুলা হয়। দরাদরি শেষ হলে সিংহ ভাগ রানি দিদির কাছে যায়।

বাকি যা থাকে তার মধ্যে দালালের সাথে ভাগাভাগি করতে হয়। রানি, পল্লির মহাজন। সবাই তাকে দিদি বলেই ডাকে। সেই এই পল্লিটি চালায়। পুলিশ সহ যত ঝামেলা আছে সেটা সে দেখে।

পুলিশেরাও মাঝে মঝে এসে ঘাম ঝরিয়ে যায়। কাশু এসে ওষুধ দিয়ে গেছে। আকলিমা ওষুধ খেয়ে নেয়, দুপুর গড়িয়ে আসছে, কিন্তু খদ্দেরের দেখা নেই। দালাল গুলাও মনে হয় মাল খেয়ে কোথাও পরে আছে। এবার বেশ জোরে সরেই বৃষ্টি নামে।

সেই রাতেও অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। সগিররের হাতে হাত ধরে শহরে যাওয়ার বাসে উঠে যায় আকলিমা। নদীর পারে এসে হটাত ব্যাস থেমে যায়, বৃষ্টিতে এখন ফেরি চলবে না। না থামলে বাস চলবে না। যাত্রীরা কেউ নামে না।

সগির আকলিমা কে নিয়ে নেমে যায়। --আজ রাতি আর যাওয়া হবি না। চল আজ রাতি কোথাও থাকার ব্যবস্থা করি। কাল সকালি আবার বাস ধরবি নি। --তুমি যা ভাল মনে কর।

কিন্তু এই বৃষ্টির রাতি কোথাই যাবা। --চল এইখানি আমার পরিচিত এক দিদির বাসা আছি। অখানি রাত কাটিয়ে সকালি ঢাকার বাস ধরবি নি। --চল । ছোট্ট একটা কুড়ে ঘরে সগির বসে সিগারেট ফুকছে।

একজন সাহেব বেশি ভদ্রলোক পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছেন আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে আকলিমাকে দেখছেন। পাশের খাটে বসে রানি দিদি পান চিবুচ্ছেন। আকলিমার কেমন যেন গুমোট লাগছে। বিশেষ করে বাবু সাহেবটি কে। তার চাহনির মধ্যে প্রচণ্ড পরিমান ক্ষুধা রয়েছে।

চোখ দিয়ে গিলে গিলে খাচ্ছে আকলিমার শরীর। বৃষ্টিতে ভিজে শরীরের বাঁক গুলা এখন সুস্পষ্ট,আকলিমা প্রান পনে শাড়ির আচল একদিক ওদিক করে ঢাকার চেষ্টা করছে,কিন্তু সেই যুদ্ধে পেরে উঠছে না। যৌবনের চিহ্ন গুল যেন ফেটে বের হচ্ছে। শাড়ি আর ব্লাউসের মাঝে আকলিমার যৌবনের ছাপ লুকানোর চেষ্টা সবই মনে হয় ব্যর্থ প্রয়াশ। হারিকেনের টিমটিমে আলো ছাপিয়ে আকলিমার যৌবনের রস্মি ঠিকরে পড়ছে।

নিরবতা ভেঙ্গে সগির সরব হয়ে ওঠে --দিদি কিছু খানা দাও দেকি। অনেক খিদে পেয়েছে --ওরে দিচ্ছি রে। এত লম্বা সফর করে আসলি একটু বোস। --না দিদি বের হতি হবে, রাত প্রায় শেষ হয়ে এল। --এখানে রাত শেষ হয় না।

এক রাতের পর আরেক রাত আসে। --থাক তুমি তোমার রাত নিয়ে আমি চললাম। --আরে দাড়া। কই যাচ্ছিস, হিসেব বুঝে নিয়ে যাবি নে। সগির বের হয়ে যায়, তার পেছনে রানি দিদিও বের হয়ে যায়।

ঘরে একা থাকে খালি আকলিমা আর বাবু সাহেব। আকলিমা ইতস্তত বোধ করে। বাবু সাহেবের চাহনি আরও তীক্ষ্ণ হয়। বাবু সাহেব ধিরে ধিরে আকলিমার কাছে এগিয়ে আসেন। আকলিমা দূরে সরতে চায়,বাবু সাহেব ঝাকুনি দিয়ে আকলিমাকে বিছানার উপর ফেলে দেয়।

--কি করছেন? সাহেব। --কি আবার যা করতে এসেছি তাই করছি। --আপ্নি কি বলতিছেন? আমি কিছুই বুঝতেছি না। আমি বিবাহিত। আমার স্বামী আছে।

--হেঃ এইরকম কত স্বামী থাকে। তোমাকে আজ রাতের জন্য আমি ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। শালা তো আধা রাত পার করেই আসলো। আমার অর্ধেক টাকা ফেরত নিতে হবে। --আপ্নে কি কচ্চেন?? --কি বিশ্বাস হয় না?? --না এটা হতি পারে না।

সগির আমার সাথি ইরাম করতি পারি না। আকলিমা চিৎকার দেয়। সেই চিৎকার সগিরের কানে পৌছায় না। সে এখন অন্য নারীর মাঝে সুখ খোজায় ব্যস্ত। রানি দিদির কাছে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় আকলিমাকে বিক্রি করে দিয়েছে।

আকলিমার চিৎকার শেষে শীৎকারে রুপান্তরিত হয়। বাবু সাহেব তার সকল কাম আকলিমার উপর ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, গা ঝারা দিয়ে উঠে চলে যান। পরে থাকে একটি শকুনে খাওয়া, ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া, অন্তঃসার শুন্য দেহ। নাহ!!! সগির আকলিমাকে বিয়ে করে নি। বিয়ের প্রলভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার রাস্তার মাঝে তাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিয়ে যায়।

আকলিমা উঠে পরে, আজ তাকে সাজতে হবে। বৃষ্টির দিনে খদ্দের এমনেই কম হবে, তাই সুন্দর করে না সাজলে খদ্দের তাকে পছন্দ করবে না। আকলিমা আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে। গত রাতের গায়ের ব্যথা অনেক আগেই দূর হয়ে গেছে। আজ আকলিমা আশা করছে ভাল একটি খদ্দের পাবে।

খদ্দের এসে আকলিমার হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়। আজ অনেক বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির শব্দের সাথে শীৎকার মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। পরে থাকে একটি অন্তঃসার শুন্য প্রানহীন একটি দেহ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.