আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করে রাষ্ট্র কি প্রকান্তরে মধ্যবিত্তকেই নিষিদ্ধ করতে চাইছে ???



রিক্সার নগরী হিসাবে ঢাকা বেশ পরিচিত । নগরীতে রিক্সাপ্রেমীর সংখ্যা নেহাত কম নয় । বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও রিক্সাকে ঢাকার প্রতীক হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । আবার একই সময়ে ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার নামে নগরীর আরও কয়েকটি রাস্তাকে ভিআইপি সড়ক হিসাবে ঘোষণা করে এসব রাস্তায় রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে । অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকায় যানজটের প্রধান কারণ পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অভাব, অসংখ্য খালি প্রাইভেট কার আর যত্রতত্র এগুলোর পার্কিং আর ফুটপাতের অভাব ।

রিক্সার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক । রিক্সা যানজট সৃষ্টি করে, রিক্সাওয়ালারা আনাড়ি, অদক্ষ, অভদ্র, ইত্যাদি... ইত্যাদি... তারপরেও রিক্সাই আমাদের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান ভরসা । ঢাকায় যন্ত্রচালিত যানবাহনে আরোহীর সংখ্যা এই নগরের মোট জনসংখ্যার পাঁচভাগের দুইভাগ । অন্যদিকে নগরের জনসংখ্যার শতকরা পাঁচ জন রিক্সাচালক এবং শতকরা ৬০ জন লোক রিক্সায় চলাচল করে । সংখাগরিষ্ঠ নগরবাসীর জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা না করে নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করায় মনে পড়ে গেল............ রাষ্ট্রযন্ত্র যখন এক শ্রেণীর মানুষের হাতে কুক্ষীগত হয়ে থাকে তখন শ্রেণীস্বার্থের খাতিরে রাষ্ট্রকে জনবিরোধী বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করতে হয় ।

আমরা কি একবার ভেবে দেখেছি কেউ কি শখে রিক্সাওয়ালা হয় ? যারা প্রাত্যহিক জীবনযাপনের জন্য রিক্সার উপর নির্ভরশীল, তারাও কি কেউ শখে রিক্সায় চড়ে ? রিক্সা চালক ও আরোহী উভয়েই অবস্থার শিকার । জীবনে রিক্সায় চড়েনি এমন বাঙ্গালীর সাক্ষাৎ মেলা ভার । বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের জীবনে রিক্সা নিত্যসঙ্গী । রিক্সা সংস্কৃতি বাঙ্গালীর জীবনে একই সাথে গরিবীভাব ও বাবুয়ানার পরিচায়ক । রিক্সা পরিবেশের বন্ধু আর গাড়ি পরিবেশের শত্রু ।

গতিময় যান্ত্রিকতার এই সময়ে, গাড়ি রিক্সাকে উচ্ছেদ করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক । নগরের নব্য ধনীদের একাংশ রিক্সা উচ্ছেদের মাঝেই খুঁজে পান সকল উন্নতি আর প্রগতির চাবিকাঠি । তার সাথে জননির্বাচিত সরকারও যখন ভিআইপি দের চলার গতিকে মসৃণ করতে একের পর এক এলাকায় রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করছে তখন ভয় হয় রাষ্ট্রযন্ত্র কি প্রকারান্তরে মধ্যবিত্তকেই নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চালু করছে ???? গাড়ির মালিকরা বিদেশ থেকে পুরাতন গাড়ি আমদানি করে তাদের গাড়ির ধোঁয়া ও শব্দ দিয়ে পরিবেশ দূষণ করবে । আর এই দূষণের ফলে গরীব-দুঃখী, ভুখা-নাঙ্গারা জান দেবে। এটাই যেন তাদের নিয়তি ।

একজন রিক্সাচালক দৈনিক আট-দশ ঘন্টা গাড়ির কাল ধোঁয়া সেবন করে তার পরিবেশবান্ধব নিরপরাধ রিক্সাটি চালিয়ে শহরের চাকা ঘোরায় । আর তার দেশের টাকায় বিদেশি গাড়ি আমদানি হয় ‘পরিবেশ দূষণমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে । এটাই আমাদের নগরায়ন ও শিল্পায়নের মূলনীতি, আমাদের নিয়তি । বিঃদ্রঃ লেখাটির পিছনে মূল অবদান ব্লগার রাকিব ও পারিজাত বুনোফুলের।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।