---
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় ১২০৩ খৃষ্টাব্দে। বখতিয়ার খিলজী প্রথম সেনা অভিযান চালায় বঙ্গ অঞ্চলে। অনেকেই ধারণা করেন বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের সূচনা ওখান থেকেই। আসলে বঙ্গ অঞ্চলে ইসলামের পদযাত্রা ঘটে ৭০০ সাল থেকেই। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সুফি ও দরবেশরা বঙ্গ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অবদান রাখে।
১২০৩ সালে বঙ্গ অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পায় মুসলিমরা। সে সময় থেকে এ দেশে গড়ে ওঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ধারার ইসলামী দল। বাংলাদেশের মুসলিম জনতার যে ইসলাম-চিন্তা তা ওতপ্রোতভাবে এ দলগুলোর সাথে জড়িত। বঙ্গ দেশের জনগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইসলামের উৎসমূল থেকে দীক্ষা নেয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন দল ও ব্যাক্তির কাছ থেকে ইসলামী দীক্ষা নেয়।
বাংলাদেশের মুসলিম জনতার বিশ্বাস অনেকাংশেই যেমন বিভিন্ন দল ও মতের প্রভাবমুক্ত নয়, তেমনি এখানকার প্রগতিশীল ও প্রথাবিরোধী যে ধারা সক্রিয়, সেসবও এসব দল ও মতের প্রভাবমুক্ত না।
অধুনা বাংলাদেশে বিভিন্ন ইসলামী দলের কার্যক্রম শুরু হয়। যেমন: তাবলীগ জামাত, জামায়াত ইসলামী , আহমেদিয়া জামাত, দেওয়ানবাগী, আটরশি, হিজবুত তাহরীর ইত্যাদি বিভিন্ন দল। ইসলামপন্থী ও ইসলাম বিদ্বেষী দুটি ধারার চিন্তাভাবনা কোন না কোনভাবে এদের সাথে জড়িয়ে আছে। একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবাসীদের উপর যে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে তার একটি ইসলামী বৈধতা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে তৎকালীন পাকিস্তানী সরকার যাতে করে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম জনতার মধ্যে তাদের অপকর্মের একটি ইসলামী বৈধতা দাঁড় করানো যায়।
এ বৈধতা আদায় করার জন্য তাদের দরকার ছিল বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দের সম্মতি। অনেক ইসলামপন্থী দল এ কূটনৈতিক চাপে পড়ে সরকারি অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি এতকাল ধরে পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতা করে এসেছে এমন ইসলামী দলও পাকিস্তানী শাসকদের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বুঝানো হয়, এ হচ্ছে ইসলাম বনাম হিন্দু (পাকিস্তান বনাম ইন্ডিয়া) ধর্মের যুদ্ধ। ২ আর ২ যোগ করলে ৪ হয়।
এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এ মিথ্যা প্রচারের শিকার ইসলামপন্থীরা যেমন হয়েছিল ঠিক তেমনি তার শিকারে পরিণত হয় প্রগতিশীল প্রথাবিরোধী ধারাটিও। কথিত প্রগতিশীল ধারাটিও ইসলামের এমন একটি ছবি ধারণ করে যাতে পাকবাহিনীর সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদের অপকর্মের সুস্পষ্ট জলছাপ লেগে ছিল। অতঃপর ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু পাকিস্তানের কাঁধে ভর করে তারা ইসলামকে বিচারের কাঠগোড়ায় দাঁড় করায়। পাকিস্তানী সরকারের রাজনৈতিক খেলাকেই তারা ইসলাম হিসেবে ধরে নেয়।
এক কথায়, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মভীরু জনতা যেমন মূল ইসলামী উৎস হতে বিচ্ছিন্ন থেকে বিভিন্ন দল ও ব্যাক্তির প্রভাবে ইসলাম সম্পর্কে দীক্ষা পেয়েছে ঠিক তেমনি এদেশের প্রথাবিরোধী প্রগতিশীল ধারাটিও এসব দল ও মতের উপর ভিত্তি করেই ইসলামের পর্যালোচনা দাঁড় করিয়েছে।
তাবলীগ জামাত, আহমেদিয়া জামাত, জামাত ইসলামী ,মাইজভান্ডারী, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ,হরকাতুল জিহাদ, দেওয়ানবাগী,আহলে হাদীস, জাকের পার্টি, হিজবুত তাহরীর, হিজবুত তাওহীদ ইত্যাদি দলগুলোর কাঁধে দাঁড়িয়ে যদি কেউ ইসলাম বিচার করে তাহলে ইসলামপন্থী ও প্রথাবিরোধী প্রগতিশীল দুটি ধারার-ই ভুল পথে পা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে এর অনেক নজির অবশ্য আমরা দেখেছি। কোন একটি দল বা মত হয়ত কিছুটা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই বলে একটি বা দুটি দল দিয়ে ইসলাম বিচার করাটা শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, তা হাজারো মানুষের পথভ্রষ্টতার কারণ।
আমাদের সবার ইসলাম-ই কোন না কোনভাবে কোন দল বা মতের সাথে জড়িত। বিভিন্ন দল ও মতের লোকজনের কাছ থেকেই ইসলাম সম্বন্ধে সবাই হাতে খড়ি দেয়। তাতে হয়তবা অনেক মানুষ ইসলামকে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। তবে কেউ কি কখনও এসব দলকে ইসলামের মূল উৎসধারা অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর স্কেল দিয়ে মাপার চেষ্টা করেছে? হাতের পাঁচ আঙুলে গোনা যায় এমন কয়েকজনকে বাদ দিলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা হল অন্ধ অনুসরণ। এর ফলে মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ ও সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠেছে।
মনে রাখতে হবে ইসলামে কোন অন্ধ অনুকরণ ও আনুগত্য নয়। অন্ধ অনুকরণ যদি করা যায় তা শুধু করতে হবে আল্লাহ ও তার রাসুল স. এর ক্ষেত্রেই। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সুস্পষ্ট করে মুসলিম উম্মাহদের জানিয়ে দিয়েছিলেন:
“ আমি যদি বাঁকা হয়ে যাই তাহলে তোমরা আমায় সোজা করে দিবে। ”
আর বাঁকাকে সোজা করা যাবে তখন-ই যখন আমাদের ইসলাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে। হযরত মুহাম্মদ স. , ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনকে প্রত্যেক নর নারীর জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন।
নেতাদের অন্ধ আনুগত্য করার জন্য নয়। বরং নিজেদের বাঁচাতে এবং নেতারা বেঁকে গেলে তাদের সোজা করে দেওয়ার জন্য। এখন সময় এসেছে ইসলামের মূল উৎসের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ইসলামকে জানা ও বুঝার। এর জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের। কাঠখড় পোড়াতে হবে অনেক।
ইসলামকে পরিচ্ছন্নভাবে বুঝতে হলে এ কষ্টটুকু অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। নয়ত বিভিন্ন দল ও মতের অন্ধ অনুসরণ না করে আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।