আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিঞ্চিত অঞ্জন দত্ত সমগ্র

নাল ভেক্টর

পাগল ! পাগল ! সাপ লুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে। এক মুখ দাঁড়ি গোঁফ, এক মুখ দাঁড়ি গোঁফ, অনেক কালের কালো ছোপ ছোপ। জট পড়া চুলে তার উঁকুনের পরিপাটি সংসার। পিচুটি চোখের কোণে, দৃষ্টি বিস্মরণে মগ্ন। বাবু হয়ে ফুটপাথে একা একা দিন রাত রঙ্গে।

পাগল ! পাগল ! সাপ লুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে। চালচুলো নেই তার, নেই তার চেনা বা অচেনা। আদম-সুমারি হলে তার মাথা কেউ গুনবে না। তার ভোট চাইবে না গণতান্ত্রিক কোনো প্রার্থী। সরকারে দরকার নেই তাই নিজের সুড়ঙ্গে।

পাগল ! পাগল ! সাপ লুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে। বটতলা চুম্বন পদ্ধতি, পেট মোটা ব্যকরণ বই। ধর্ম বা রাজনীতি, ঠাকুরের ছবি থেকে হরিবোল খই। সারিবাদি সালসা বা, ভোগীর লালসা আর আভোগীত গান। হঠাত্ হাসপাতালে অকারণে ফাঁকতালে মহাপ্রয়াণ।

ভিডিও ক্যাসেটে আর নীল সোফাসেটে বসে মিঠে খুনসুটি। লক আউট কারখানায়, তামাদী মজুরী আর কেড়ে নেয়া রুটি। জগতে যা কিছু আছে, কিছু নেই তার অনুসঙ্গে। পাগল ! পাগল ! সাপ লুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে। আমার রাস্তা আমার বাড়ি আমার রাস্তা আমার বাড়ি আমার ফাটা দেয়াল আমার পোড়া মনের অজস্র জঞ্জাল ভাঙছে কেবল ভাঙছে শুধু যাচ্ছে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আমার রাত্রি আমারই সকাল একই ভাবে ঘামতে ঘামতে মনের ভেতর নামতে নামতে কোনমতে করছি দিনটা পার চলছে চলবে চলছে চলবে এই ভাঙাচোরা গল্পটা আমার নাকে আমার পোড়া পিঠের গন্ধ বুকে কালো ধোঁয়া হাতে-পায়ে শুধুই অবক্ষয় তবু কাশতে কাশতে এখনও যে হাসতে পাড়ি ভালোবাসতে নিজের কাছে নিজেরই বিস্ময় করবো যে আর কত ঘেন্না নিজেই নিজের ছায়াটাকে করবো যে আর কত অপমান আবার তো সেই আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিজের নরকটাকে গাইবো আমি ভালোবাসার গান এসো আমার ঘরে একবার তুমি এসো আমার ঘরে একবার পারো যদি দেখে যেও বেঁচে থাকা কারে বলে এসো আমার শহরে একবার আজ গানের তালে হৃদয় দোলে আজ গানের তালে হৃদয় দোলে মিঠে বাতাস যায়রে বয়ে হলুদ ধানের দোদুল দোলায় পিয়াসী মন দোলে ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলো না এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলো না।

। ঐ কোকিলাটার কুহু কুহু কার লাগিগো বাজে এই কালো মেয়ের এমন দিনে মন লাগে না কাজে ঐ দুরে কোথাও রাখাল বাঁশি পাগল হাওয়ায় ভাসে ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলো না এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলো না। । নাক সেজেছে নাক ছাবিতে কান সেজেছে দুলে কালো কপালে কুমকুম আর খোপার বাঁধন চুলে পশ্চিম কোনে সূর্যি ডোবে আন্ধারে মন কাঁদে ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলো না এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলো না আকাশ ভরা সূর্য তারা আকাশ ভরা সূর্য তারা আকাশমুখী সারি সারি কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া ঠাসাঠাসি বাক্স বাড়ি এখান থেকেই চলার শুরু এখান থেকেই হামাগুড়ি এখানটাতেই আমার বাসা আমার বাড়ি …. বারোতলার ওপর থেকে বারো বছর কেটে গেছে ইস্কুলটা যাওয়া ছাড়া নামা হয়না মাটির কাছে শোবার ঘরের দেওয়ালটাময় হাঁস মুর্গী অনেক নাচে তবু ওর লাল (?) চোখের ভেতর কোথাও যেন কান্না ভাসে৷ সেখান থেকে একটু দূরে একটুখানি এগিয়ে গেলে একলা থাকেন নন্দীবাবু বন্দী সেও যে বয়সকালে সংসারটার হাল ধরেছে বখাটে তার ছোট ছেলে এক কাপ চা দিয়ে গেছে কখন জানি সাত সকালে রেডিওটার ব্যাটারিটা হঠাত্ কবে গেল ক্ষয়ে খাটের থেকে নামতে মানা বুকের ব্যাথা গেছে সয়ে নীলিমার মা তাই তো যে আর ভাবেনা আর সংসারটা নিয়ে এঁদো গলির সেঁদো ঘরে সবই কেমন বয়ে গেছে এখান থেকেই আটকে পরা এখানটাতেই ঘুরোঘুরি এখানটাতেই আমার বাসা আমার বাড়ি …. চৌধুরীদের একুশ তলায় মদের নেশায় উঁচু গলায় ঝগড়া চলে গভীর রাতে লাজলজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে যায় কোর্ট কাছারি অনেক হল হলনা যে ছাড়াছাড়ি সম্পত্তি আঁকড়ে ধরে গভীর রাতের মারামারি৷ সেখান থেকে একটু দূরে পাড়ার মোড়টা একটু ঘুরে অলিগলি পাকস্থলীর ভেতর কারা গুমড়ে মরে বলি হল আরেকটা প্রাণ মস্তানদের ছোরাছুরির এখানটাতেই আমার বাসা আমার বাড়ি সারি সারি …. চিলেকোঠার বারান্দাটা বন্ধ কেন জানো কি তা? এখান থেকেই লাফিয়ে পরে লাহাবাড়ির অনিন্দিতা গভীর রাতে তাইতো কেউ আর ওঠে না যে ওদের ছাদে অন্ধকারের বন্ধ ঘরে কারা যেন ডুকরে কাঁদে সেখান থেকে একটু দূরে ছদের পাঁচিলটা ঘুরে এক চিলতে রোদ্দুরেতে ছোট্ট মেয়ে নামতা পড়ে তাই তো কালো ইঁটের ফাঁকে বট পাতাটা জিভ ভ্যাংচায় পাড়ার নেড়ি, বাচ্চাটাকে বুকে করে হাঁটতে শেখায়৷ এখানটাতেই আটকে পরা এখানটাতেই ঘুরোঘুরি এখানটাতেই আমার বাসা আমার বাড়ি …. আকাশ ভরা সূর্য তারা আকাশমুখী সারি সারি কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া ঠাসাঠাসি বাক্স বাড়ি এখান থেকে চলার শুরু এখানটাতেই হামাগুড়ি এখানটাতেই আমার বাসা তোমার ভালোবাসার বাড়ি৷ আমি বৃষ্টি দেখেছি আমি বৃষ্টি দেখেছি বৃষ্টির ছবি একেছি আমি রোদে পুড়ে ঘুরে ঘুরে অনেক কেঁদেছি আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আমি বৃষ্টি দেখেছি চারটে দেয়াল মানেই নয়তো ঘর নিজের ঘরেও অনেক মানুষ পর কখন কিসের টানে মানুষ পায় যে খুঁজে বাঁচার মানে ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর আমি অনেক ভেঙ্গেচুরেও আবার শুরু করেছি আবার পাওয়ার আশায় ঘুরে মরেছি আমি অনেক হেরে গিয়েও হারটা স্বীকার করিনি শুধু তোমায় হারাবো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আমি বৃষ্টি দেখেছি হারিয়ে গেছে তরতাজা সময় হারিয়ে যেতে করেনি আমার ভয় কখন কিসের টানে মানুষ পায় যে খুঁজে বাঁচার মানে ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর আমি অনেক স্রোতে বয়ে গিয়ে অনেক ঠকেছি আমি আগুন থেকে ঠেকে শিখে অনেক পুড়েছি আমি অনেক কষ্টে অনেক কিছুই দিতে শিখেছি শুধু তোমায় বিদায় দিতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি আলীবাবা নাম আমার আলীবাবা, বয়স আমার দশ, আজকে দিনটা বড়, আজকে শিশু দিবস। চারটে মুরগী ছাড়ালে, একটা টাকার নোট, ওই কালো ড্রামের ভেতর ওরা করছে যে ছট্ ফট্।

নাম আমার আলীবাবা, বড়দিনের ভীড়। তাই রক্তে মাখা মাখি আমার সারাটা শরীর। শীত যে আমার করছে না কো, নেই যে অবকাশ, আটতিরিশটা পাখি মানে ন টাকা পঞ্চাশ। রাতের বেলায় ফিরে এসে চাচার পিঠ মালিশ, নেই যে আমার বিছানা, নেই যে বালিশ। তবু ঘুম যে আমার চলে আসে ডিসেম্বর মাসে।

স্বপ্ন দেখি, ঘুড়ি ওড়াই টানা আকাশে। কান্না আমার যাচ্ছে কমে, বাড়ছে যে সাহস, নাম যে আমার আলীবাবা, বয়স এখনো দশ। একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে থাকবেনা সাথে কোন ছাতা, শুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝ রাস্তায় ভিজে যাবে ছটি-জামা-মাথা, থাকবেনা রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া দোকান-পাট সব বন্ধ শুধু তোমার আমার হৃদয়ে ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ । একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে মনে পড়ে যাবে সব কথা কথা দিয়ে কথাটা না রাখা ফেলে আসা চেনা চেনা ব্যাথা অদূরে কোথাও কোন রেডিওতে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ আর বৃষ্টির রং হয়ে যাবে নীল আর আকাশের রংটা ছাই । একদিন ..বৃষ্টিতে……… একদিন ….বৃষ্টিতে বিকেলে ভাঙ্গা দেয়ালের গায়ে সাতপাকে বাঁধা কবে কার নুনশোতে কোথাও আর বৃষ্টির ছাটে যাবেন দেখা দু’জনের চোখের জল ঝমঝম ঝমঝম ছোখের জল।

একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে আমরা ধরা পড়ে যাব দেখ ঠিক ধুয়ে যাবে যত আছে অভিমান ধুয়ে যাবে সিঁধুরের টিপ, আর ছটিটাও ছিড়ে যাবে তক্ষনি তাই পালানো যাবেনা যে কোথাও রাস্তা যেমন তেমনই শুধু লোকজন সব উদাও । একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে থাকবেনা সাথে কোন ছাতা, শুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝ রাস্তায় ভিজে যাবে ছটি-জামা-মাথা, থাকবেনা রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া দোকান-পাট সব বন্ধ শুধু তোমার আমার হৃদয়ে ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ । কাঞ্চনজংঘা একটু ভালো করে বাঁচবো বলে আর একটু বেশী রোজগার ছাড়লাম ঘর আমি ছাড়লাম ভালোবাসা আমার নীলচে পাহাড় পারলো না কিছুতেই তোমার কলকাতা আমাকে ভুলিয়ে দিতে পাহাড়ি রাস্তার ধারে বস্তির আমার কাঞ্চনকে কাঞ্চন জানা কাঞ্চন ঘর কাঞ্চনজংঘা কাঞ্চন মন তো পাইলে সোনা অনু লইয়ো মউল্লা হাঙচুকাঞ্চন সোনার খোঁজে কেউ কতদুর দেশে যায় আমি কলকাতায় সোনার স্বপ্ন খুঁজে ফিরি একা একা তোমাদের ধর্মতলায় রাত্রির নেমে এলে তিনশো বছরের সিমেন্টের জঙ্গলে ফিরে চলে যাই সেই পাহাড়ি বস্তির কাঞ্চনের কোলে জং ধরা রঙ চটা পার্কের বেঞ্চিটা আমার বিছানা কখন যে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো আমাকে তোমাদের থানা তিন মাস জেল খেটে এখন আমি সেই থানার দারোয়ান পারবো না ফিরে পেতে হয়তো কোনদিন আমার সেই কাঞ্চন কাঞ্চন জানা কাঞ্চন ঘর কাঞ্চনজংঘা কাঞ্চন মন তো পাইলে সোনা অনু লইয়ো মউল্লা হাঙচুকাঞ্চন বেড়াতে যদি তুমি যাও কোনদিন আমার ক্যালিংপঙ জেনে রেখো শংকর হোটেলের ভাড়া টুরিস্ট লজের থেকে কম রাত্রির নেমে এলে আসবে তোমার ঘরে চুল্লিটা জ্বালিয়ে দিতে আর কেউ নয় সে যে আমার ফেলে আসা নীলচে পাহাড়ি মেয়ে বলো না তাকে আমি দারোয়ান শুধু বলো করছি ভালোই রোজগার ঐ বস্তির ড্রাইভার চিগমির সাথে যেন বেঁধে না ফেলে সংসার আর কিছু টাকা আমি জমাতে পারলে যাবো যাবো ফিরে পাহাড়ি রাস্তার ধারের বস্তির আমার নিজের ঘরে আর যদি দেখ তার কপালে সিঁদুর বলো না কিছু তাকে আর শুধু এই সত্তর টাকা তুমি যদি পারো গুজে দিও হাতে তার ট্রেনের টিকিটের ভাড়াটা সে দিয়েছিলো কানের মাকড়ী বেঁচে ভালোবাসার সেই দাম তুমি দিয়ে দিও আমার কাঞ্চনকে কাঞ্চন জানা কাঞ্চন ঘর কাঞ্চনজংঘা কাঞ্চন মন তুমি যাকে বলো সোনা আমি তাকে বলি কাঞ্চন কাঞ্চন জানা কাঞ্চন ঘর কাঞ্চনজংঘা কাঞ্চন মন তো পাইলে সোনা অনু লইয়ো মউল্লা হাঙচুকাঞ্চন তুমি আসবে বলে তুমি আসবে বলে তাই আমি স্বপ্ন দেখে যাই আর একটা করে দিন চলে যায় সুদিন আসবে বলে ওরা আগুন জ্বালায় আর হাজার হাজার মানুষ মরে যায় দেখবে বলে আকাশটাকে মাথা উঁচু করে শুধুই নোংরা কালো ধোঁয়া ঢেকে যায় কাছে আসবে বলে অন্ধকারে হাতড়ে মরে ওরা তবু শরীর দুটো থাকে আলাদা আমার মনটা তবু আশা করে যায় এই মনটা তবু ভালবাসতে চায় এই মন… আশা করে যায় সময় ছুটে চলে আমি আটকে পড়ে রই আমার রাস্তা আঁটে আমি আঁটি না চোখে নিয়ে স্বপ্ন বুকে নিয়ে অনেক অনেক কথা আমার বয়স বাড়ে, আমি বাড়ি না তুমি আসবে বলে তাই আমি স্বপ্ন দেখে যাযই আর একটা করে দিন চলে যায় সুদিন আসবে বলে ওরা আগুন জ্বালায় আর হাজার হাজার মানুষ মরে যায় আমার মনটা তবু আশা করে যায় এই মনটা তবু ভালবাসতে চায় এই মন… আশা করে যায় দু’টো মানুষ দু’টো মানুষ এসাথে কত পথ চলা হাতে হাত রেখে কথা বলা কেন সব করে অবহেলা কেন শেষ-মেষে এসে বিদায় ফুলদানি আছড়ে ভেঙ্গে চুড়মার ফুল জল সব একাকার নেমে আসে অন্ধকার জানালার বাইরে নেমে আসে রাত দু’টো বালিশ কত স্বপ্ন ভালোবাসা বোঝাই দেখে যায় এই কুৎসিত লড়াই আশা আকাংখা সব পুড়ে ছাই কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না টেবিল ল্যাম্পের আধো অন্ধকারে ভাঙ্গাচোড়া মন দুটো গুমড়ে গুমড়ে মরে দুজনেই বসে থাকে হাত ধরবে বলে কেউ মুখ ফুটে কিছুই বলে না ভগবান তাই নেমে আসে না আসে সকাল চোখ মুছে চিঠি লেখা ব্রিফকেস হাতে ট্যাক্সি ডাকা ফিরে না তাকিয়ে দেখা এইভাবে কেউ চলে যায়

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।