বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েলপাখি — চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম — বট — কাঠালের — হিজলের — অশখের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল — বট — তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল; বেহুলার একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চরায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো — একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়।
প্রতিদিন কর্মব্যস্ততার পর একটু অবসর প্রয়োজন হয় প্রতিটি মানুষের, যে অবসরকে আমরা ধরে নিতে পারি জীবনের চলার পথকে গতিময় করতে শক্তি হিসেবে। উন্নত বিশ্বের বাসিন্দারা বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়কে বেছে নেন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে, যাতে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজে উৎসাহ পান, নতুন উদ্যমে বেশি বেশি কাজ এবং সুষ্ঠু ও সুন্দর কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা বাঙালিরা যে পরিমাণে শ্রম দিয়ে থাকি তা উন্নত দেশের তুলনায় নিঃসন্দেহে কম নয়।
তবে আমরা অনেকে মনে করি বেড়ানো মানে অহেতুক অর্থ খরচ করা এবং ঝামেলা।
এ মনোভাব কখনো ঠিক হতে পারে না। আমি মনে করি আমাদের ব্যস্ত জীবনে একটু সময় বের করে নিজেদের সাধ্যানুযায়ী বছরের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় নিজে কিংবা পরিবার-পরিজনদের নিয়ে কোনো মনোরম স্থানে ঘুরে আসা যেতে পারে। তাতে করে নিশ্চিত ভাবে আগের তুলনায় কাজের গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে।
কান্তজী মন্দির
ভ্রমণকাল: গ্রীষ্ম (জুন মাস)
কান্তনগরের প্রাচীন নাম ছিল বিরাট রাজ্য। বিরাট রাজার গোচারণভূমি হিসাবে এই স্থানকে বলা হতো উত্তর গোগৃহ।
রাজা প্রাণনাথ (কর্ণ) নিজ রাজধানীর কোলাহলময় স্থানের পরিবর্তে নদী বেষ্টিত এই স্থানে গড়েছিলেন মন্দিরটি। তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তাঁর শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক কান্তজী মন্দির। বাংলাদেশের দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত।
এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত কারণ তিনতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিলো।
কান্তজী মন্দির আকারে খুব বড় না হলেও এর নির্মানশৈলী নজরকাড়া। গঠনবিন্যাস ও শিল্পচাতুর্য মন্দিরটির সামগ্রিক দৃশ্যকে এমনই মাধুর্যমন্ডিত করে তুলেছে যে, এর মতো নয়নাভিরাম মন্দির বাংলাদেশে আর নেই। মূলত মন্দিরটি নির্মিত হয় ইট পাথর দিয়ে। ইটগুলো তৈরী হয়েছিল গ্রাম্য শিল্পীদের হাতের ছোয়ায় এবং পাথরগুলো আমদানি করা হয়েছিল ভারতের বিন্দ্রাচল ও রাজমহল পাহাড়ী এলাকা থেকে।
মহাস্থানগড় (বগুড়া)
ভ্রমণকাল: শীত (জানুয়ারী মাস)
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে।
এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত।
কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী এর যুদ্ধ হয়। (১২০৫-১২২০) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। জাদুঘরে সংরক্ষিত শিবলিঙ্গ।
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’।
শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।
পদ্মা পাড়ে বারংবার আনাগোনা
ভ্রমণকাল: শীত (জানুয়ারী মাস)
পদ্মার তীরঘেঁষা সারি সারি কাশফুল দেখলে মনে হয় যেন কোনো শিল্পীর নিপুণ তুলির ছোঁয়ায় নয়ন জুড়ানো রূপে সাজানো হয়েছে। আর যখন বাতাস এসে সারি সারি কাশবনকে দোলা দেয় তখন মনে হয় যেন সেখানে সাগরের ঢেউ খেলছে।
রিসোর্টের এ চমৎকার দৃশ্য অবলোকন করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন সেখানে ছুটে আসছেন।
অনেকেই আমার মতো শুধু একবার নয় বারবার সেখানে যাচ্ছেন- পদ্মার সে রূপ মনে গেঁথে নিচ্ছেন কবিতা কিংবা সাহিত্যের অন্য কোনো অন্তর দৃষ্টি দিয়ে। আর তা হয়তো প্রকাশও পাবে সে রকম কোনো সাহিত্যের ভাষায়।
নাইয়ারে নাওয়ের বাদাম তুইলা কোন দূরে যাও চইলা
কালীগঙ্গা তীরের সাঁইজী
ভ্রমণকাল: শীত-বসন্ত (ফেরুয়ারী মাস)
কুষ্টিয়া শহরের অদূরে একটি ছায়াঘেরা নিবিড় গ্রাম ছেঁউড়িয়া। এক পাশে শান্ত নদী গড়াই, অন্য পাশে কালিগঙ্গা নদী। এখানেই বাউল সম্রাট লালন শাহের সমাধি।
বাউল ফকিরদের কণ্ঠে সুরের মূর্ছনা তৈরি করে লালনের গান। লাখো ভক্তের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হয় লালন আখড়া।
এই সমাধিকে ঘিরে প্রতি বছর বসছে লালন মেলা। প্রতি বছর দুটি অনুষ্ঠানে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ থেকেও আসেন লালন ভক্তরা।
কী আশায় বাঁধি খেলাঘর / বেদনার বালুচর
কুয়াকাটা: কুমারী সাগর কন্যা
ভ্রমণকাল: গ্রীষ্ম (জুলাই মাস)
বঙ্গোপসাগর বিধৌত সাগর কন্যা কুয়াকাটা প্রকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি যা কিনা ভুস্বর্গের তুল্য।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন যা শুধু দেখলেই উপভোগ করা যায়।
একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দারুন একটি উপভোগ্য ব্যাপার। তখন মনে হবে বিরাট এক অগ্নিকুন্ড আস্তে আস্তে সাগর ভেদ করে গগনের উপর দিকে উঠে যাচ্ছে আবার সূর্যাস্তের সময় সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় সূর্যটা। মনে হয় সাগরের মধ্যেই সূর্যের আবাসস্থল।
এই বৈশিষ্ট কুয়াকাটাকে বিশ্বের অন্যতম বিরল সৈকতে পরিনত করেছে।
চমৎকার চোখ ধাধানো এই কুয়াকাটাতে রয়েছে প্রকৃতির দান যথা প্রাকৃতিক সমঢালের বালুময় সৈকত, নীল আকাশ, নারিকেল গাছের সারি, চিরসবুজ গরান গাছের বন, পূর্নিমার রাতে চাদের আলোয় বিশাল বিশাল ঢেউ, অমাবস্যার অন্ধকারে ফসফরাসের মিশ্রনে সাগরের ঢেউগুলো থেকে আলোর বিচ্ছুরণ।
নৈসর্গিক বৈচিত্র্যের বান্দরবান
ভ্রমণকাল: শীত-বসন্ত (ফেরুয়ারী মাস)
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর । আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়।
বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে "ম্যাঅকছি ছড়া " হিসাবে । অর্থ্যাৎ মার্মা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ । কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে । বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে।
তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবানের প্রকৃত নাম "রদ ক্যওচি ম্রো"।
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে
বুদ্ধ ধাতু জাদিতে অপরাজেয় প্রাণীর মূর্তি (ঘন্টাসহ)
নীলগিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অতি উচ্চে অবস্থানের কারণে এই স্থানটি সর্বদা মেঘমণ্ডিত আর এটাই এই পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ।
রাঙামাটির রঙে চোখ জুড়ালো
ভ্রমণকাল: গ্রীষ্ম (জুন মাস)
সাম্পান মাঝির গানে মন ভরালো
রুপের মধু সুরের যাদু কোন সে দেশে
মায়াবতী মধুমতি বাংলাদেশে
ও সেই রোদের আলো শিশির ছুঁয়ে
এ কোন খুশির কথা যায় শুনিয়ে
একটু দোলা দিয়ে এই বাতাসে
মগ্ন করে রাখে কার আবেশে
রুপের মধু সুরের যাদু কোন সে দেশে
মায়াবতী মধুমতি বাংলাদেশে
ও সেই ফুলের হাসি মাঠের বুকে
সবুজ আশায় কেন পরান মাখে
একটু অনুরাগে লাল পলাশে
অন্ধ করে রাখে কার পরশে
রুপের মধু সুরের যাদু কোন সে দেশে
মায়াবতী মধুমতি বাংলাদেশে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।