তাশফী মাহমুদ
কোটি কোটি মোবাইল এবং ল্যান্ডফোন গ্রাহকের সামনে পুনঃনিবন্ধন নামের আরেকটি ভোগান্তি অপেক্ষা করছে। আগামী সেপ্টেম্বরে একই সঙ্গে নতুন সিম কার্ড কেনার ক্ষেত্রে নিবন্ধন এবং ইতিমধ্যে বিক্রীত সংযোগের পুনঃনিবন্ধনে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত এবং জুনের মধ্যে সব ফোনের পুনঃনিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, হুমকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন রোধে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। দুটি ক্ষেত্রেই জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অনিবন্ধিত বা ভুয়া নিবন্ধনের সংযোগ ব্যবহার হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্ত করা যায় না। এই নিবন্ধনে কড়াকড়ি এবং পুনঃনিবন্ধন কার্যক্রম আবার শুরু হচ্ছে। পুনঃনিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৬ কোটি মোবাইল এবং আরও কয়েক লাখ ল্যান্ডফোন গ্রাহককে এর আওতায় আনা হবে। পরে এই ডেটাবেজ পুলিশ-র্যাব এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরবরাহ করা হবে।
আজ এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং মোবাইল অপারেটরদের বিশেষ বৈঠক বসছে।
বৈঠকে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে। এদিকে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পোস্টারিংসহ গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিটিআরসি এবং র্যাব-পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মোবাইল
অপারেটরা এ কাজগুলো করবে।
ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বিটিআরসি একটি নীতিমালার খসড়াও তৈরি করেছে। নীতিমালায় আগামী সেপ্টেম্বর এবং ২০১১ সালের জানুয়ারি-জুন সময় ধরে অনেকগুলো দিকনির্দেশনা বাস্তবায়রের কথা বলা হয়েছে।
তবে মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও পুনঃনিবন্ধন বিষয়ে সেখানে কিছু বলা হয়নি।
এর আগে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের আগস্ট থেকে ২০০৮ সালের মার্চ পর্যন্ত একবার পুনঃনিবন্ধন কার্যক্রম চালানো হয়। তখন পুনঃনিবন্ধন করা হয়েছিল ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেনা মোবাইল সিম কার্ডের জন্য। তখনকার সে কার্যক্রম সফল হয়নি বলেই এখন আবার পুনঃনিবন্ধন করা হচ্ছে।
মোবাইল অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, আগের দফায় পুনঃনিবন্ধনে কড়াকড়ি আরোপ করায় তখন প্রায় অর্ধকোটি সিম বাতিল হয়ে যায়।
অপারেটরদের খরচও হয়েছে কয়েকশ' কোটি টাকা। সেবার লাখ লাখ পুরনো সিম চালু রাখতে গিয়ে কয়েকটি অপারেটর ভুয়া নাম-ঠিকানা এবং ছবি ব্যবহার করে পুনঃনিবন্ধন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবারও পুনঃনিবন্ধন করতে গেলে একই রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে নিবন্ধন এবং পুনঃনিবন্ধনের যে খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে তাতে দুটি ক্ষেত্রেই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে; অন্যদিকে মোবাইল খাতের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, 'নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যাবে না। ' দেশে এখন মাত্র সাড়ে আট লাখ লোকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। বিটিআরসির তথ্য মতে, বর্তমানে ৬ কোটি লোকের হাতে মোবাইল আছে। এই ৬ কোটির মধ্যে অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।
প্রচলিত নিয়মানুসারে ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহরের অল্প বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে মোবাইল রয়েছে। নতুন নীতিমালা চালু হলে এসব মোবাইল অবৈধ হয়ে যাবে। তবে খুব প্রয়োজন হলে অভিভাবকের নামে সিম তোলা যাবে। সে ক্ষেত্রে ওই ছাত্র-ছাত্রীর মোবাইল সংক্রান্ত সব দায়-দায়িত্ব বর্তাবে অভিভাবকের ওপর।
পুনঃনিবন্ধন এবং ডিলার-খুচরা বিক্রেতার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেছে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব।
তারা বলেছে, পুনঃনিবন্ধনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে সেক্টরের প্রবৃদ্ধি পড়ে যাবে। গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়বে। সে ক্ষেত্রে একটি হ-য-ব-র-ল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তাতে লাভের চেয়ে বরং ক্ষতি আরও বেশি হবে। হুমকির মুখে পড়বে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার স্লোগান।
অপারেটররা বলছে, শহরের লোকদের সংযোগ কেনার দিন শেষ। এখন যত সিম বিক্রি হয় তার প্রায় সবটাই গ্রামের দিকে। একটি অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন, যেখানে জমি বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষক এত ঝামেলা মানতে চান না, সেখানে একটি মোবাইল সিম কিনতে কি তারা এতটা নিয়ম-কানুন মানতে চাইবেন? অন্যদিকে একবার পুনঃনিবন্ধন করা গ্রাহককে আবারও পুনঃনিবন্ধনের ধাক্কায় ফেলা মানে সংযোগটি বন্ধ হয়ে যাওয়া।
অন্যদিকে ডিলার-খুচরা বিক্রেতাদের নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক করায় আপত্তি রয়েছে অপারেটরদের। তারা বলছেন, এ ব্যবসা যারা করছে তাদের বেশিরভাগই স্বল্পশিক্ষিত।
এসব বিষয়ে অ্যামটবের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ এইচ চৌধুরী সমকালকে বলেন, নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংযোগ করার জন্য আমরা আরও আগে এর ডেটাবেজ লিংক চেয়েছি। এজন্য আমরা প্রতি ব্যবহারে টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও সরকারকে দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করার অবস্থায় এখনও আসেনি। ফলে চাইলেও ওই তথ্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে পুনঃনিবন্ধনে গ্রাহক ভোগান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্দেহ নেই, এতে গ্রাহকের সমস্যা হবে।
প্রবৃদ্ধিও হয়তো খানিকটা কমবে। তবে কোনটা করলে রাষ্ট্র ও সরকারের মঙ্গল হবে, সেটিও দেখতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।