''সংবাদপত্র যা ছাপে তার একটা বড় অংশই হলো 'লর্ড জোনস মারা গেছেন' ধরণের তথ্য। অথচ সেটি যাদের জানানো হয় সেই জনগণ খবরই রাখে না যে লর্ড জোনস বেঁচে ছিলেন''
সম্পাদকীয় সৃজনশীলতার অনন্য সাধারণ প্রতিভা, বংলাদেশের সংবাদপত্র জগতের কিংবদন্তী নায়ক, বিশিষ্ট মধ্যরাত্রিক নির্ঘুম রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং তিন সন্তানের গর্বিত জনক দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খানের আজকের মন্তব্য কলামটি পড়ে বুক ফাটা কান্না দমাতে পারছি না!
প্রথম পাতার এমন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটির প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে লুকিয়ে আছে এই সময়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে জটিল পরিস্থির ভয়াবহ বর্ণনা। পরামর্শ দেয়া হয়েছে এ থেকে উত্তরণের। সাধারণ আম জনতার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এমন সংবাদটি নি:সন্দেহে প্রশংসার খোরাক।
সংবাদের শুরুটা এভাবেই- ‘নিজের চোখে না দেখে, নিজে গিয়ে না থাকলে পত্রিকায় পড়ে কিংবা কারো মুখে শুনে বিশ্বাস করা কঠিন।
চট্টগ্রাম শহরের কোলাহলের ভেতরেই ফয়’স লেকের এক প্রান্ত থেকে আপনি যখন বোটে চড়ে রিজর্টের দিকে রওনা হবেন, ১০ মিনিটের সেই নৌভ্রমণের এক মিনিটও না যেতেই বিস্ময় আর আনন্দের শিহরণ শুরু হবে। ‘
তিনি দু:খ করে বলছেন, ‘কনকর্ড গ্রুপকে অনেক অনেক অভিনন্দন স্মরণীয় ছুটি কাটানোর ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য। আমার ছোট ছোট তিন মেয়ে লাবিবা, যূলিকা, আডিভা অপরিসীম ও নির্মল আনন্দ উপভোগ করেছে যেমন সত্য, আমার স্ত্রী মন্টি ও আমিও কম আনন্দ পাইনি সেটাও সমান সত্য। মন্টি আর আমি এক বছরের আডিভাকে নিয়ে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড-এর পুলে গোসলও করেছি। সেখানে স্পষ্ট বুঝলাম এতটুকুন আডিভাও বেজায় খুশি।
‘ আহা বুক ফেটে কান্না আসছে। ব্যাথায় মনটি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। এমন সম্পাদকের পাছায় তেল দিয়েছেন যে যে কর্মচারীরা তাদের গুণগান শুনতে শুনতে।
‘আর একটি কথা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে যে রিজর্টের কর্মীরা খুবই অতিথিপরায়ণ ও বিশেষ করে শিশুবান্ধব। আমার মেয়েদের থাকাটা আনন্দময় করার জন্য ওয়াটার পার্কটুকুই যথেষ্ট হলেও (ওয়াটার পার্কে মজার কত কিছু আছে লিখলে, দৈনিক আমাদের সময়ের সীমিত পরিসরে স্থান সংকুলান হবে না) রিজর্ট কর্মীরা ওদের দেখভাল করেছে, আদর করে এগিয়ে দিয়েছে বাইসাইকেল।
লাবিবা, যূলিকা সেই সাইকেলও চালিয়েছে মহা-আনন্দে। '
প্রিয় ব্লগার, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এমন অনাবশ্যক ফালতু বিষয় নিয়ে সামু ব্লগের জায়গা নষ্ট করার কৃত অপরাধের জন্য।
খেয়াল করে দেখুন, একটা সময় ছিল যখন বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখকের দেশ ভ্রমণের একটি বিস্তারিত বর্ণনা মিলত। সেটি অবশ্যই উড়োজাহাজ নয়, জলজাহাজ যুগের ঘটনা যখন বৈদেশ-ভ্রমণ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।
কিন্তু দৈনিক আমাদের সময়-এর পাঠকের জন্য সম্পাদকের বৈদেশ-ভ্রমণবিষয়ক গল্প অবশ্যপাঠ্য একটি বিষয়; যা পয়সা দিয়ে কিনে পড়তে হয়। কারণ তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাওয়া মানে আমাদের সময়-এর অন্তত এক কলাম সংবাদের জন্ম দেওয়া। যদিও ‘সংবাদমূল্য’ হিসেবে এটি একটি মূল্যহীন সংবাদ কিন্তু পত্রিকার সম্পাদক বলে কথা!
শুধু তা-ই নয়, আমাদের সময় পত্রিকার বিজ্ঞাপন ভাটা যাচ্ছে, সরকারি বিজ্ঞাপনের জন্য মাননীয় তথ্যমন্ত্রী/প্রধানমন্ত্রী বরাবর আকুল আবেদনসম্পর্কিত ৩-৪ কলামের সংবাদ, কর্মরত সাংবাদিকদের দু-মাস বেতন দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশসূচক ৩-৪ কলামের একটি সংবাদ ইত্যাদি, ‘রক্ত ক্ষরণ থেকে রক্তপাত’ তো হরহামেশাই দেখা যায়।
পাঠক হিসেবে আমাদের জিজ্ঞাসা, যখন পত্রিকাটির রুজি-রোজগার ভালো থাকে তখন কি সেটি সংবাদ হিসেবে ঠাঁই পেতে পারে না? আর যদি পেয়েও যায় তবে পাঠকের কী-ই বা যায়-আসে তাতে?
পত্রিকাটি আসলে এক ধরনের প্রচারপত্র। ‘প্রচারেই প্রসার’ এ আপ্তবাক্য বহন করে পত্রিকাটি প্রতিনিয়ত যে সাংবাদিকতার চর্চা করে, তা হলো ‘প্রভোকেটিভ জার্নালিজম’ অথবা ‘রিউমার জার্নালিজম’।
যদিও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত ১৪ মার্চ ২০১০ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী প্রচারসংখ্যার দিক থেকে পত্রিকাটির অবস্থান তিন নম্বরে। মোট প্রচারসংখ্যা ১,৬৫,২০০ কপি।
মাঝে মাঝেই মনে হয়, পত্রিকার অবস্থান ‘যেদিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা’ ধরার মতো। ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পত্রিকাটি ছিল সেনাবাহিনীর এক রকম মুখপত্র, আবার কিছুদিন যেতে না-যেতেই হয়ে গেল প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মুখপত্র। পরবর্তীকালে আবার সুর পাল্টে হয়ে গেল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।
কখনো আবার এ রকমও হয়, শুধু কোনো একজনের। বিতর্ক উঠতে পারে, পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য কোনো সম্পাদকীয় মতামতে বিশ্বাসী নয়। হতেই পারে। তাতে কোনো আপত্তি নেই, আপত্তি হলো বস্তুনিষ্ঠতার নামে চরিত্রহীনতা বা নীতিহীনতার যে মচ্ছব চোখে পড়ে সেটি নিয়ে।
সমাজে চলমান সহস্র বিষয় নিয়ে পত্রিকাটির আর আনুষ্ঠানিক মতামত প্রকাশের দায়দায়িত্ব রইল না।
দিকনির্দেশনা প্রদানের এই দায়দায়িত্বহীন অবস্থান পত্রিকাটিকে পিছু টান মুক্ত করলেও তার বাউণ্ডুলে চরিত্রকেও আড়াল করতে পারেনি। ফলে জাতির সংকটকালে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকাটির সুর ও স্বর বোঝা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়ে। পত্রিকাটিও সে সুযোগের ষোলোআনা ব্যবহার করে ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’র কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। পত্রিকার এই সুযোগসন্ধানী সাংবাদিকতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।
প্রতিদিনই প্রবাসী কিছু (অ)সাংবাদিকতা বিষয়ক ম্যাটার নিয়ে ঢাউস কিছু গল্প ফাঁদেন।
এগুলো পড়লে মনে হয় প্রত্যেক লেখকই সম্পাদকের বন্ধুস্থানীয় অথবা তাদের অন্য কোথাও লেখার জায়গা এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের সময়ে লিখে আপাতত লেখার হাত তৈরি করে নিচ্ছে।
প্রায়ই দেখা যায় ভুল সংবাদ ছাপে আবার পরদিন ভুলের জন্য ক্ষমা চায়। শুধু ক্ষমা চাইলেই যে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হয় না, বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ বুলেট থেকে গুলি বের হয়ে গেলে তা কোথাও না কোথাও লাগবে।
সুতরাং গুলি কোথায় গিয়ে পড়ল, তা খুঁজতে যাওয়ার মানেটা কী? এইভাবে একটি সংবাদপত্রকে আশ্রয় করে এই পাগলামি বন্ধ হবে কবে??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।