আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংকট থেকে উত্তরনে প্রয়োজন মধুর হাসি এবং মার্জিত ব্যবহার।

লেখিতে এবং পড়িতে ভালবাসি। সেই ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি "ব্যবহারেই বংসের পরিচয়। " এই শ্বাসত অমুল্য বানীটি বাস-ট্রাক-ট্রেন-জাহাজ-লঞ্চ- মিনি-বাস থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহনে যত্নসহকারে লেখা থাকে। বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন সবাই ছোট বেলা থেকে বাচ্চাদের কানে এই মন্ত্রটি ঢুকিয়ে দেন। উদ্দেশ্য ছেলে-মেয়ে বড় হলে যেন সবার সাথে মার্জিত এবং সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার করে, বংসের মান-মর্যাদা যেন সমুন্নত হয়।

বংসের প্রশংসা যেন চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। বংসের সুনাম যেন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। সব সময় হাসি মুখে কথা বলার উপদেশটাও ছেলে-মেয়েরা ছোট বেলা থেকে বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। কথা আছে সুন্দর হাসি দিয়ে নাকি জগত জয় করা যায়। অনেক সময় সুন্দর হাসির প্রশংসার জন্য মানুষ বলে -"জগত জয় করা হাসি।

" সুতরাং ব্যবহার এবং হাসি মানুষের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুটি অদৃশ্যমান অমূল্য সম্পদ। এই দুটি অদৃশ্যমান সম্পদ যার আছে সে অনায়সে জগতের সব বাধা-বিপত্তি জয় করতে পারেন এবং অতিসহজে মানুষের মনেও স্থান করে নিতে পারেন। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে লক্ষ্য করছি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মাঝে এই শিক্ষার চরম অভাব আছে। ভাষার প্রয়োগ এবং আচরনের বহিঃপ্রকাশ আমাদের কাছে তাই প্রমান করে। বিশেষ করে বৃহৎ দুটি দলের শীর্ষ স্তানীয় নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য-সবাসমাবেশের ভাষন শুনলে মনে হয়না এরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত।

(অনেকে হয়তো আমার এই কথার দ্বিমত পোষন করবেন, আমিও যদি আপনাদের মত দ্বিমত পোষন করতে পারতাম তাহলে দেশের জন্য অনেক উপকার হত, অনেক সমস্যার সমধান কোন প্রকার সহিংসতা ছাড়াই পেয়ে যেতাম। ) দেশের শীর্ষ স্থানীয় নেতা-নেত্রীরা মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আদর্শ। এইসব রাজনৈতিক কর্মী- সমর্থকরা তাদের আদর্শ নেতা-নেত্রীদের কাছ থেকে যে রকম কথা শুনেন বা ব্যবহার দেখেন তারই প্রতিফলন ঘটান স্থানীয় পর্যায়ে। ফলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোন ভাবেই সৌহার্দপূর্ণ হয় না। একটা বিধ্বংসি মনোভাব সব কর্মী-সমর্থকদের মাঝে বিরাজ করে।

ফলে সমঝতা বা মিলেমিশে কাজ করার সংস্কৃতি আজোও গড়ে উঠেনি। এই ভাবে চলতে থাকলে কোনদিনও গড়ে উঠবে না। আমাদের দেশের বৃহৎ দুইটি রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারনী নেতা-নেত্রীরা যদি মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সাথে মতবিনিময় নামে বিরোধীমতের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে কুৎসা বা গিবত বলতেই অর্ধেকটা সময় ব্যয় করেন তাহলে আগত নেতা-নেত্রীরা কি শিক্ষা নিয়ে যাবে ভাবনার বিষয় নয় কি?? সংগঠনের কর্মকান্ড নিয়ে খোলা মেলা আলোচনা করার নাম হচ্ছে মতবিনিময় অথচ সেই মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্যেই যদি বিরোধী মতের মানুষকে কীভাবে শায়েস্তা করা যায়, বা সরকারকে কীভাবে ক্ষমতা থেকে নামানো যায় সেটা আমাদের জানা, বলা হুন্কার দিয়ে শুরু করা হয়, তাহলে কি ফলাফল কাম্য সহজেই বোধগম্য নয় কি?? এই সব শ্রদ্ধেয় নেতা-নেত্রীরা কি একবারও ভাবেন না, তাদের বক্তব্য কর্মীদের মধ্যে একটা যুদ্ধাংশী মনোভাবের জন্ম দেয়, ফলশ্রুতিতে সংঘাত-সংঘর্য-হানাহানি-মারামারি-খুন-গুম-হামলা-মামলা অহরহ ঘটে। গতকালকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চাপাইনবাবগঞ্জের তৃণমূল নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভায় হুন্কার- ধমকি দিয়ে বললেন- "মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া-এইসব বন্ধ করতে হবে। (অনেক যৌক্তিক কথা) আর যদি এই সব বন্ধ না করেন, তবে কীভাবে কঠোরভাবে দমন করা যায়, সেটা আমরা জানি।

" এই আমরাটা কারা?? সরকার না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ? কেন কঠোর ভাবে দমন কথা আসবে?? কেন নিয়ন্ত্রন কথাটি নয়? অন্যদিকে বিরোধী দলের নেত্রী দেশ নেত্রী আপষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৪৮ ঘন্টার হুমকি দিয়ে জনসমাবেশে বক্তব্যদেন তখন নেতা-নেত্রী ও মাঠ পর্যায়ের কর্মী সমর্থকরাদের মনে কোনভাবেই ভাল বার্তা হিসেবে গণ্য হয় না। ফলশ্রতিতে জ্বালাও পোড়াও বাড়ে, সরকারী পর্যায় থেকেও মামলা-ধর পাকড়াও বৃদ্ধি পায়। দেশের নিরীহ মানুষ তখন হয় শংকিত, ভবিষ্যত নিয়ে হয় দ্বিধাগ্রস্ত, গণতন্ত্র হয় বিপদগ্রস্ত। ব্যবসায়িক পরিবেশ হয় ঝুঁকিপূর্ণ, বিনিয়োগ হয় বাধাগ্রস্ত। সাম্প্রতিক এই দুইটি দলের বক্তব্য শুনলে মনে হয় দেশে একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।

যুদ্ধ করেই মসনদ জয় করতে হবে। জনগণ এখানেই নস্যি। দেশের ভালো-মন্দ তুচ্ছ বিষয়। খুন-ধ্বংস- জ্বালাও পোড়াও-গুম- রাতের আধারে গুলি করে হত্যা সব যেন যুদ্ধের কৌশল মাত্র। মানবতা-গণতন্ত্র সব বইয়ের ভাষা।

তাদের কথা বার্তা শুনলে মনে হয়, "ব্যবহারে বংসের পরিচয়" বিষয়টি তাদের শিক্ষা জীবনে কোন পর্যায়ে ছিল না। তাদের বাবা-মা আত্মীয় স্বজন এই বাক্যটির সাথে কোনদিনও পরিচয় করিয়ে দেননি। বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে তো এরা কোনদিন উঠেননি, তাই চোখেও পড়ে না। "জগত জয় করা" হাসি বলে কিছু আছে, ওনারা কোনদিন কোথাও ছাপা অক্ষরে দেখেননি, পড়াতো দূরের বিষয়। ওনাদের শিক্ষা জুড়ে আছে শুধু, "ভিন্ন মতের মানুষের দূর্নাম, বদনাম, কুৎসা, গীবত বলার চর্চা, সম্মান-শ্রদ্ধা- পরমতসহিষ্ণুতা-মূল্যবোধ-বিবেক- মানবতা- সহমত- সততা-নিষ্ঠা- ন্যয়-নীতি-বিচারবুদ্ধি- মার্জিত মনোভাব এই মহৎ জিনিস গুলো অনুপস্থিতি!" ওনারা শিখেছেন ক্ষমতায় থাকলে কীভাবে কঠোর ভাবে দমন করা যায় আর বিরোধী দলে থাকলে কীভাবে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে ভয় ভীতি দেখানো যায়।

কোন ভাল মতাদর্শ বা মনোভাব এদের মাথার হার্ড ডিস্কে কখনোই লোড করা হয়নি। বিধাতা স্বয়ং মনে হয় এই জিনিস গুলো ওনাদের মাথায় স্থাপন করতে ভুলে গিয়েছিলেন। বিধাতা এদের স্মৃতি শক্তি বলে কিছু দেননি, লজ্জা নামক জিনিসটি এদের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। মনুষ্যবোধ দেয়নি বলেই হাসি হাসি মুখে মিথ্যা বলতে পারেন অবলীলায়। বিবেক বুদ্ধি দেয়নি বলে সহজে অন্যায়কে অস্বীকার করতে পারেন।

চোখের পর্দা দেয়নি বলে দেখেও দেখিনি বলে জোড় গলায় বলতে পারেন। সততা নেই বলেই নিজে যে কর্মটি করেন সেই কর্মটি ভিন্ন মতের কেউ করলে হুমকি দিতে পারেন। ন্যয়-নীতি নেই বলেই- "একি দোষের জন্য নিজ দলের নেতা-নেত্রীরা পুরস্কৃত হোন আর বিরোধী মতের মানুষ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হোন। " হাসির মূল্য নেই বলে হাসি দিয়ে ভিন্ন মতের মানুষের মনের অভিমান ভাংগানোর চেয়ে জেলের ভয় দেখিয়ে ভাংগাত চান, ব্যবহারের বংসের পরিচয় বহন করে না বলেই গালাগাল দিতেও কুন্ঠিতবোধ করেন না। বরং ভেংচি কেটে, ব্যঙ্গ করে, চিবিয়ে বদনাম বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

নির্লজ্জ বেহাপনা দেখিয়ে নিজ দলের বা মতের মানুষকে সাধু-মহান বলে গলাবাজি করতে পারেন। ক্ষমতাই মূখ্য বলে জনগণকে পিষিয়ে মারেন। দেশকে সংকটে ফেলতে একটুও ভাবেন না। এদের রাজনীতি দেশের জন্য নয় ক্ষমতার জন্য। একটু মধুর হাসি ও মার্জিত ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই ভিন্নমতের বা আদর্শের মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়, নিজের চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করা যায়।

সমস্যা তুলে ধরা অনেক সহজ হয়। সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়, আলোচনার ক্ষেত্র তৈরিতে সাহায্য করে। অন্য দিকে গোমরা মূখ, মারদাঙ্গা মনোভাব, নেতিবাচক আচরণ, কুটনামি, হয়রানি মনোভাব, কাদা ছুড়াছুড়ি, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের আচরণ, অসম্মান প্রদর্শন, হীনমন্যতা, সর্বোপরী ক্ষমতা চিরস্থায়ী ভাবনা কখনোই শান্তি বা সমঝতা বয়ে আনতে পারে না। শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদদের কাছে বিনীত অনুরোধ "জগত জয় করা হাসি" হৃদয়ে ধারন করুন, কর্মে প্রকাশ করুন, আন্তরিকতায় বিকশিত করুন। ছোটবেলায় পড়া "ব্যবহারে বংসের পরিচয়" কথাটি আজকের শিশুর কাছে, প্রজন্মের কাছে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করুন।

তানাহলে এই শিশু যা শিখবে সেটা আপনাদের জন্যও ভালো হবে না। মনে রাখবেন হিংসা শুধুই হিংসার জন্ম দেয়। আর সহমর্মিতা-সহনশীলতা-সহিষ্ণুতা- শ্রদ্ধা সর্বদাই শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ দেখায়। আর যেহেতু সরকার দেশ চালান এবং সরকারী দল ক্ষমতা ভোগ করেন, সুতরাং তাদের কাছ থেকেই সর্বোচ্চ উত্তম আচরন ও হাসি এবং পজিটিভ জিনিষ গুলো সাধারন মানুষের কাছে বেশী প্রত্যাশিত। আর প্রত্যাশার ব্যত্যয় ঘটলে কি হয় পূর্বেও দেখেছেন ভবিষ্যতে দেখার সম্ভবনাই বেশী।

সময় থাকতে সংশোধিত হওয়া জরুরী, অসময়ে সংশোধিত হয়ে লাভ নেই। মানুষের মনে ভাল ইমেজ তৈরী করা কঠিন কিন্তু খারাপ ইমেজ তৈরী করার মত সহজ কাজ মনে হয় রাজনীতিতে নেই। (১৯-০৫-২০১৩) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।