আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও স্বপ্নের ফসল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ অঞ্চলের সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা বিস্তারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতার পর থেকেই ঐতিহ্যবাহী সরকারি কারমাইকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল রংপুরবাসী। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার সময় রংপুর সফরে এসে কারমাইকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদ এই কলেজের ছাত্রও ছিলেন।

কথা রাখেননি তারা। কথা দিয়ে কথা রাখেননি বেগম খালেদা জিয়াও।

কিন্তু ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রংপুর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতেই প্রতিষ্ঠা করে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। মহাজোট সরকার গঠনের পর রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ সংশোধন করে এর নামকরণ করা হয় নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামানুসারে 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়'।

২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন আহমেদ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

১২ জন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে রংপুর শহরের ধাপ লালকুঠি এলাকায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ভাড়া বাড়িতে চালু করা হয় প্রশাসনিক ভবন। পরবর্তীতে কারমাইকেল কলেজের ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদে ২১টি বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ২০০ জন।

বিভাগগুলো হলো_ বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোকপ্রশাসন, গণিত, পরিসংখ্যান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিঙ্ অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং এবং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ।

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন ৬৭৪ জন। এর মধ্যে ৩৩৬ জনকে অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা, সমতা অর্জন, জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা গবেষণা আধুনিক জ্ঞানচর্চা এবং পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। সেমিস্টার পদ্ধতিতে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এ পর্যন্ত সেশনজট মুক্ত রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ শিক্ষাবান্ধব।

প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণেও সফলতা এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে তিনটি পর্যায় নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট চারটি একাডেমিক ভবন, চারতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, পুলিশ ক্যাম্প, অস্থায়ী শহীদমিনার, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক দুটি ডরমেটরি নির্মিত হয়েছে।

এ ছাড়া একটি মসজিদ ও ক্যাফেটরিয়া ভবনের নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে।

১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল' ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার এলাহী হল' নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট দুটি ছাত্র হল ও ছয় কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে 'শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল' নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। গত ১৪ জুলাই ছাত্রী হলটি চালু করা হয়। এ হলে ৩৪৬ ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। আগামী মাসে চালু হবে ছাত্রদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল।

ক্যাম্পাসের উত্তর দিকে নির্মাণ করা হয়েছে উপাচার্যের একটি আধুনিক বাসভবন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য পাঁচতলা বিশিষ্ট দুটি ডরমেটরি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের প্রস্তুতি চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ছয়টি একাডেমিক ভবন, ছয়টি শিক্ষক কোয়ার্টার, তিনটি স্টাফ কোয়ার্টার, দুটি ডরমেটরি, একটি অডিটরিয়াম, একটি জিমন্যাসিয়াম, ছাত্রীদের একটি ও ছাত্রদের জন্য দুটি আবাসিক হল।

তৃতীয় পর্যায়ে আরও ১৫টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে পাঁচটি একাডেমিক ভবন, ছাত্রদের জন্য একটি ও ছাত্রীদের একটি আবাসিক হল, শিক্ষক কোয়ার্টার ছয়টি ও দুটি স্টাফ কোয়ার্টার।

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই তিনটি পর্যায়ে অবকাঠামোগত পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি মেডিকেল সেন্টার।

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য এখন একটি কোস্টার ও তিনটি মাইক্রোবাস আর ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য তিনটি নিজস্ব বাসসহ মোট পাঁচটি বাস রয়েছে। নিজস্ব বাসগুলোর মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে দুটি বড় বাস। অপর বাসটি দিয়েছে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন। এদিকে আরও দুটি বাস মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে উপহার পাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সও অনুমোদন হয়ে গেছে।

বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট। উচ্চতর গবেষণার জন্য এ ইনস্টিটিউটের অধীনে এমফিল এবং পিএইচডি কোর্সে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে স্থাপন করা হয়েছে সাইবার সেন্টার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ই-লার্নিং সেন্টার।

মাত্র পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ অঞ্চলের শীর্ষ বিদ্যাপীঠের একাডেমিক কার্যক্রম যে স্থানে দাঁড়িয়ে তা ঈর্ষণীয়।

দেশের নবীনতম এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো। কিছু সমস্যা থাকলেও সেগুলো যেমন কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, তেমনি প্রতিষ্ঠানটির কাছে অনেক আশা পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষের। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন ড. অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. অধ্যাপক এ কে এম নূর উন নবী। তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের উৎকৃষ্ট কেন্দ্র।

সে লক্ষ্যেই এটিকে আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ার কাজ শুরু করেছি। এ জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর ১২ অক্টোবর যথাযথভাবে পালন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।

*শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.