যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।
আগের পোস্ট- আজকের সেমিনার এবং ছবি ব্লগ।
গত ২৫ জুন ২০১০ তারিখ শুক্রবার 'শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার' শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভেন্যু ছিল যাত্রাবাড়ি থানাধীন ছনটেক নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ।
উক্ত সভায় শুধু ব্লগার বন্ধুদের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।
নির্ধারিত সময় ৪.০০ টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া বিরূপজনিত কারণে আমরা ৫.০০ টায় অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের সম্মুখে ব্লগার বন্ধুরা তাদের মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
প্রথমেই ব্লগার বন্ধু আসিফ আহমেদ তথ্যপ্রযুক্তির সুফল বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে আজকের এই অনুষ্ঠানটির উদাহরণ টেনে আনেন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই সমমনা মানুষগুলো একত্রিত হয়ে একটি বিশাল শক্তিতে পরিণত হতে পারে।
আর এই বিশাল শক্তি দেশের উন্নয়নে নিবিষ্ট মনে কাজ করে যেতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ব্লগার বাবুল হোসেইন তাঁর বক্তব্যে তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা এবং তা থেকে কিশোর এবং যুব সমাজ কিভাবে উপকৃত হতে পারে তার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘ পেশাগত জীবনের উদাহরণ তুলে ধরে কিশোর যুব সমাজকে তা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। আজকাল আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে উপার্জন করে বেকার শিক্ষিত তরুণরা কর্মসংস্থানের উপায় খুঁজে নিতে পারে। এই প্রযুক্তির ভাল দিকগুলো এবং মন্দ দিকগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দীপ্ত করেন।
তথ্যপ্রযুক্তির মন্দ দিকগুলোকে সহজেই প্রতিরোধ করার মাধ্যমে এর সুফল তুলে আনার প্রচেষ্টায় কথাও তিনি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ব্লগার নুরুন নেসা বেগম সমবেত শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের কাছে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। একমাত্র শিক্ষাই পারে একটি জাতিকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যেতে। বর্তমান যুগে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা দিন দিন সহজলভ্য হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষালাভ করে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি কিশোর-যুব সমাজকে এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এবং ব্লগার আজমান আন্দালিব (আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া) এ এলাকায় একটি মানসম্মত তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একসময় ইংরেজিকে অবহেলা করে পিছিয়ে পড়ার উদাহরণ টেনে তিনি তথ্যপ্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন। আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে কর্মসংস্থানমূলক শিক্ষা আর তথ্যপ্রযুক্তি এরকম শিক্ষার একটি বাহন হতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং অত্র এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী জনাব ইব্রাহীম ভূঁইয়া এরকম একটি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। তথ্যপ্রযুক্তিকে ধারণ করে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে কিশোর তরুণ সমাজ ভবিষ্যত নেতৃত্ব দেবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সভাপতির বক্তব্যের আগে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য একটি পর্ব ছিল প্রশ্নমালা পূরণ করা সংক্রান্ত। সর্বমোট ৩০ জন এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কি এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর এসেছে। বাছাইকৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এরূপ-
সঠিক শিক্ষার অভাব;
পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব;
কারিগরী শিক্ষার অপর্যাপ্ততা;
যুবসমাজকে অবহেলা;
গরীব ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুযোগের অভাব;
জনসংখ্যা সমস্যা;
বাসস্থানের সমস্যা;
দারিদ্র্য;
দেশ পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাব;
তথ্যপ্রযুক্তির অপর্যাপ্ততার সমস্যা;
রাজনৈতিক সমস্যা;
খাদ্য সমস্যা;
বিদ্যুৎ সমস্যা;
মানবাধিকার সমস্যা;
কৃষি সমস্যা;
নদী ভাঙ্গন;
পরিবেশ দূষণ;
দুর্নীতি;
সামাজিক অপরাধ;
আইন-শৃংখলার অবনতি;
মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব;
বিদেশী পণ্যের আগ্রাসন;
পানির সমস্যা;
যানবাহনের সমস্যা;
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততা;
বিজ্ঞান গবেষণায় সহায়তার অভাব;
জনশক্তির সদ্ব্যহারের অভাব;
বিশ্বাস ও ইতিবাচক মানসিকতার অভাব;
প্রণোদনা ও স্বীকৃতির অভাব;
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি;
হস্তশিল্প ও কৃষি শিক্ষার সুযোগের অভাব;
মাদক সমস্যা;
ড্রেনেজ সমস্যা;
উপরোক্ত সমস্যাগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়নি। আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারীবৃন্দ আরও শত সমস্যার ভিড়ে এই সমস্যাগুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
কম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে এখানে তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
প্রশ্নমালায় আরও কয়েকটি প্রশ্ন ছিল, যেমন- শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি কিভাবে করা যায়। এই প্রশ্নটির উত্তরে অনেক ধরনের মতামত এসেছে। কম্পিউটার, হস্তশিল্প, কৃষি শিল্প ইত্যাদি শিখার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। তাছাড়াও বাড়িতে বসে সৃজনশীল কোন কাজ করা যেতে পারে।
পতিত জমির ব্যবহার, ছাদে বাগানকরণ ইত্যাদিও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত এসেছে। সরকারি সহায়তার মাধ্যমেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় আমাদের কিশোর তরুণ সমাজকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে এই প্রশ্নটির উত্তরে অধিকাংশ মতামত এসেছে এ ধরনের সেমিনার সিম্পোজিয়াম এবং ভাল মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তা করা যায়।
উপরোক্ত সেমিনার থেকে আমরা যা ফলাফল পেয়েছি তা খণ্ডিত চিত্র মাত্র। এর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে আমাদের গ্রামীণ জনপদে।
আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সমস্যাগুলোর কিছুটা হলেও যদি সমাধান করতে পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবো।
ধন্যবাদ সবাইকে।
মোঃ আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া
২৭ জুন ২০১০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।