ইসলাম ধর্ম প্রচারের পাঁচশ' বছর আগে মহান আল্লাহ হজরত ঈশা আলাইহিস সাল্লামকে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। খ্রিস্টাব্দ শুরু হয় আল্লাহ'র এই প্রেরিত পুরুষের আবির্ভাবের পর থেকে। মহান আল্লাহ কর্তিক প্রেরিত সকল নবী-রসুল এবং তাঁদের ওপর নাজেল হওয়া আসমানী কিতাবগুলোর ওপর বিশ্বাস স্থাপন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যিক। হজরত মুসা (আঃ), হজরত ঈশা (আঃ) এবং খাতেমুন নাবিয়ীন হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) নিশ্চিতভাবে হজরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (আঃ) এর বংশধর। তাই রাসুল (সাঃ) এবং মূসা (আঃ) ও ঈশা (আঃ) এর অনুসারীরা ইব্রাহিম পরিবারের সদস্য।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের মূল শিক্ষা হচ্ছে-''তোমার জন্য যা অপছন্দ কর, অন্যের জন্য তা পছন্দ করবে না। '' হজরত ঈশা (আঃ) বলেছেন, ''প্রতিশোধ না নিয়ে যে ক্ষমা করে, সেই তার অনুসারী। '' মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ''সেই ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ। '' প্রকৃতপক্ষে সকল ধর্মই শান্তি ও সমপ্রীতির পক্ষে। এমন কোনো ধর্ম নেই যাতে অশান্তি সৃষ্টির প্ররোচনা আছে।
বরং ওরকম তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোথাও কোনো কারণে মানুষে মানুষে কিংবা সমপ্রদায়ে সমপ্রদায়ে সমপ্রীতির ঘাটতি দেখা দিলে, সেজন্য কোনো ধর্ম নয় বরং ধর্মহীনতাই দায়ী। এ ব্যাপারে কারো কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়।
একটি দেশের সমাজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো ধর্মের মানুষ সংখ্যাগুরু আবার কেউ সংখ্যালঘু।
ধর্মের গুরুত্ব ও লঘুত্বের মাপকাঠি নিয়ে কারো নাগরিকত্বের বিচার করা হয় না। দেশের সংবিধান সকল ধর্মের মানুষকে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করার সমান অধিকার দেয়। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে ও নির্বিঘ্নে পালন করার অধিকার শুধু দেশের সংবিধানেই বিধৃত থাকে না, এটা তাদের স্বীকৃত সামাজিক অধিকার। এ অধিকারে অন্য কোনো ধর্মের লোক বাধা দিলে তা হবে বেআইনী এবং নৈতিকতা বিরোধী। কোনো বিবেকসম্পন্ন লোক তা সমর্থন করবে না।
বিশ্ব বহুজাতিক স্বাধীন দেশে বিভক্ত। এ দেশগুলোর সীমানা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত এবং সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত। বর্তমানে এমন কোনো দেশ বা জাতি নেই যা ধর্মের জিগির তুলে সারা বিশ্বকে গ্রাস করতে বা একটা বিশেষ ধর্মের এক নেতার নিয়ন্ত্রণে আনার স্বপ্ন দেখতে পারে। যারা ওরকম স্বপ্ন দেখে এবং সেটার দ্বারা পরিচালিত হয়, তারা বাস্তবকে অস্বীকার করে মূর্খের স্বর্গে বাস করছে বলে মনে হয়।
আজ পর্যন্ত দেশে দেশে যতো সামপ্রদায়িক হানাহানি হয়েছে, তার কোনোটিতেই ধর্মের কোনো ভূমিকা ছিলো না।
বরং ধর্মান্ধতা এবং ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ভুল ধারণাই ওগুলোর পেছনে সক্রিয় ছিলো। হিংসা-প্রতিহিংসা, জিঘাংসা, পারস্পরিক হিংসা আর আগ্রাসী মনোভাব ইত্যাদি কোনো ধর্মীয় বিধানে নেই।
১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালে বলা হয়েছিলো, বিশ্ববাসীকে আরেকটি মহাযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে অবশ্যই রক্ষা করা হবে। গড়ে তোলা হবে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব। কিন্তু সে লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি।
তাই এখনও বিশ্বের ২০টি দেশে জাতিসংঘের লক্ষাধিক শান্তিরক্ষী কাজ করে যাচ্ছে।
মনে রাখা উচিত, কেবল মাত্র পারস্পরিক হিংসা, প্রতিহিংসাসহ আরো অনেক কারণে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিপীড়ন, নির্যাতন, বঞ্চনা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অস্ত্র ব্যবসা, অনাহার, রোগব্যাধি ইত্যাদি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যথাশীঘ্র এসব সমস্যার সমাধান অপরিহার্য।
আমরা বিশ্বের মানুষের সামগ্রিক অবস্থাটা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে তাই-ই দেখতে পাই।
গোটা বিশ্বের ৮০ ভাগ সম্পদের মালিক মাত্র ২০ ভাগ মানুষ। প্রতিদিন এখানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার শিশু পুষ্টিহীনতার কারণে বিভিন্ন রোগে মারা যায়। একজন ছাত্রের জন্য গড়ে বিশ্বে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তার ১০ গুণ বেশি ব্যয় হয় একজন সৈন্যের জন্য। এসব পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক।
সমাজে শান্তি ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব মানুষেরই।
প্রতিটি লোকের পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। এদিকে ৪০ বছর হয়ে গেল আমরা ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হতে পারিনি। তার কারণ হচ্ছে, আমাদের ব্যক্তি সংকীর্ণতা এবং দল ও শ্রেণীগত স্বার্থচিন্তা। দেশ ও জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই।
আমরা এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ আরো অন্যান্য ধর্মের লোক ধর্মীয় উৎসবের পর উৎসব পালন করে যাই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা দেখি মানুষের প্রকৃত উন্নতি ও বিকাশ হচ্ছে না। তার কারণ হচ্ছে, আমরা নিজেদের স্বার্থে ধর্ম-কর্ম ভালোবাসি, অন্যের জন্য বিবেচনাবোধের তাগিদে নয়। অথচ দুস্থ, নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলা, কাজ করা সব ধর্মেরই শিক্ষা। ধর্ম মানুষের মঙ্গলের জন্য।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ধর্মে, বর্ণে, গোত্রে-গোত্রে যে বৈষম্য দেখা দেয় তা আমাদের মনে সামপ্রদায়িকতা সৃষ্টি করে। যা বর্তমানে অত্যন্ত ন্যাক্কার জনক ভাবে ভার্সুয়াল প্লাটফর্ম সামহোয়্যারইন ব্লগেও সংক্রামিত হয়েছে।
ধর্মকে নিয়ে বাড়াবাড়ির প্রয়োজন নেই। ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, রাজনীতি থাকবে রাজনীরির যায়গায়। মহান আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য।
মানুষে-মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে সৃষ্টি ধ্বংসের জন্য মানুষকে তার প্রতিনিধি করে এ পৃথিবীতে পাঠাননি। তিনি বিশ্বে মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন কল্যাণের জন্য, বিভিন্ন মতবাদ সৃষ্টি করে অকল্যাণ বয়ে আনার জন্য মানুষকে নির্দেশ দেননি। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষা করে অসামপ্রদায়িক চেতনার ওপরই গড়ে উঠতে পারে মানবকল্যাণ।
সামহোয়্যারইনব্লগ শিক্ষিত শ্রেনীর একটা ভার্সুয়াল প্লাটফর্ম-এখানেও আমরা সংকীর্ণ স্বার্থে ধর্ম রাজনীতি টেনে এনে শিক্ষিত মানুষগুলোর কি কুতসিত মানষিকতাইনা প্রকাশ করছি! আসুন আমরা পারস্পরিক হিংসা বিভেধ ভূলে, যারযার ধর্মের বিধানকে সম্মান দেখিয়ে স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্বের বিষয় আপোশহীন থেকে সামুকে শিক্ষা সংস্কৃতি জ্ঞান অর্জন, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার বন্ধনের একটি আদর্শ পীঠস্থান হিসেবে গড়েতুলি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।