উৎসর্গ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ছাত্র শ্রদ্ধেয় ব্লগার গৌতম রায় ভাইকে।
১৯৫০ এর দশকে বিশ্ব যখন উপলব্ধি করল যে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে চাইলে বা অর্থনৈতিক উন্নয়নের যাত্রা ধরে রাখতে চাইলে রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির কোন বিকল্প নেই তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্ম। ১৯৫৯ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) এর সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে Institute of Education & Research বা IER প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ পেশাগত দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয়। তখন এখান থেকে এম.এড, এম.ফিল প্রভৃতি উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হত।
বিদালয়ের শিক্ষকগণ এবং শিক্ষা বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করে এখান থেকে শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতেন। পরবর্তীতে শিক্ষাক্ষেত্রের পরিধি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে আইআর এ শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতক(সম্মান) খোলা হয়। ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের সাথে সঙ্গতি রেখে এ ডিগ্রিকে চার বছর মেয়াদি করা হয়। বর্তমানে এখানে বি.এড(সম্মান), এম.এড, সান্ধ্যকালীন এম.এড ( এক ও দুই বছর মেয়াদি), এম.ফিল এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রির ব্যবস্থা রয়েছে।
আমাদের দেশে বিএড কে অধিকাংশ মানুষ শিক্ষকতা পেশার জন্য একটি ডিগ্রি হিসেবে মনে করেন।
আমি যখন আই.আর.এ ভর্তি হলাম তখন সবাইকে বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হত যে আমি কোথায় পড়ছি। অনেকেই আইআরকে নতুন কোন ইনস্টিটিউট বলে মনে করতেন অথচ এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরনো ও ছাত্র-শিক্ষকের সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ইনস্টিটিউট। যাই হোক, বিএড এবং বিএড(সম্মান) ডিগ্রির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিএড মূলত শিক্ষকগণের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পদোন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে বিএড(সম্মান) এর আওতায় শিক্ষাক্ষেত্রের সমগ্র কার্যাবলী পড়ে।
শিক্ষকতা বা শিক্ষণবিজ্ঞান শিক্ষাক্ষেত্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলেও তা শিক্ষাব্যবস্থার সবকিছু নয়। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নীতি নির্ধারনী থেকে শুরু করে শিক্ষাক্রম তৈরি, শিক্ষা ব্যস্থাপনা ও প্রশাসন, শিক্ষণ প্রযুক্তি, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা, শ্রেণীকক্ষের পরিবেশ, শিক্ষা মূল্যায়ন, শিক্ষা গবেষণা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক ও অব্যাহত শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, বিশেষ শিক্ষা, ভাষা শিক্ষা এ ধরণের বহু ক্ষেত্র রয়েছে। শিক্ষা বিষয়ের সকল কার্যক্রম বিষয় শিক্ষকের পক্ষে কোনভাবেই পালন করা সম্ভব নয় এবং তা তার দায়িত্বও নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য শিক্ষাবিদ বা শিক্ষাবিজ্ঞানীরা থাকবেন। শিক্ষকগণ তার বিষয়ে লেখাপড়া করবেন, কার্যকর উপায়ে শিক্ষাগ্রহণে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করবেন সর্বোপরী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়নে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবেন।
শিক্ষাবিদগণ শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক দায়ভার নিজ নিজ বিশেষায়িত ক্ষেত্র অনুযায়ী পালন করবেন।
একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষা একটি অনেক বড় চ্যালেণ্জ্ঞ। এর ক্ষেত্রও অনেক বিস্তৃত। দেশে একটি যুগোপযোগী, কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের অধিকাংশ সমস্যা দূরীভুত হবে। শিক্ষাব্যবস্থা হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক কোনক্রমেই শিক্ষককেন্দ্রিক নয়।
শিক্ষার্থীর জন্যেই শিক্ষা। দেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদদের আন্তঃসংযোগ ও মতামতের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে শিক্ষাব্যবস্থা। সেখানে কোন ধরণের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পশ্চাদপদ অবস্থার জন্য আমলাতন্ত্র সবচেয়ে বেশি দায়ী। শিক্ষাবিজ্ঞান সম্বন্ধে লেখাপড়া না করে এবং শিক্ষাব্যবস্থার সাথে সাময়িক সম্পর্কধারী আমলাতন্ত্রই শিক্ষাক্ষেত্রের নীতি-নির্ধারণী গোষ্ঠী।
শিক্ষার যাবতীয় উন্নয়ন প্রকল্প ও মূলধারার কার্যক্রম শিক্ষা বিষয়ে ধারণাবিহীন আমলাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন অবিলম্বে দেশের যে কোন ধরণের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। চিকিৎসার কাজ চিকিৎসক করবেন, রাস্তাঘাট, সেতু প্রকৌশলী নির্মাণ করবেন, বৈমানিক বিমান চালাবেন কিন্তু সব ধরণের মন্ত্রনালয় চালাবেন সব ধরণের আমলারা- এ তত্ত্ব পরিবর্তনের এখনই সময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।