নাজমুল ইসলাম মকবুল মাদরাসা শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষা : বৈষম্য কি চলতেই থাকবে!
নাজমুল ইসলাম মকবুল
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুটি ধারায় চলছে। একটি হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা আর অপরটি হচ্ছে চলমান আধুনিক শিক্ষা বা গতানুগতিক শিক্ষা। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আবার সমান্তরালভাবে চলছে দুটি ধারায়। যার একটি হচ্ছে সরকারী মাদরাসা এবং অপরটি হচ্ছে বেসরকারী মাদরাসা বা কওমী মাদরাসা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিা প্রদান করা হচ্ছে সে শিা ব্যবস্থাকেই আধুনিক শিা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
অপরদিকে আধুনিক ও ইসলামী শিার সমন্বয়ে যে শিা প্রদান করা হয় সেই মাদরাসা শিাকে সরকারীভাবে অবহেলা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার প্রচলন বৃটিশ আমল থেকেই চলে আসছে। মানবতার মহান শিক মহানবী (সা.) মসজিদ ভিত্তিক শিাব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন এবং তা খোলাফায়ে রাশেদীন তথা সাহাবায়ে কেরাম এবং তৎপরবর্তী উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমল থেকে নিয়ে তুর্কী সালতানাতের পতন হওয়া পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে সরকারীভাবে একমাত্র যুগোপযোগী ইসলামী শিা ব্যবস্থাই বহাল ছিল। তবে সময়ের প্রয়োজনে মৌলিক বিষয়কে অুন্ন রেখে সংযোজন বিয়োজন পরিবর্তন পরিবর্ধন সিলেবাসের আধুনিকায়ন ও পাঠদানের কৌশলে পরিবর্তন আনয়ন করা হলেও ইসলামী শিা ও আধুনিক শিা বলে কোন বিভাজনের প্রয়োজন হয়নি। ঔপনিবেশিক আমলে মুসলমানদের শাষন মতা বিলুপ্ত হওয়ার ফলে কিংবা কোথাও কোথাও বিভিন্ন সময়ে মুসলমান নামধারী কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষী শাষক মতায় আরোহনের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের কর্তৃত্ব বিলুপ্ত হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ইসলামী শিাব্যবস্থা।
শুরু হয় সেকুলার বা ধর্মহীন শিা। ফলে যে সব অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ট ছিলেন সেসব স্থানে নিজ নিজ উদ্যোগে সরকারী পৃষ্টপোষকতা ছাড়াই শুরু করেন ইসলামী শিা বা মাদরাসা শিা ব্যবস্থা। তখন থেকেই আমাদের সামনে আসে মাদরাসা শিা এবং সেকুলার বা আধুনিক শিা ব্যবস্থা নামক দুটি ধারা। কিন্তু বৃটিশ আমল থেকেই বৃটিশদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র শোষন নীপিড়ন ও কুট কৌশলের মারপ্যাচে পড়ে মাদরাসা শিা তথা ইসলামী শিা চরম বৈষম্যের শিকার হয় এবং মাদরাসা শিা আবারও দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি হচ্ছে সরকারী মাদরাসা আর অপরটি কওমী বা বেসরকারী মাদরাসা।
অপর ধারা সেকুলার বা আধুনিক শিাব্যবস্থাকে বৃটিশ সরকার ব্যাপকভাবে পৃষ্টপোষকতা করার ফলে এবং চাকুরী েেত্র ইংরেজী শিতিদের বিশেষ করে অমুসলিমদের প্রাধান্য দিলে মুসলমানরা শিাসহ সর্বেেত্র পিছিয়ে পড়েন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত মাদরাসা শিার বিভক্তি, সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাব ও ব্যাপক অবহেলার জন্য এ শিা যেন পঙ্গু ও দীন দরিদ্রদের শিায় পরিণত হয়। পান্তরে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা সংখ্যাধিক্যের ও ব্যাপক সরকারী পৃষ্টপোষকতার জোরে সেকুলার বা আধুনিক শিাকেই মুল ধারার শিা হিসেবে চালিয়ে নেয়।
লনীয় ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেশের শিা ব্যবস্থাকে আধুনিকিকরণের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কমিটি বা শিা কমিশন গঠন করা হয় এবং এগুলো ব্যাপক আলোচিত সমালোচিতও হয়। তবে শিােেত্র বৈষম্য এখন পর্যন্ত দূর হয়নি বরং এর ডালপালা গজাচ্ছে সমান্তরালভাবে।
নারী শিার জন্য গলাফাটানো শ্লোগান দেয়া হলেও নারীদের জন্য এখনও সম্পূর্ণভাবে আলাদা শিায়তনের ব্যবস্থা করা হয়নি। সহ শিার মাধ্যমে চরম অশ্লিলতা ও বেহায়াপনা লাগামহীনভাবে চললেও তা নিয়ন্ত্রনের কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়ার কোন লন দেখা যায়নি আজ পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে গেলে থরে থরে সাজানো নাটক বা সিনেমার সুটিংয়ের মতো বাহারি ডিজাইনের যুগল প্রতিচ্ছবি ও তাদের ফ্রি ষ্টাইলে মাখামাখি দেখে ভিমরি খেতে হয়। তবে মহিলাদের জন্য আলাদা শিা প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রয়োজনীয়তা ও সুফল অনুভব করে বর্তমানে যথেষ্ট পরিমানে মহিলা স্কুল কলেজ মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় সরকার ও সচেতন জনসাধারন এগিয়ে আসলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল।
আমাদের দেশের অফিস আদালতে চাকরি বাকরি দেয়ার েেত্র সাধারনত অগ্রাধিকার দেয়া হয় তথাকথিত আধুনিক শিতিদের।
কিন্তু মাদরাসায় একই মানের সিলেবাস অনুসরন করেও আবার কোন কোন েেত্র কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অধিক বিষয় নিয়ে পরীা দিয়ে যোগ্যতার সাথে পাশ করেও কেবলমাত্র বৈষম্যের কারনে সনপত্রের যথাযথ মান না পাওয়ায় ভাল ভাল চাকুরী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বা হতে হচ্ছে মাদরাসা শিতিদেরকে। তাই অধিকাংশ মাদরাসা পড়–য়া মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা ক্যারিয়ার গড়তে বাধ্য হয়েই প্রাথমিক কয়েকটি কাসে মাদরাসায় অধ্যয়নের পর স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে চলে যেতে হচ্ছে। ফলে তারা শিা গ্রহণ করছে ঠিকই কিন্তু আলেম হতে পারছেনা। আবার যারা শুধুমাত্র মাদরাসা থেকে কামিল বা টাইটেল পাশ করছেন তারা মাদরাসা শিক, হাই স্কুলের ধর্মীয় শিক, প্রাইমারী শিক, মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন, অফিসের কেরানী ছাড়া বড় ধরনের কোন চাকুরী পাওয়া থেকে অনাকাঙ্খিতভাবে হচ্ছেন বঞ্চিত ও চরম বৈষম্যের শিকার। এ ন্যায্য দাবীটুকু আদায়ের জন্য অতীতে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে এবং হচ্ছে।
বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্র“তি দিলেও এখনও পুরোপুরি তা বাস্তবায়ন হয়নি। জানিনা কেয়ামত পর্যন্ত এভাবে আশ্বাষের মুলা ঝুলিয়ে সময়পেন করা হবে নাকি ল ল মাদরাসা শিতিদের ন্যায্য অধিকারটুকু বাস্তবায়ন করা হবে। আর বাস্তবায়ন করলেও অতীতে যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তাদেরকে সেই স্বীকৃতির অন্তর্ভূক্ত করার কোন লন দেখা যাচ্ছেনা। হয়তো তা আকাশ কুসুম থেকেই যাবে।
আগেকার যুগে মা বাবা সবচেয়ে রোগাক্রান্ত, খোড়া, বধির, বোবা, পাগল বা মানষিক রোগী হলে এসব সন্তানদেরকেই মাদরাসায় পড়ানোর মান্নত করতেন যাতে এর উসিলায় আল্লাহপাক তার সন্তানটিকে রোগমুক্ত করেন।
কারও মনে এ ভাবনাও আসত যে স্কুল কলেজে পড়ানো ব্যয়বহুল তাই এই রুগ্ন সন্তানের পিছনে অর্থ ব্যয় না করে আল্লাহর নামে মাদরাসায় দেওয়াটাই বেহতর। রোগ ভাল হলেতো হলো নতুবা মাদরাসায় পড়ে লিল্লা ফিল্লা খেয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেয়া ছাড়া উপায়ইবা কি। কিছুদিন পূর্বেও মানুষের মনে একটি ধারনা ছিল যে, মাদরাসায় যারা পড়ে তাদের অন্যের করুনা ভিা বা লিল্লা ফিল্লা খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে এবং ভাল চ্যানেল থাকলে বড়জোর মাদরাসার শিক বা মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের চাকুরী নিয়ে স্বল্প বেতনের সাথে ওভারটাইম খতম টতম লিল্লা ফিল্লা জাকাত ফিতরা কুরবানীর চামড়া ঝাড় ফুক নজর নিয়াজ তাবিজ কবজ জিন ভুতের তদবীর করে হয়তো আরও কিছুটা অর্থ উপার্জন সম্ভব হবে। মানুষের অর্থানুকুল্য তথা দান দনিা ব্যতিত এদের দিন গুজরান হবেনা।
হয়ত সরকারের মধ্যে সে ধারনাটাই এখনও রয়ে গেছে নতুবা মাদরাসা শিতিদেরকে যথাযথ মুল্যায়ন ও মান না দিয়ে কেন আজও অধিকার বঞ্চিত রাখা হচ্ছে? কেনইবা হচ্ছেন মাদরাসা শিতিরা বৈষম্যের শিকার? কেন এরা প্রশাষনের বিভিন্ন সেক্টরে চাকুরীর জন্য করতে পারছেননা আবেদন। তবে এর পেছনে শুধুমাত্র সরকারকে এককভাবে দায়ী করাটাও ঠিক হবেনা। আমাদের অধিকার কেহ মুখে তুলে এনে দেবেনা বরং আমাদেরকেই নিতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর পদপে। কিন্তু পরিতাপের
বিষয় হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে হোক আর ব্যক্তিগত স্বার্থেই হোক আমাদের মাদরাসা শিতিরা বহু গোত্র উপগোত্রে বিভক্ত হয়ে চরম মতানৈক্যে হাবুডুবু খাওয়াটাই এর পেছনে দায়ী। শুধু তাই নয় দিন দিন গোত্র উপগোত্র বাড়ার যে সয়লাব দৃশ্যমান হচ্ছে তাতে আরও কয়েকশ বৎসর বঞ্চিত থাকাটা আমাদের জন্য অস্বাভাবিক নয়।
কেহ বলবেন মান দেয়া হোক এভাবে আবার কেহ বলবেন অন্যভাবে। এ ধরনের মতিবিরোধ জিইয়ে রেখে সময়পেন করে কারা আজ ফায়দা হাসিল করতে চায় এবং আলেম স¤প্রদায়কে পঙ্গু রাখতে চায় তা চিহ্নিত করার সময় কি এখনও হয়নি? এর পেছনে আসল মতলব কি তা সচেতন আলেম সমাজ অনুধাবন না করা পর্যন্ত তাদের দাবী দাওয়া এভাবে ঝুলে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সম্মানিত আলেমগণ একজন দরদী আলেমের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেননা কেন তা ভাবার সময় কি এখনও হয়নি? দেশের মাদরাসা শিতি বিশাল এক জনগোষ্ঠি আজ চরম হতাশায় নিমজ্জিত। এ বৈষম্য দূর করতে যত শিগগিরই সম্ভব কার্যকর পদপে নেয়া প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। দেশের হাজার হাজার কওমী মাদরাসায়ও ল ল ছাত্র ছাত্রী লেখাপড়া করছে।
তাদেরও সরকারী স্বীকৃতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তাদেরকেও একটি কাঠামোর আওতায় এনে এবং তাদের শিাব্যবস্থাকে ইসলামী তাহজিব তমদ্দুন অুন্ন রেখে আরও আধুনিকায়ন করে যথাযথ মান প্রদান করাটাও সময়ের দাবী। যাতে কওমী মাদরাসায় শিা লাভ করেও সরকারী বেসরকারী উচ্চ পদে ও বিভিন্ন সেক্টরে চাকুরী পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়। মাদরাসায় পড়ে যদি জাতীয় সংসদে যেতে, নির্বাচন করতে ও সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে আপত্তি না থাকে তাহলে সরকারী চাকুরী করতে দোষ কোথায়। এজন্য মাদরাসা শিতিদেরকে ব্যক্তিগত ুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে সম্মিলিতভাবে ন্যায্য অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে একই প্ল্যাটফরমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজন।
নতুবা ভিনদেশিদের তাবেদার হয়েই মেরুদন্ড বাকা করে চলতে হবে। মাথা উচু করে দাড়ানো সম্ভব হবেনা কোনদিনই। দীর্ঘ্য আন্দোলন সংগ্রাম পরে কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির কথা শুনা যাচ্ছে। তবে তা কবে যে কার্যকর হবে এবং কার্যকর করা আদৌ হবে কি না তা একমাত্র আল্লাহ পাকই ভাল জানেন।
আমাদের দেশে কওমী মাদরাসাসমূহের অনেকগুলি বোর্ড আছে এবং দিন দিন বোর্ডের সংখ্যাও বাড়ছে।
দেশের অধিকাংশ কওমী মাদরাসা সমূহের মধ্যেও সমন্বয় নেই। কেহ দাবী করছেন শুধু সনদের স্বীকৃতির। কেহ দাবী করছেন অনুদানের আবার কেহবা দাবী করছেন সনদ অনুদান চাকুরী সব কিছুর। যারা শুধু সনদের দাবী করছেন তারা বলছেন তারা সরকারী কোন চাকুরী চান না শুধুমাত্র সরকার সনদের স্বীকৃতি দিক। অন্যরা বলছেন শুধু সনদের স্বীকৃতি নয় অনুদানও দরকার।
আবার কারও মতে সনদ অনুদান চাকুরী সবকিছুই প্রয়োজন। এখন শুধু সনদের স্বীকৃতি আদায় করলে পরে আবার অনুদান ও চাকুরীর স্বীকৃতি আদায়ের জন্যও আন্দোলনে নামতে হবে। তাহলে একসাথে সকল দাবী আদায় করিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এজন্য রাজপথে আন্দোলন মিছিল মিটিং বক্তব্য বিবৃতি সেমিনার সিম্পোজিয়াম বিপ্তিভাবে অনেক হয়েছে। কিন্তু সকল কওমী বোর্ডকে একীভূত করে ইসলামী ও আধুনিক যুগোপযোগি বিষয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে সিলেবাসকে আধুনিকায়ন করলে স্বীকৃতি বাস্তবায়নের পথে হয়তো অনেকদুর আগানো যেত।
কওমী মাদরাসার সার্টিফিকেটের সরকারী স্বীকৃতি ও যথাযথ মান না থাকায় দেশের ল ল হতাশাগ্রস্থ কওমী মাদরাসার ছাত্র একাধারে কওমী মাদরাসায় লেখাপড়া করার পাশাপাশি আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে দাখিল পরীা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পরীায় অংশ নেন বিগত বছরগুলোতে। কিন্তু দুই নৌকা চড়ার কারণে মেধা য় আর্থিক ও মুল্যবান সময়ের অপচয় যে হচ্ছে তা পুরন করবে কে? বর্তমান সরকারের আমলে সে পথ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলা যায়। আবার আলিয়া মাদরাসায় পড়ে আলিম পরীা দেয়ার পর অনেকেই কলেজে ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন আবার মাদরাসায় কাসও করছেন এতেও সময় অর্থ ও মেধার তি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকদের।
দেশের আলেম স¤প্রদায় বৈধ পন্থায় ও নির্বাচনের মাধ্যমে মতায় যেতে চান। আমরাও চাই ঘুষ দুর্নীতি লুটপাট দূর করতে হলে সর্বোপরী একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করতে হলে আলেম স¤প্রদায়কে মতায় পাঠানোর বিকল্প নেই।
দেখা যাচ্ছে মতায় যাবার কুশিশ করতে করতে অনেক অনেক ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। একেকটিকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করতেও কসুর করা হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে সকল সম্মানিত আলেমই একমত। কিন্তু আজ যদি এদেশের জনগন আলেম উলামাগণের হাতে মতা প্রদান করেন তাহলে তারা দেশ সুষ্টুভাবে পরিচালনা করতে পারবেন কি? সরকারী অফিস আদালত সহ উচ্চ থেকে নিম্ন পদে কয়জন খোদাভীরু ইসলামপন্থী বা আলেম আছেন যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা চান অথবা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হলে ইসলামী বিধি বিধান সর্বস্থরে প্রয়োগ করতে কয়জনের আছে সে প্রস্তুতি? আজ অফিস আদালতে ঘুষ দুর্নীতির রমরমা বাণিজ্যের হাতে সাধারন জনগন কেন জিম্মি? শুধু তাই নয়। ১৯৯৭ সালে একবার ঢাকাস্থ বাংলাদেশ মাদরাসা শিা বোর্ডে সাময়িক সনদ সংগ্রহের জন্য গিয়ে দেখি সেখানে কর্মরত প্রায় সকলেই আধুনিক শিতি এবং ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হচ্ছেনা।
চোখের সামনে দেখলাম বিভিন্ন মাদরাসার প্রিন্সিপাল বা তত্ত্বাবধায়করা খামে ভরে কেহবা সরাসরি টেবিলের উপর দিয়ে ঘুষের টাকা দিচ্ছেন আর বিরক্তি প্রকাশ করছেন। একটি কাউন্টারে একজন মাদরাসার প্রিন্সিপাল ঘুষের টাকা কিছুটা কম দেয়ায় বোর্ডের কেরানী টাকা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ধমক দিয়ে বললো জানেননা এটা মাদরাসা বোর্ড এ কাজে কতটাকা দিতে হয়? তবে মাদরাসা বোর্ডে এ ধরনের ঘুষের প্রচলন বর্তমানে কোন হালে আছে তা কেবল যারা ঘন ঘন বোর্ডে যাতায়াত করেন তারাই বলতে পারবেন । শুনা যায় স্কুল বা মাদরাসায় চাকুরী নিলে বেতন ছাড়াতে তথা এমপিওভুক্ত হতে হলে টপ টু বটম পর্যন্ত থরে থরে ঘুষ দিতে হয়। মা বাপের অনেক টাকা খরচ করে লেখাপড়া শেষে কয়েক বৎসর বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়ে জুতোর তলা য় করে মামা অথবা দুলাভাই ধরে স্বল্প বেতনের চাকুরী নামের সোনা বা রোপার হরিন জোগাড় করার মূহুর্তেই আবার বাবার কাছ থেকে ঘুষের টাকাটাও এনে দিতে হয়! আমাদের মতো হতভাগা জাতি বিশ্বের আর কোথাও আছে বলে মনে হয়না। বর্তমানে নিবন্ধন প্রথা প্রবর্তন করায় ঘুষের ধরন বা সিস্টেমে হয়তো পরিবর্তন বা আধুনিকায়ন হতেও পারে।
তবে কোন ধরনের আধুনিকায়ন হয়েছে তা হয়তো কেবলমাত্র ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবেন।
হিসেব করলে দেখা যায় এদেশ ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনের এক মহা উর্বর কেন্দ্রস্থল। ইসলামী দলের অভাবতো নেইই বরং অন্যান্য সংগঠনের চেয়ে মাশাআল্লাহ অনেক অনেক বেশি। খুটিনাটি বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে চরম আত্মঘাতি মতভেদ মতানৈক্য বিষোদগার বা অনৈক্যেরও যেন অভাব নেই। ধর্মপরায়ন এবং সম্মানিত আলেম উলামারও অভাব নেই।
কাদের আত্মঘাতি কর্মকান্ডের দরুন ইসলামপন্থী মাদরাসা পড়–য়া ল ল ছাত্র শিক এবং তাদের পরিবারবর্গ আজও চরম বৈষম্য হতাশা ও যাতনার শিকার? কেনইবা এরা পদে পদে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত অপদস্থ? এথেকে কারা হাসিল করছে ব্যক্তিগত স্বার্থ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এসব বঞ্চনা কি চলতেই থাকবে ? সচেতন ও নেতৃস্থানীয় সম্মানিত আলেম উলামাগণ এবং সংশ্লিষ্ট মহল জবাব দেবেন কি ?
লেখক: সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম।
মোবা: ০১৭১৮৫০৮১২২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।